মার্কিন চার সিনেটরের বিবৃতি : সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান

আগের সংবাদ

প্রাধান্য পাবে আর্থ-কূটনীতি

পরের সংবাদ

আইয়ুব শাসনে স্টেপ-ইন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আইয়ুব খানের সামরিক আইন জারির পর গ্রেপ্তার হলেন তখনকার একজন সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এম এ জলিল। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ দুভাগ হয়ে গেলে সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন অংশ পূর্ব নামেই রয়ে গেল। অনুসারীদের নিয়ে মওলানা ভাসানী তার অংশের নামকরণ করলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ। সোহরাওয়ার্দীর অতি ঘনিষ্ঠ জলিল ভাগাভাগির রাজনীতিতে যে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্ব বেছে নেবেন এটা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
জলিলপতœী জায়নাব আখতার লিখলেন, ‘নুরুদ্দীন, তাজউদ্দীন, জমিরউদ্দিন এরা খুবই ঘনিষ্ঠজন। নুরুদ্দীন সোজা গালাগালি করলেন, তাজউদ্দীন শান্ত প্রকৃতির, বাসায় এসে হতভম্ভের মতো আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর জমির সাহেব আবেগপ্রবণ, তিনি একেবারে কেঁদেই ফেললেন।’
গাড়ি চালাচ্ছিলেন জমিরউদ্দিন, সঙ্গী এম এ জলিল। কাগমারী সম্মেলনে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটল। জখম থেকে জলিল তখনো সেরে উঠেননি। এর মধ্যে তিনি এ কী কাণ্ড ঘটালেন! এতদিনের বন্ধুদের ছেড়ে দিলেন! তার স্ত্রী লিখেছেন, মানুষটি চিরকাল মানসিকভাবে বিপ্লবী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও চে গুয়েভারার নেতৃত্বে কিউবায় সফল বিপ্লব এ দেশেও নবীন-প্রবীণ অনেকের মনে বিশ্বাস জন্মিয়েছে যে বিপ্লব এখানেও সম্ভব- বিপ্লবই উত্তরণের একমাত্র উপায়।
জায়নাব লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মোটেই পছন্দ করত না সমাজের চিন্তাশীল অংশ। সব দেশেই মার্কিনিরা নাক গলাত আর প্রতিক্রিয়াশীলদের সিংহাসনে বসাত সুযোগ পেলেই। বিশেষ করে মিলিটারি শাসকদের। তাই মার্কিন সামরিক জোটে শরিক হওয়া এবং যেখানে সেখানে ওদের হুকুম মতো যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়া মোটেও পছন্দ হয়নি অনেকের।
স্টেপ-ইন নামের বাড়িটি তখন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের একটি ঘাঁটি। সামরিক আইন জারির পর গ্রেপ্তারকৃত অনেকের একজন জলিল। ১৯৫৯’র ১৯ মার্চ রাজারবাগে এক অবাঙালি পুলিশ অফিসার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একটি ইংরেজি বিবরণী স্টেপ-ইন-এ রয়েছে। ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে এই অংশটি ইংরেজি থেকে অনূদিত হলো।
অফিসার : জলিল সাহেব, আপনি কমিউনিস্ট পার্টিকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন, এটা কি সম্ভব?
জলিল : এটা অসম্ভব। যার অস্তিত্ব নেই তাকে কেমন করে টাকা দেব?
অফিসার : অস্তিত্ব নেই মানে কী?
জলিল : সম্ভবত আপনাকে জানানো হয়নি যে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আর পাকিস্তান সরকার সে আদেশ বহাল রাখে। কাজেই পাকিস্তানে এ ধরনের কোনো পার্টি থাকতে পারে না।
অফিসার : কিন্তু আপনার নিজের দলের প্রেসিডেন্টই একজন কমিউনিস্ট।
জলিল : (পাঞ্জাবির ভেতর থেকে একটি কাটা কাগজ বের করে) দেখুন তিনি আমার নেতা- এই জানাজায় যিনি ইমাম। তিনি তার গ্রামে সব প্রার্থনা পরিচালনা করেন। ৪০ বছর আগে হিন্দুস্তান, ইরান ও বাগদাদ হয়ে তিনি হেঁটে হজব্রত পালন করে এসেছেন। তিনি এক বছর রাসুলুল্লাহ (দ.)-এর মাজারে প্রার্থনা করেছেন আর যখন ফিরে এলেন তিনি দুর্লভ অসুখ-বিসুখও সারিয়ে তুলতে পারেন।
অফিসার : তাই নাকি? আমি একদিন তার সঙ্গে দেখা করব। (প্রসঙ্গ বদলে) জলিল সাহেব, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে আপনি হিন্দু সংগীতের প্রতি উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন।
জলিল : হিন্দু সংগীত? তার মানে আপনি সেই গানটার কথা বলেছেন গান্ধী যা সবাইকে দিয়ে গাইয়েছেন : রঘুপতি রাঘব রাজা রাম/পতিত পাবন সিতারাম। এই গানটা আমি এখানে (প্রদেশে) কিংবা অন্য কোনোখানে শুনিনি। মওলানা আবুল কালাম আজাদই গান্ধীর ফোরামে যোগদান করা একমাত্র মুসলমান; কিন্তু তিনি এখন আর বেঁচে নেই।
অফিসার : না মোটেও গান্ধী নন। এই লোকটাকে ট্যাগোর ডাকা হয়। তুমি বিভিন্ন মানুষকে তার গান গাইতে বলে থাক।
জলিল : ওহ ঠাকুর! কিন্তু কোন ঠাকুর? অনেক ঠাকুরই তো আছেন। (অবাঙালি পুলিশ কর্মকর্তাকে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়াতে তিনি গড়গড় করে ঠাকুরবাড়ির আরো অনেক ঠাকুরের নাম শোনাতে শুরু করলেন)
অফিসার : ঠিক আছে, ঠিক আছে, তারা সবাই হিন্দু, সে কথাই আমার বিষয়।
জলিল : বিষয়টি কী বললেন?
অফিসার : আপনি কিছু লোককে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছেন যেন তারা (পাশে থাকা একজন বাঙালি গোয়েন্দার কাছ থেকে শুনে) ‘রবিনাথ’-এর গান গায়।
জলিল : হ্যাঁ, আমি করেছি।
অফিসার : আপনি তাই করেছেন? আপনি চান পাকিস্তানিরা ‘হিন্দু গান’ চর্চা করুক?
জলিল : আমি চাই না আমার মানুষেরা রামনাম করুক।
অফিসার : আসুন, এবার দোষ স্বীকার করুন। আপনি জনগণকে ‘রবিনাথের’ গান গাইতে প্ররোচিত করেছেন, তিনি একজন হিন্দু।
জলিল : রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না। তিনি এক নিরাকার ব্রহ্মতে বিশ্বাস করতেন।
অফিসার : কী বললেন? কথাটা কী? হিন্দু নন?
জলিল : না, তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী। হিন্দুদের মন্দিরে তার প্রবেশ করা নিষেধ ছিল, যেমন ওড়িশার জগন্নাথ মন্দির।
অফিসার : তাই নাকি? তাহলে গানগুলো?
জলিল : ওগুলো গান নয়। এগুলো হামদ ও নাতের মতো, একজন দয়ালু গডের কাছে প্রার্থনা।
অফিসার : জলিল সাহেব, এটা সম্ভব নয়, আমাকে বোকা বানাতে চেষ্টা করে লাভ নেই।
জলিল : না না তার প্রয়োজন হবে না (প্রকারান্তরে বললেন, তুমি তো বোকাই, বানানোর প্রয়োজন নেই)। আপনার ভারতীয় গুপ্তচরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিন আমি ভুল বলেছি কিনা। রবীন্দ্রনাথ কোনো মূর্তি, আগুন বা পানির পূজা করতেন না, এমনকি কোনো আচারও পালন করতেন না। তিনি হাফিজ, রুমী ও শেখ সাদীর মতো লম্বা কুর্তা পরতেন।
অফিসার : কিন্তু তিনি ‘হিন্দু ভাষায়’ কেন লিখতেন?
জলিল : দেখুন ইকবাল তো ভালো মুসলমান ছিলেন, কিন্তু তিনি কেন আরবির বদলে হিন্দুস্তানি ভাষায় লিখতেন?
অফিসার : (উত্ত্যক্ত হয়ে) সে কথা অপ্রাসঙ্গিক, তিনি মহান কিছু লিখতেন।
জলিল : ইকবাল সেই ভাষায় লিখতেন যা তার মানুষ বুঝতে পারে, একইভাবে ঠাকুর এমন ভাষায় লিখেন যা আমরা সবাই বুঝতে পারি। অতঃপর অফিসার আর সওয়াল-জবাব অব্যাহত রাখার ঝুঁকি না নিয়ে জলিলকে তাড়াতাড়ি কারাগারে ফেরত পাঠানোই জরুরি মনে করলেন। এই স্কুলটিই পরবর্তীকালের ছায়ানট।
জায়নাব আখতার লিখছেন : ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমি বা বাফা আগেই ছিল। এখানে রবীন্দ্রসংগীত শেখানোও হতো। কিন্তু এর দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা ভদ্রলোক, রাস্তায় নামতে পারঙ্গম ছিলেন না। জলিল সাহেব বললেন, দেখো ঘরে বসে রবীন্দ্রসংগীত গাইলে আর হবে না। রাস্তায় নামতে হবে, জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে রবীন্দ্রসংগীতকে।
‘সাহস নিয়ে এগিয়ে এলেন জাহেদুর রহিম, আতিকুল ইসলাম, আলতাফ মাহমুদ, কামাল লোহানীরা। ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গানের নাচের নাটকেরও রিহার্সেল হতে লাগল নিঝুম দুপুরে বা রাতে স্টেপ-ইন-এর নিচতলায়। মাঝে মাঝে সিধু ভাই (বিবি রাসেলের বাবা)-র বাসায়ও বসত এরা। এভাবেই অঙ্কুরিত হয় ‘ছায়ানট’।
দাঙ্গা ও দেশান্তর
১৯৬৪’র জানুয়ারির শুরুতে কাশ্মিরের শ্রীনগরে হজরতবাল মসজিদের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা বেঁধে গেল ভারত ও পাকিস্তানে। ঢাকায় তখনো তেমন আলামত টের পাওয়া যায়নি। স্টেপ-ইন-এর দক্ষিণ-পশ্চিমের দোতলা বাড়ির পালবাবু কিছু মালামাল নিয়ে সস্ত্রীক জলিল-জায়নাবের বাড়িতে উঠলেন। হাতের ব্রিফকেসটি জায়নাবকে নিরাপদে রাখতে দিলেন। তারা আর নিরাপদ বোধ করছেন না। ছেলেমেয়েদের পঞ্চাশ সালের আগেই কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেও তারা নিজ ভিটেতেই রয়ে গেলেন। তাদের যতদিন ইচ্ছে এ বাড়িতে থাকতে বলা হলো। দোতলার একটি ভালো ঘরও দেয়া হলো। কিন্তু পালবাবু একতলায়ই থাকতে চাইলেন। পালবাবুই বললেন, রায়ট শুরু হয়ে গেছে, বাড়িতে থাকা আর নিরাপদ মনে করছেন না। ‘রাত ৮টার দিকে মির্জা ইস্পাহানির বাড়ি থেকে একটি জিপ এলো পালবাবুদের নিতে। তখন তাদের ব্রিফকেসটি ওপর থেকে এনে দিলাম। আমার সামনেই সেটি খুললেন। ভেতরে বান্ডিল বান্ডিল নোট ঠাসা। ওরা টাকা গুনতে লাগলেন, আমি পাহারায় রইলাম। তারপর তারা ইস্পাহানির গাড়িতে সোজা কলকাতার উদ্দেশে এয়ারপোর্ট চলে গেলেন।
১৬ জানুয়ারি ১৯৬৪ সাকুল্যে ১৫ কি ২০ জনের প্রথম দাঙ্গাবিরোধী ‘নাঙ্গাপদ মিছিল’ বের হলো ওয়ারীর সেই স্টেপ-ইন বাড়ি থেকে, অংশ নিলেন মোহাম্মদ সুলতান, কামাল লোহানী, কাজী ইদরিস, একমাত্র নারী সেলিনা বানু এবং সবার পেছনে দুজন রিয়ারগার্ড নিয়ে এম এ জলিল। তাদের একজন জোহা, খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে, অনেকটাই এ বাড়িরই সদস্য, নারায়ণগঞ্জের পরবর্তী কালের এমপি শামসুজ্জোহা। মিছিল থেকে আওয়াজ উঠে, আমরা শান্তি চাই।
জেলখানার দিনগুলোতে জলিলের সহবন্দি ছিলেন কোরবান আলী, আবদুস সামাদ আজাদ, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ। এ সময় সস্ত্রীক এসে জায়নাবকে দেখে গেছেন ফকির সাহাবুদ্দিন আহমদ। তারপর একদিন একা এলেন। জায়নাব লিখেছেন : দোতলায় আমার লেখার টেবিলের সামনে দাঁড়ালেন। কুশল বিনিময়ের পর পকেট থেকে ১০০ টাকার নোটের একটি কড়কড়ে বান্ডিল বের করে বললেন, ‘ভাবি, এটা রাখেন’। আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘ভাবি, আমি তো জলিল ভাইকে জানি। নিশ্চয়ই আপনাকে খালি হাতে রেখে গেছেন। এইটা রাখেন।’ জোর করে গুঁজে দিলেন তোড়াটি আমার ব্যাগে।
১৯৬৫’র ২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান জনগণের ভোট এড়িয়ে ৮০ হাজার বেসিক ডেমোক্র্যাট চেয়ারম্যানের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করলেন। দেশের জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম ভোটার। আইয়ুব খানের প্রতিপক্ষ হিসেবে সম্মিলিত বিরোধী দল প্রার্থী বেছে নেয় ফাতিমা জিন্নাহকে। আবার শুরু হয় ইলেকশন ফিফার। স্টেপ-ইন সরগরম হয়ে উঠে ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে। ইলেকটরাল কলেজকে প্রলোভন দেখিয়ে এবং হুমকি দিয়ে নিজের পক্ষে আনা গদীনসীন প্রেসিডেন্টের পক্ষে সহজ ছিল। তারপরও ভোট তো আর রাতে হয়নি, একের ভোট অন্যে দিতে পারেনি, অবিরাম সিল মারার প্রশ্নই আসে না। ৮০০০০ ভোটারের ৭৯৭০০ জন ভোট দেন। আইয়ুব খান পেয়েছিলেন মোট ৪৯৯৫১ ভোট (পশ্চিম পাকিস্তানে ২৮৯৩৯ ভোট আর পূর্ব পাকিস্তানে ২১০১২ ভোট) আর ফাতিমা জিন্নাহর ২৮৬৯১ ভোটের ১৮৪৩৪ ভোটই পূর্ব পাকিস্তান দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের ফলাফল :
বিভাগ ফাতিমা আইয়ুব
ঢাকা ৫৯৮৬ ৫৮৬১
খুলনা ৩১২০ ৫৬৬৬
চট্টগ্রাম ৫৬৩৭ ৪৪১৯
রাজশাহী ৩৫৩৯ ৬৬৬৬
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকাই বলে দেয় এর একটি বড় অংশ আইয়ুব খানের পাতানো খেলা। আইয়ুব খানের তিনজন মন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। কে এম কামাল ও মিয়া বশিরকে সম্ভবত পয়সা কড়ি দিয়ে সরকার পক্ষ থেকেই দাঁড় করানো হয়েছিল। প্রকৃত বিরোধী প্রার্থী একজনই ‘কায়েদে আজম’ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ।
পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের উন্নতিতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে ভাটা পড়ে। তার প্রভাব পড়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক রাজনীতিতে। অনেক বছর পর আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে উঠে এলেন মোহাম্মদ তোয়াহা, একমুখ দাড়ি। ক’দিন পর এ বাড়িতে এলেন বোরকা পরা ছোটখাটো একজন। জলিল তার মেয়েকে বললেন, তোমার চাচিকে বাথরুমে নিয়ে যাও। অনেকক্ষণ পর বাথরুম থেকে যিনি বেরোলেন, তিনি কমিউনিস্ট নেতা আবদুল হক, গ্রেপ্তার এড়াতে বোরকা পরেছেন।
স্টেপ-ইন জমিয়ে রাখা এক নিয়মিত অতিথি ছিলেন ‘বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মপ্রকাশ’ খ্যাত কামরুদ্দীন আহমদ। তিনি বার্মাতে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তার মতো অনর্গল বহুবিচিত্র বিষয়ে গল্প এবং চুটকি বলা মানুষের দেখা খুব কমই মেলে। ঢাকায় তখন টেডি ফ্যাশন শুরু হয়েছে। নারী টেডি ফ্যাশনের শীর্ষে হামিদুল হক চৌধুরীর মেয়েরা। কামরুদ্দীন বললেন, ধানমন্ডির এক বিত্তবানের বিবিসাহেবের মৃত্যু হলে কাফন কিনতে যাকে পাঠানো হয় সে নারীর জন্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম মাপের কাফন কিনতে চাইলেন, কারণ বিবি সাহেব ‘টেডি’ ছিলেন।
স্টেপ-ইন-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘ মেয়াদের অতিথি মওলানা ভাসানী-সে আরেক অধ্যায়।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়