টিআইবি : ড. ইউনূসের মামলা বিচারিক শুদ্ধাচার ও স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা

আগের সংবাদ

নাশকতা উপেক্ষা করেই ভোট উৎসব : স্বচ্ছ ভোটগ্রহণে প্রস্তুত ইসি, দেড়শ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের চালচিত্র

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের ফলাফল, ভোটার উপস্থিতি, সংঘাত, সংঘর্ষ ও বিএনপিসহ তার নেতাদের নির্বাচন বর্জন নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্রে বহু বিচিত্র সংবাদ আসছে। বিশ্লেষণ আসছে, তবে বিশ্লেষণের মাত্রা ইলেকট্রনিক মিডিয়াই বেশি। অনেকে অনেক ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করে যাচ্ছেন। বিরোধীদের মতে, ভোটার উপস্থিতি হবে ৫ শতাংশের কম। এটা যে একান্ত ভিত্তিহীন তা পূর্ববর্তী যে কোনো পরিসংখ্যান থেকে নির্ধিদ্বায় বলা যেতে পারে। আসলে এই নির্বাচনে ৭০ শতাংশের মতো ভোটার উপস্থিতি কল্পনা করা যায়। এই সংখ্যাটি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার সূচক। তার এই সূচকে নিম্নগামীপ্রবণতা এনে দিতে পারে কতিপয় ঐতিহাসিক ও চলমান কর্মকাণ্ড। আওয়ামী লীগের অনেক এমপি এবং তাদের স্বজনরা ভোটের নিম্নগামিতার জন্য দায়ী হতে পারতেন। তাদের অনেকেই জনবিচ্ছিন্নতা, দাম্ভিকতা, লুটপাটসহ বিচিত্র অপকর্মের কারণে পার্টির দৃষ্টিতে বর্জিত হয়েছেন, যদিও কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রত্যাবর্তন করেছেন। তাদের উপস্থিতি সংঘাত বৃদ্ধি ছাড়া নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা সংরক্ষণে বা ধরে রাখতে বরং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরা ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন। তাদের উপস্থিতিতে ক্ষাণিকটা সংঘাতময় পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও এক ধরনের তীব্র প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়েছে। প্রতিযোগীরা নিজেদের স্বার্থেই ভোটার টেনে আনবেন। তা ছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী অন্যদেরও কিছু ভোট ব্যাংক রয়েছে, যা উপস্থিতির হারকে বাড়িয়ে দেবে। স্বতন্ত্রদের জনপ্রিয়তা ছাড়া কিছু নেগেটিভ ভোট তাদের অবস্থানকে আরো স্ফীত করবে। তথ্যে জানা যাচ্ছে কিছু স্বতন্ত্রের ব্যাপক হারে জামায়াত-বিএনপির ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা আত্মীয়তা বা সামাজিকতার কারণে হতে পারে, হতে পারে দুই শত্রæর মাঝে সবচেয়ে কম ক্ষতিকারকটি বেছে নেয়ার প্রবণতা থেকে। কোনো কোনো স্বতন্ত্র বা বিকল্প প্রার্থীর মামা, কাকা বা শ্বশুর যথাক্রমে জামায়াত বা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। প্রকাশ্যে তারা ভোট দিতে না এলেও তাদের অনুগামীদের অনেকেই সংগোপনে ভোট দিয়ে উপস্থিতির হার বাড়িয়ে দিতে পারে। জাতীয় পার্টি বা ইসলাম পছন্দ দলগুলো অযাচিত কিছু ভোট পেয়ে যাবে। তাতে ভোটার উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে বিস্মিত হওয়ার কারণ নেই। তবে এ ক্ষেত্রে যেসব উপাদান প্রভাব ফেলতে পারে তা হলো বিরূপ আবহাওয়া, বিএনপির হরতাল, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের সংঘাত আর ৭৬ আসনে দৃশ্যমান প্রতিদ্ব›দ্বীর অভাব। সাধারণভাবে বিএনপির বর্জন অপেক্ষা আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের সংঘাত একটি ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে দিতে পারে। ভোটার উপস্থিতি অন্তত ৭৬টি নির্বাচনী এলাকায় কম হতে পারে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের বাঘা নেতা কিংবা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনো গণনায় নেয়ার মতো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই। তারা ভোটার নিয়ে আসার ব্যাপারে অমনোযোগী হলে এসব আসনে উপস্থিতির হার ৪০ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। এ অবস্থা পরিবর্তনে এখনো সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগের একটি ঘোষণা বা কানকথার মাধ্যমে যদি এ কথা ছড়িয়ে দেয়া যায় যে, আগামীতে মন্ত্রিসভায় স্থানপ্রাপ্তদের অন্তত ৫০ শতাংশ হবে সংঘাতবিহীন অধিক ভোটধারী। তাহলে ভীতিহীন পরিস্থিতিতে অনেক বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত হবে। এ পর্যন্ত ১৮ দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনটি তাজা প্রাণ বিসর্জিত হয়েছে, ১৫৬ জায়গায় সংঘাত হয়েছে, দুই-তিন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে, কিছু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, কিছু প্রার্থী জরিমানা বা মুচলেকা দিয়ে নিষ্কৃতি পেয়েছে। নির্বাচনের দিন সংঘাত-সংঘর্ষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে বা কালো টাকার খেলা দেখা দিলে ভোটার উপস্থিতি প্রভাবান্বিত হবে। বিরূপ আবহাওয়া কোথাও কোথাও ভোটার উপস্থিতির হার কমিয়ে দিতে পারে, সেটা সাধারণত উত্তরবঙ্গে বেশি দৃশ্যমান হতে পারে। তবে সাধারণভাবে আবহাওয়া অবসাদমুক্ত থাকবে।
এটা এখন স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগই নির্বাচনে জয়ী হবে। তবে ৭৬ জনকে খাঁটি আওয়ামী লীগের বলা হলেও বাকিদের প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে স্বতন্ত্র বলয়ের। তখন মন্ত্রিসভার স্বরূপ নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম হতে পারে। স্বতন্ত্র ও মিত্ররা মিলে সরকারের কাঠামো ও চরিত্র বদলে দিতে পারে। তারা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ও সুস্থ ধারার সহায়ক হয়ে যেতে পারে। ৮৫ কিংবা ১০০ স্বতন্ত্র এমপির মড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ঃযব রহফবঢ়বহফবহঃং, নু ঃযব রহফবঢ়বহফবহঃং, ভড়ৎ ঃযব রহফবঢ়বহফবহঃং জাতীয় কিছু উপহার দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। নির্বাচনে জয়ী হয়েই তারা স্বগৌরবে তাদের নেত্রীর কাছে ফিরে আসবে।
নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতা, অস্ত্রের মহড়া ও অবৈধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির ভূমিকাও প্রণিধানযোগ্য হতে পারে। উভয়ের ভূমিকা বহুলাংশে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারক হবে। নির্বাচন কমিশনের পূর্বাপর দৃঢ় ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় মনে হচ্ছে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কথায় বলে নিজের বুঝ পাগলেও বুঝে। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তার নেত্রীর শেষ মুহূর্তের সতর্কতা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অধিক সহায়ক হবে বলে মনে করি।
এ হচ্ছে ৭ জানুয়ারির দৃশ্যমান চালচিত্র। নির্বাচনের পরে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসতে পারে এবং তাতে দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের কী ভূমিকা হবে তা নিয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করছি না।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়