আইজিপি : নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন

আগের সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের বিজয় > সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময় : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলাই এখন লক্ষ্য

পরের সংবাদ

হাওরের বুকে শেখ হাসিনা সড়ক : ভূমিকা রাখছে স্থানীয় কৃষি শিক্ষা ও অর্থনীতিতে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লক্ষীমোড়া গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান শাকসবজি বিক্রি করে তার পরিবার চালান। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় উৎপাদিত শাকসবজি শহরের হাটে তুলতে সমস্যা হতো তার। হাওর এলাকা হওয়ায় নৌকায় করে শহরে আসতে আসতে বেলা হয়ে যেত। এর ফলে বাজারে এসে সবজির ভালো দাম পেতেন না। তবে এবার শাহজাহান বাড়ি থেকে ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ দিয়ে মাত্র আধা ঘণ্টায়ই পৌঁছাতে পারেন জেলা শহরের হাটে। এতে করে পণ্যের ন্যায্য দাম যেমন পাচ্ছেন, তেমনি ঘুচছে তার দীর্ঘদিনের আক্ষেপও।
কৃষক শাহজাহানের মতো পুরো বিজয়নগর উপজেলাবাসীর ভাগ্য বদল করে দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের সীমনা পর্যন্ত ‘শেখ হাসিনা সড়ক’। হাওরের বুকে এ সড়কটি বিজয়নগরবাসীর বহু বছরের লালিত স্বপ্ন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার সরাসারি কোনো সংযোগ সড়ক নেই। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলার আখাউড়া অথবা সরাইল হয়ে জেলা সদরে আসতে হয়। এতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
বর্ষাকালে হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে তাদের একমাত্র ভরসা নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প নেই। তাই কয়েক দশক ধরেই বিজয়নগরবাসী দাবি জানিয়ে আসছিল হাওরের বুকে সড়ক নির্মাণের। কিন্তু হাওরে সড়ক নির্মাণ অনেকটা চ্যালেঞ্জিং ছিল সংশ্লিষ্টদের জন্য। বছরের অর্ধেক সময় পানিতে টইটম্বুর থাকে বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা।
অবশেষে সব বাধা ডিঙিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। বর্তমানে সড়কটি চালু করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা সড়ক’।
বর্ষাকালে ভাঙন রোধে সড়কের পাশে বসানো হয়েছে সিসি ব্লক। সাড়ে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়ক শুধু যে শহরের সঙ্গে দূরত্বই কমিয়েছে তা নয়, ভূমিকা রাখবে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের আম, লিচু, মাল্টা ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল উৎপাদিত হয়। কিন্তু যাতায়াতব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকরা যথাসময়ে এসব ফল জেলা শহরে নিয়ে যেতে পারতেন না। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন তারা। এখন শেখ হাসিনা সড়ক ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদিত ফল শহরে নিয়ে যেতে পারছেন কৃষকরা।
মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, আগে গ্রামের আশপাশে কলেজ না থাকায় মেয়েদের শিক্ষা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ ছেলেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক চালু হওয়ায় মেয়েরাও শহরে গিয়ে ভালো কলেজে পড়তে পারছে।
চম্পকনগর গ্রামের কৃষক জসিম মিয়া জানান, প্রতি বছর তার লিচু বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি হয়। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় লিচুগুলো শহরে নিয়ে যেতে না পারায় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয়। শেখ হাসিনা সড়কটি চালু হওয়ার ফলে শহরে নিয়ে লিচুগুলো আরো বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন।
চম্পকনগর বাজারের ব্যবসায়ী মো. রাসেল জানান, জেলা শহর থেকে মালামাল আনার জন্য আখাউড়া অথবা সরাইল উপজেলা ঘুরে যেতে হয়। এতে করে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়।
আর এর প্রভাব পড়ে পণ্যের মূল্যে। এছাড়া নৌপথে মালামাল আনাটা ঝুঁকিপূর্ণ। শেখ হাসিনা সড়কটি চালু হওয়ায় সহজে এবং কম খরচে পণ্য আনা যাচ্ছে জেলা শহর থেকে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এর সুফল পাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারাও। অন্যদিকে, সড়ক চালু হওয়ার ফলে হাওরের স্বচ্ছ জলরাশির সঙ্গে নীল আকাশের মিতালি দেখতে এখন থেকেই শেখ হাসিনা সড়কে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। বর্ষাকালে এটিই হয়ে উঠেছিল অন্যতম পর্যটন স্পট।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান জানান, সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত। সড়কটিতে কিছু পুরনো ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। সেগুলো মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্যও প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়