ভরা মৌসুমেও চড়া সবজির বাজার

আগের সংবাদ

ভোটের কৌশলে সফল শেখ হাসিনা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন

পরের সংবাদ

নতুন বছরে নতুন আমি!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্তৃতির কারণে নিউ ইয়ার রেজল্যুশন নিয়ে মাতামাতি বাড়ে ২০১২ এর দিকে। তখন থেকেই প্রতি বছর প্রচুর মানুষ ইতিবাচক পরিবর্তনের আশায় নববর্ষের রেজল্যুশন করে থাকে। এমন অনেকেই আছেন যারা নতুন বছরে ভাল থাকার জন্য কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের সংকল্প নেন। এই বছরে জীবনধারায় এমন কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন যা মানলে জীবন বদলে যেতে পারে।

নতুন জিনিস শিখুন
মনে রাখবেন শেখার কোনো বয়স নেই, সেটাকে নতুন বছরে মেনে চলুন। আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিদিন নতুন একটা জিনিস শিখবার চেষ্ঠা করুন। ধরুন, অনেকদিন ধরেই আপনি কোনো একটা অনলাইন কোর্স করতে চাইছিলেন, সেটা ২০২৪-এ করে ফেলুন. বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। কিংবা যদি আপনার রান্না-বান্না কিংবা হাতের কাজের শখ থাকে, তাহলে ইন্টারনেটে নানা ধরণের ভিডিও আছে, সেখান থেকে দেখে দেখে শিখতে পারেন। আর কিছু না হলে আশেপাশের লোকজনের থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারেন। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, গড়ে ৪৬% মানুষ নতুন বছরের রেজল্যুশন বাস্তবায়ন করতে সফল হন। তার মানে যারা নতুন বছরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তাদের অর্ধেকেরও বেশি ব্যর্থ হয়েছে! অন্যদিকে ৪% রেজল্যুশন না করা মানুষ এসব করতে সফল হয়েছে, যা রেজল্যুশন করাদের তুলনায় বেশ খারাপ। তাই নিজেকে সময়ের সাথে আরো আপডেট রাখতে হলে মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি।

সঙ্গ নির্বাচনে কৌশলী হোন
নতুন কিছু শুরু করতে হলে আমরা শুধু অপেক্ষা করে থাকি কবে সঠিক সময় আসবে। এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। বরং সঠিক মানুষটি আপনার পাশে আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্ঠা করুন। আপনি দিনের বেশির ভাগ সময় যাদের সঙ্গে কাটান, তারা কি আপনার সুখ বা দুঃখে পাশে থাকে বা আপনার অর্জন তাদেরও খুশি করে? আপনাকে নিয়ে তারা গঠনমূলক সমালোচনা করে? যদি এই উত্তরগুলো না হয়, তবে খুঁজে বের করুন এ ধরনের মানুষ।

আত্মবিশ্বাসী হন
নিজের প্রতি, নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। ২০২৪-এ আপনার নিউ ইয়ার রেজল্যুশন এটাই হোক যে নিজের প্রতি বিশ্বাস যেন আপনার অটুট থাকে। আত্মবিশ্বাসী মানুষরা অন্যদের থেকে অনেক বেশি সুখে-শান্তিতে থাকেন। শুধু তাই নয়, আশ-পাশের মানুষদেরকেও এরা আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারেন।
নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় না ভুগে নিজের শক্তিকে শাণিত করুন।

চর্চায় রাখুন বই পড়া
নানা ধারার, নানা লেখকের আরো বেশি কওে দেশি বিদেশি বই পড়ুন, জানুন। আপনিও যদি বই পড়তে ভালোবাসেন, তাহলে আরো বেশি করে করে বই কিনুন আর পড়ে ফেলুন। কথায় আছে না, বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু হয় না! আর সামনেই বইমেলা। তাহলে আর কিসের অপেক্ষা? যদি বই কিনতে সমস্যা থাকে তাহলে কাছাকাছি কোনো লাইব্রেরিতেও মেম্বার হয়ে যেতে পারেন। অগুনতি বই পাবেন আর জ্ঞানের ভান্ডার পূর্ণ করার সুযোগও!

ক্ষমা করে দিন
জীবনের বিভিন্ন সময়ে আমরা নিজের ভুল কাজ বা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দুঃখ পাই, কখনো অন্যের কারণেও। এসব ঘটনার রেশ আমাদের বয়ে বেড়াতে হয় অনেক দিন। ক্ষমা করতে পারি না আমরা নিজেকে বা অন্যকেও। আপনার জীবনে নিজের কোনো ভুলে বা অন্যর জন্য যদি খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তাহলে ক্ষমা করে দিন। ভুল থেকে শিক্ষা নিন।

বাঁচুন বর্তমানে, আনন্দে
আপনাকে যদি বলা হয়, বর্তমানটাই সবচেয়ে বড়, আপনি কি বিশ্বাস করবেন? বর্তমানটাই আসলে আমাদের জীবন। জীবনের ঠিক এই মুহূর্ত, এই সময়টাকেই আমরা নিজের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অতীতের ভুল বা কষ্ট পাওয়ার ওপর যেমন আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনি ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা, কল্পনাকোনোটাই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তাই বর্তমানকে আপন করে নিন, আনন্দে বাঁচুন।

কৃতজ্ঞতা জানান
একটা ছোট্ট থ্যাঙ্ক ইউ কিন্তু অনেক খারাপ জিনিসকে ভালোতে বদলে দিতে পারে। তাই
আশেপাশের অনেকেই নিশ্চই আছেন যারা আপনার ভালো চান এবং আপনাকে ভালো পরামর্শও দেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন এবং তাদেরকে বলুন যে তাদের প্রতি আপনি কতটা কৃতজ্ঞ। কাছের মানুষগুলার বিশেষ দিনে তাদের শুভেচ্ছা জানান। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর চেষ্ঠা করুন। অবসরের সময়গুলোতে পরিবারের সকলকে নিয়ে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠানও দেখতে পারেন। রাতে একসাথে খাবার টেবিলে খাবার অভ্যেস করুন। সিনেমা হলে গিয়ে স্বপরিবারে বা বন্ধুদের নিয়ে দেখে আসতে পারেন ভালো কোনো চলচ্চিত্র।

মূহুর্তকে লিখে রাখুন
আমাদের মধ্যে এরকম অনেকেই আছেন যারা অন্তর্মুখী স্বভাবের। বেশি কথা বলতে অসুবিধে হয়, লোকের সাথে মিশতে অসুবিধে হয়, লাজুক স্বভাবের মানুষ। নিজের মনের ভাব সব সময় প্রকাশ করে উঠতে পারেন না। তাদের জন্য কিন্তু জার্নাল লেখা একটা দারুন ব্যাপার। নিজের মনের প্রতিটা কথা ডাইরিতে লিখে রাখুন। পরে পরে দেখবেন, ভালো লাগবে. তা ছাড়া জার্নাল লিখলে প্ল্যানিং করতেও সুবিধে হয়। নতুন বছরে আপনার কি কি স্বপ্ন, সেগুলো কি ভাবে বাস্তবে পরিণত করা যায়, সব লিখে রাখুন।

লাগাম টানুন রেজল্যুশনে
অনেকেই দেখা যায় ১০ টি ভিন্ন ভাষা শেখা, ১৫টি নতুন কাজের দক্ষতা ও ৫টি খারাপ অভ্যাস দূর করার মতো অবাস্তব রেজল্যুশন ঠিক করি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা সুপারহিরো নই। এমন অনেক অনুশীলন রয়েছে যা জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী, তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার যা দরকার তা হলো পোস্ট-ইট প্যাড, কলম ও ওয়াল। এছাড়া ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা, কাজে সংগঠিত হওয়া, একটি নতুন দক্ষতা বা শখ অর্জন, জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার দিকে নজর বাড়ান।

সমস্যার সমাধান খুজুঁন
সবার জীবনে কিছু সমস্যা থাকে, যার মুখোমুখি আমরা হতে চাই না। কিন্তু এতে সমস্যাগুলো মোটেও চলে যায় না; বরং অনেক সময় সমস্যা আরও বাড়ে। জীবনে সব সমস্যার সমাধান হয়তো আমরা করতে পারি না। তবে এ জন্য সমস্যার দিকে পিঠ ফেরাবেন না। কিছু সমস্যা জীবনে আসে আশীর্বাদ হয়ে, আর কিছু সমস্যা আসে শিক্ষা দিতে।

নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যান
অবচেতন মনে আমরা কোনো না কোনোভাবে হতে চাই অন্যের মতো। কেউ সুন্দর হতে চাই, কেউ মনোযোগ পেতে চাই সবার, কেউ চান তারকাদের মতো ফিগার, আবার কেউ অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্যারিয়ারে খুব ভালো কিছু করতে চান।
কিন্তু নিজেকে আরেকটু ভালো করার, আরেকটু ভালো রাখার প্রতিযোগিতা তো নিজের সঙ্গেই করা উচিত। তাই নতুন বছরে অন্য কারও মতো না হয়ে আপনি বরং আপনার ভালো হওয়ার রেকর্ড ভাঙুন। নিজেই হোন নিজের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি নিজের পছন্দ বা শখের যতœ নিন। পছন্দের কাজের জন্য আলাদা করে একটু হলেও সময় বার করুন। নিজেকে একটু সময় দিন। নিজের শরীরের, মনের ও আত্মার যতœ নিন। একটু “মি টাইম” কাটানোর রেজল্যুশন নিন নতুন বছরে।

মনস্তত্ত্বের প্রভাব ফ্যাশনে
নতুন বছরে নিজেকে বদলে নেওয়ার তাগিদ। এই মনস্তত্ত্বের প্রভাব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি করে নতুন ক্রেতা। নিউ ইয়ার রেজল্যুশনকে ক্রেতা যতটা গুরুত্ব দেন, ঠিক তেমনই গুরুত্ব দেন বিক্রেতারা। বলা যেতে পারে, ক্রেতাদের তুলনায় বিক্রেতাদের কাছেই এই দর্শন বেশি গুরুত্ব পায়।
কেননা, নতুন বছরে নতুন আমিকে খুঁজে বেড়ান যারা, তাদের মাঝেই আছেন সম্ভাব্য ক্রেতা। ব্র্যান্ডগুলোর ‘অফার প্ল্যান’-এর উদ্দেশ্য সেসব ক্রেতা আকর্ষণ।
হাই-ভ্যালু কাস্টমারের খোঁজে বিক্রয় কৌশল পরিকল্পনা করেন ফ্যাশনবাজারের কর্তাব্যক্তিরা। সঙ্গে থাকে পুরোনো ক্রেতাদের ধরে রাখার চেষ্টা। আবার তাদের ফ্যাশন আইটেমগুলো যেন একঘেয়ে না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয় প্রতিনিয়ত। নতুন কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা তো থাকেই, সঙ্গে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়, মিনি ইভেন্ট, ডেকোরেশনের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণের নানা উপায় খুঁজে বেড়ান বিক্রেতারা।
এভাবেই নতুন ফ্যাশনে নিজেকে জড়িয়ে খুঁজুন নতুন বদলে যাওয়া আমিকে!

নিয়মিত মেডিটেশন, জুম্বা করুন
এই সময়ে নতুন একটি টার্ম তৈরি হয়েছে, সিটিং ইজ নিউ স্মোকিং। দীর্ঘ সময় ধূমপান করলে যেসব ক্ষতি হয়, দীর্ঘ সময় বসে থাকলেও দেখা যাচ্ছে একই রকম সাইড ইফেক্ট দেখা দিচ্ছে। তাই ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রাখতে ফিজিক্যালি অ্যাকটিভ থাকতে হবে। নিয়মিত মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য মেডিটেশন আরম্ভ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মেডিটেশন অনেক রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এ বছর যদি আপনি রেজল্যুশন নেন যে আপনি প্রতিদিন মেডিটেশন করবেন, সেটা যত কম সময়ের জন্যই হোক না কেন শুরু করে দিন। এছাড়া নাচের মাধ্যমে ফিটনেস ধরে রাখা ও ক্যালরি ঝড়াতে নিয়মিত করতে পারেন জুম্বা। আপনি চাইলে কোনো জুম্বা ক্লাসে জয়েন করতে পারেন, কিংবা ভিডিও টিউটোরিয়ালের সাহায্যেও একা একই করতে পারেন। পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যের জন্য বাকেট লিস্টে এড করুন ঘুম থেকে সকালে উঠবার অভ্যেস। প্রতিদিন সকালে উঠে কিছু ব্যায়াম করুন। জিমে গিয়ে এক্সারসাইজ করার সুযোগ না থাকলে নিজ বাড়ির আশেপাশে যদি কোনো পার্ক থাকে সেখানে গিয়ে অন্তত আধ ঘন্টা ব্যায়াম করুন। আর কিছু না হোক, হেঁটে আসুন। যদি বাড়ির কাছাকাছি পার্ক বা হাঁটার জায়গা না থাকে, তাহলে ছাদে চলে যান। সেখানে কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। আপনি যোগ ব্যায়ামও করতে পারেন।

ঘুরে বেড়ানোর অভ্যেস বাড়ান
এমনিতেই দৈনন্দিন কাজের চাপে আর কংক্রিটের জঙ্গলে থেকে থেকে আমরা হাপিয়ে উঠি। মাঝে মাঝে একটু প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে জীবনের ছন্দে যে শুধু একটু পরিবর্তন আসে তা নয়, প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে শরীরও ভালো থাকে। শহরের ধুলো, ধোঁয়া আর দূষণ থেকে দূরে একটু ফ্রেশ অক্সিজেন পাওয়া যায় প্রকৃতির কোলে। মাঝে মাঝে তাই বেরিয়ে পড়বেন। আপনিও এখনই লিস্ট বানিয়ে ফেলুন যে কোথায় কোথায় ঘুরতে যেতে চান এ বছরে। যদি দূরে কোথাও যাওয়া সম্ভব না হয়, কাছে-পিঠেই কোথাও ঘুরে আসুন। নতুন জায়গা, নতুন লোকজন, নতুন অভজ্ঞতা- জীবনের একটা বড় অর্জন কিন্তু এগুলো!

মডেল : সুমাইয়া চৌধুরী কৃতিকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়