টিআইবি : ড. ইউনূসের মামলা বিচারিক শুদ্ধাচার ও স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা

আগের সংবাদ

নাশকতা উপেক্ষা করেই ভোট উৎসব : স্বচ্ছ ভোটগ্রহণে প্রস্তুত ইসি, দেড়শ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

স্টেপ-ইন রাজনীতির আঁতুড়ঘর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৫৬ সালে একদিন পূর্ব পাকিস্তানের চিফ মিনিস্টার আতাউর রহমান খান হঠাৎ স্টেপ-ইন নামের বাড়িতে হাজির। জলিল-জায়নাব উভয়েরই তিনি অগ্রজতুল্য। চিফ মিনিস্টার বললেন, তার বাড়িতে বড় বিপদ, উদ্ধার করতে হবে।
তার স্ত্রী অসুস্থ, কলকাতায় অপারেশন করতে পাঠাতে হবে। কিন্তু ছোট মেয়েকে দেখভাল করার মতো আয়ার খোঁজ পাচ্ছেন না। তার রাজনৈতিক সচিব জমিরউদ্দিন জলিল সাহেবের মেয়ের আয়ার গুণগান করায় তিনি খোঁজ করতে এখানেই এসেছেন। এ বাড়ির আয়া সুলতানের মার বড় বোন রহমানের মা প্রাদেশিক অর্থসচিব গোলাম আলীর (আড়ালে লোকজন তাকে বলত গোলমাল আলী, তিনি থাকতেন বেইলি রোডের গুলফিশান কিংবা কাহকাশান নামের বাড়িতে) বাসায় অনেক দিন আয়ার দায়িত্ব পালন শেষে ভবিষ্যতে বেতন যত বেশিই হোক আর কোনো সাহেবের বাসায় কাজ না করার প্রতিজ্ঞা করে নিজের বাড়িতে অনেকটা অবসর জীবনযাপন করছিল। জায়নাবের উদ্যোগে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মাসে ৩০ টাকা বেতনে চিফ মিনিস্টারের বাড়ির আয়া পদে কাজ করতে তাকে সম্মত করানো হলো। রহমানের মা দক্ষিণ মুশুণ্ডির কাঁচাঘর থেকে হেয়ার রোডে চিফ মিনিস্টারের বাড়িতে গিয়ে উঠল। এই বাড়িটিই এখনকার সুগন্ধা (ফরেন সার্ভিস একাডেমি), যে বাড়িতে ষাটের দশকের শুরুতে রানি এলিজাবেথ রাত কাটিয়েছেন। স্টেপ-ইনের আয়া সুলতানের মায়ের বেতন কুড়ি টাকা, কাজেই তার অসন্তোষ বেড়ে নিয়মিত অশ্রæপাতে পৌঁছল- অগত্যা তার বেতন ২৫ টাকায় উন্নীত করে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলো।
ঢাকা শহরের প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক ডাক্তার নন্দীর কথা সবাই জানেন, কিন্তু আগে তার সম্পর্কে দু’চার পঙ্ক্তির বেশি কোথাও পাইনি। কিন্তু তিনি তো স্টেপ-ইনেরও একজন সুহৃদ, সুতরাং উঠে এসেছেন জায়নাবের লেখায়।
মন্মথনাথ নন্দী খুব লম্বা ছিলেন না, তবে চওড়া ছিলেন বটে। নিজেই বলতেন তার ওজন ২০০ পাউন্ড, আড়াই মণ। উজ্জ্বল বাঙালি ফর্সা মুখে ছোট করে ছাঁটা গোঁফ ছিল আর মাথাভর্তি চুল ব্যাকব্রাশ করা থাকত। সবসময় পরতে দেখা গেছে সাদা হাফশার্ট আর সাদা ট্রাউজার। ‘আর ভুঁড়ি? মুজতবা আলীর ভাষায় বলতে হয়, কী বিশাল, কী বিপুল, কী জাঁদরেল। এই অবয়বের কারণেই হয়তো লোকে তাকে ভয় করত না।… ডাক্তার নন্দী ছিলেন ঢাকার শিক্ষিত সমাজের একাধারে চিকিৎসক, পরামর্শদাতা এবং অগাধ তথ্যের উৎস। এমন কোনো বিষয় ছিল না যা সম্পর্কে নন্দী খবর রাখতেন না। তিনি রোগীর পেশা অনুযায়ী তার আলাপ চালাতেন। ক্রিকেটারের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে, গায়কের সঙ্গে গান-বাজনা নিয়ে, কূটনীতিকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে, গবেষকের সঙ্গে লেটেস্ট জার্নাল নিয়ে তিনি গল্প শুরু করতেন। রোগী এতেই অর্ধেক ভালো হয়ে যেত।’
মওলানা ভাসানীর ডাকে কাগমারী সম্মেলন, ৬-১০ ফেব্রুয়ারি ১০৫৭, টাঙ্গাইলের কাগমারীতে; ঢাকা শহর খালি হয়ে গেছে। সবাই ছুটেছে কাগমারী। দেরিতে রওনা হওয়া চিফ মিনিস্টারের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি জমিরউদ্দিন গাড়ি চালাচ্ছেন, সঙ্গে এম এ জলিল। টাঙ্গাইলের করটিয়ার কাছে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটালেন। আহত জলিলকে অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন স্টেপ-ইনে রেখে গেলেন। বড় বড় ডাক্তাররা এলেন, দেখেশুনে মন ভার করে চলে গেলেন। জায়নাব ডাকলেন ডাক্তার নন্দীকে। সাতসকালে এসে তিনি আহত রোগীর সঙ্গে কাগমারী কনফারেন্সের গপ্পো জুড়ে দিলেন। এম এ জলিলের ধারণা তার শিরদাঁড়া ভেঙে গেছে। ডাক্তার বললেন, তাই যদি হতো সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে পারতেন না, বসতে পারতেন না, আপনাকে স্ট্রেচারে করে আনতে হতো। তা যখন করতে হয়নি রোগী নিশ্চয়ই ভালোই আছেন। ওষুধ-পথ্য ছাড়াই ডাক্তার নন্দী মৃতপ্রায় রোগীকে অর্ধেক ভালো করে তুললেন।
২৭ নম্বর র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট তার বাড়ি। তাতে রোগীর ভিড় লেগেই থাকত। তার ফি পাঁচ টাকা, কলে গেলে ১০ টাকা। মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের ফি তখন ১৬ আর ৩২। ‘ডা. নন্দী কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে ফি নিতেন না সহকর্মী বলে, কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে ফি নিতেন না পবিত্র বিদ্যাদানকারী বলে, কোনো রাজনীতিকের কাছ থেকে ফি নিতেন না দেশের স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলে’- ফি না নেয়ার নিশ্চয় এমন আরো অনেক অজুহাত তার ছিল।
মিসেস নন্দীও সজ্জন, ছিলেন বাংলাবাজার গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ডা. নন্দীর সহকারী সুকুমার বর্ধনও তার মতোই দেহের অধিকারী- নন্দীর সেকেন্ড। কিন্তু নন্দীর ছায়াতলে পড়েছিলেন বলে নিজের জন্য যশ-কামাই করতে পারেননি। সেই ডাক্তার নন্দীকে সরকার ‘তমগায়ে খিদমত’ খেতাব দিয়েছিল। আবার এটাও শোনা যাচ্ছিল নন্দীকে গ্রেপ্তার করার জন্য সাদা পোশাকের পুলিশ ২৭ র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটের আশপাশেই ঘুরঘুর করছে। ১৯৬৪-এর দাঙ্গার পর ডাক্তার নন্দীর কথা উঠতেই জলিল তার স্ত্রী জায়নাবকে বললেন, ডা. নন্দী সপরিবারে কবে চলে গেছেন কলকাতায় কেউ বলতে পারে না।
যারা ভারত থেকে চলে এসেছেন, যারা পূর্ব বাংলা থেকে চলে গেছেন সন্তর্পণে গিয়েছেন যেন কাকপক্ষীও টের না পায়। শেষ মুহূর্তে বিশ্বাসের ঘাটতি প্রবল হয়ে উঠেছে। আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ জারির পর স্টেপ-ইন তল্লাশি হলো। শুরু থেকেই জলিল আন্ডারগ্রাউন্ডে। জায়নাব রাজনৈতিক বইপত্র যতটা সম্ভব বোচকা বেঁধে স্বজনের বাড়ি পাঠালেন। আর নিজেই একে একে পুড়লেন অসংখ্য রাজনৈতিক ইশতেহার। ছাইগুলোও পুঁতে ফেলা হলো স্টেপ-ইনের উঠানে। ছাইচাপা পড়ে গেল আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, যুবলীগ কমিনটার্নসহ বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের ইশতেহার, দলিল ও চিঠিপত্র।
বাড়ি তল্লাশি করতে এসে আলমারি ভর্তি ঢাউস আকৃতির বই দেখে জানতে চায় এটা উকিলের বাড়ি কিনা। বলা হয় এটা মাস্টারের বাড়ি। কালো চামড়ায় বাঁধাই করা প্রবাসীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে কী বই জানতে চাইলে জায়নাব বললেন, ডিকশনারি; আর রবীন্দ্র রচনাবলির সারির দিকে আঙুল তুললে তারাই বলল, ইয়ে এনসাইক্লোপেডিয়া?
জায়নাব বললেন, হ্যাঁ।
অন্তত তখনকার মতো বিপদভঞ্জন হলো।
‘স্টেপ-ইন’ গ্রন্থে প্রাপ্ত কিছু তথ্য বাস্তবিকই ইতিহাসের অনেক উপাদান রয়েছে।
১. সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের পূর্বাংশের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, ১৯৪৮-এ বাড়িঘরের প্রকট সমস্যা। ‘ছোট্ট একটি শহর, রাতারাতি হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। এ সময় ঢাকাকে কতটা চাপ সইতে হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। পরিস্থিতি এতই গুরুতর ছিল যে, সম্পূর্ণ অপরিচিত এ শহরে এসে অনেককে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা বা বজরায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল।’ সে সময় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের অনুসারী ছাত্রনেতা শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযমের চাচা, জলিল সাহেবের সহপাঠী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী শহরে ঠাঁই পাননি, তিন মাস তাদের বজরায় কাটাতে হয়েছে।
২. স্বাধীন পাকিস্তান হবে, কিন্তু প্রস্তুতি নেয়ার আগেই দেশ ভাগ হয়ে গেল। পূর্ব বাংলার লোকদের ধারণা ছিল কলকাতা তাদের ভাগে পড়বে। তাহলে খানিকটা নিশ্চিত হওয়া যেত। কলকাতায় যে সম্পদ ছিল সারা বাংলাদেশ কুড়িয়েও তার সমান সম্পদ জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। পূর্ব বাংলা চিরকালই অবহেলিত। তার একমাত্র কদর ছিল কাঁচামালের জন্য। বর্ষাকালে পানিতে সয়লাব পূর্ব বাংলাকে উড়োজাহাজ থেকে দেখে পশ্চিম পাকিস্তানি এক নেতা জিন্নাহর বোকামির ইঙ্গিত দিয়েছেন ‘হায় আল্লাহ জিন্না সাহাব নে কেয়া কিয়া, পুরা সমুন্দুর লে লিয়া’। -এ কী করেছেন জিন্নাহ সাহেব? পুরো সমুদ্র নিয়েছেন!
৩. ১৯৪৮ সালেই ঢাকার ইডেন কলেজ আর কামরুন্নেসা কলেজ একীভূত করে সৃষ্টি করা হলো সরকারি ইডেন কলেজ। আর দুটি কলেজের স্কুল একীভূত হয়ে হলো সরকারি কামরুন্নেসা স্কুল। কামরুন্নেসা স্কুল ভবন দান করেছিলেন ঢাকার নবাব পরিবারের একজন নারী। তার নামেই স্কুলটির নামকরণ করা হয়। জায়নাবও এই স্কুলের মাস্টারিতে যোগ দিলেন ২ নভেম্বর ১৯৪৮।
৪. স্টেপ-ইনে আমিনা নামের পাতলা ছিপছিপে যে গৃহকর্মী ছিল কালক্রমে সে যথেষ্ট মোটাসোটা হয় এবং সুলতানের মা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। মেজাজি এই নারী জায়নাবের সন্তান পালনে যেমন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তেমন পাচক হিসেবেও সুখ্যাত হয়ে উঠেছে- গৃহকর্মী লিখছেন : সুলতানের মা দীর্ঘ ২০ বছর স্টেপ-ইনের গৃহপরিচারিকা ছিল। ওর হাতের কাবাব আর ভুনা গোস্ত ছিল বন্ধু মহলে প্রসিদ্ধ। একবার শেখ মুজিব কুরবানির ঈদের পর ফোন করলেন বলতে যে, ব্যস্ততার কারণে আসতে পারছেন না, তার জন্য ভুনা গোস্ত যেন থাকে।
৫. গুলিস্তান সিনেমা হল নির্মাণ শেষ, সিনেমা দেখানো শুরু হয়েছে। ১৯৫০-এর ফেব্রুয়ারিতে জলিল ও জায়নাব হ্যামলেট দেখতে গুলিস্তান রওনা হলেন। কিছুদূর গিয়ে শুনলেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে। বাসায় ফিরতে হলো। তিনি লিখেছেন, ‘১৯২৬ সাল থেকে এখানে অনবরত দাঙ্গা চলেছে। হিন্দুরা মুসলমান পাড়ায় ঢুকতে সাহস করেনি, মুসলমানরাও হিন্দু পাড়ায় পা বাড়ায়নি।’ হিন্দু পরিবারগুলোর বউ ও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটের মোশাররফ হোসেন নিজের বাড়িতে ক্যাম্প খুলেছেন; মাশ্চরক কুটিরে খোলা হয়েছে ছোট একটা রিলিফ ক্যাম্প। কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে, তাদের কারো ছুতমার্গ কাটেনি। ট্রেনিং কলেজের প্রফেসর মুখার্জী বাবুর ৪ বছর বয়সি পুত্র গো ধরলেন জায়নাবের দুই বছর বয়সি কন্যার প্লেটে ছাড়া খাবে না। এক থালায় দুজনকেই ভাত দিতে হলো। ছেলের কারণে মুখার্জীদের জাত খোয়াতে হলো। এক সময় রায়ট বন্ধ হলেও হিন্দু-মুসলমানের পারস্পরিক সন্দেহের ফাটল আর জোড়া লাগল না।
৬. ১৯৪৬ সালের ডাইরেক্ট অ্যাকশন দিবসের মিটিংয়ে ইসলামিয়া কলেজের মিটিংয়ে যেসব তরুণী হাজির হন তাদের মধ্যে ছিলেন রোকেয়া সুলতানা, মরিয়ম খান, হোসনে আরা, নূরজাহান বেগ এবং জায়নাব আখতার। নূরজাহান বেগই পরবর্তীকালে নূরজাহান মোর্শেদ, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম নারী প্রতিমন্ত্রী। যখন মিটিং চলছিল তখনই ‘অ্যাকশন’ শুরু হয়ে যায়।
৭. টাঙ্গাইলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শামসুল হকের অপ্রকৃতস্থ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয় স্টেপ-ইনে। একদিন সকাল ১০টা কি ১১টার দিকে এসে জলিল সাহেবের অনুপস্থিতিতে একাই অনেক কথা বলতে থাকেন। তখনো সন্দিহান হওয়ার মতো কিছু বলেননি। ‘একসময় বললেন, আমাকে ১ লাখ টাকা দাও। আমি বললাম ১ লাখ টাকা কোথায় পাব শামসু ভাই? তিনি বললেন, টাকাটা আমার খুব দরকার। ১ লাখ টাকা দাও আমাকে। আমি ওটা খুব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিতে পারব। ইংল্যান্ডের রানি ডেকেছেন, আমাকে প্রাইম মিনিস্টার করবেন বলে। ওখানে গেলে টাকার অভাব হবে না।’ তার বুক মোচড় দিয়ে উঠল, আর সন্দেহ রইল না যে সত্যিই তিনি আর প্রকৃতস্থ নেই।
৮. যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই ঢাকায় আসার পর মুজিব এখানে প্রায়ই যেমন আসতেন, যেতেন আমাদের বিয়ের পর কলকাতার বাসায়ও। মুজিব-পতœীও আসতেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে, আর মজার মজার গল্প বলতেন কর্মীদের কাণ্ডকীর্তি নিয়ে। নিরঙ্কুশ ভোটে যুক্তফ্রন্ট জিতে গেল, মুজিব প্রাদেশিক মন্ত্রী হলেন। তারপর পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হলো, সবার মন্ত্রিত্ব চলে গেল। জায়নাব লিখেছেন, মুজিব জেলে গেলেন। তখন তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। প্রসব আসন্ন হয়ে এলো, মুজিব তখনো জেলে। সাহেবকে (আবদুল জলিল) মুজিব-পতœী ভাই ডাকতেন। ভাই ডাকতেন অনেককেই, কিন্তু এদের মধ্যে একটি বিশেষ স্নেহের সম্পর্ক ছিল। প্রসব আসন্ন জেনে সাহেব তাকে নিয়ে গেলেন মিটফোর্ড হাসপাতালে। এখানেই ছোট মেয়ে রেহানার জন্ম হয়।
৯. ১৯৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ে তিনি লিখেছেন : ১৯৫৪ সালের নির্বাচন এই দেশের ইতিহাসের একটি সংগ্রামী অধ্যায়ের সার্থক সমাপ্তি, যদিও বিজয় স্থায়ী হয়নি। এর একটি নেতিবাচক ফল হলো এই যে, প্রায় প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সন্তানরা এক বছর স্কুল কামাই করে লেখাপড়ায় এক বছর পিছিয়ে গেল।
১০. ১৯৫৪-এর প্রবল বন্যায় ঢাকার ওয়ারী, পল্টন ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়া সমস্ত পুরান ঢাকা তলিয়ে গেল। নারিন্দা, মদনমোহন বসাক রোড, র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটে নৌকা চলে; গোপীবাগ, কে এম দাস লেন- এসব ডুবে গেছে; সারাদিন প্রচণ্ড গরম; সন্ধ্যায় থমথমে ও অস্বাভাবিক স্তব্ধতা, ঘুটঘুটে অন্ধকার ও মশার বাড়াবাড়ি স্টেপ-ইন হয়ে উঠল ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণের কেন্দ্র। এ বাড়ির দক্ষিণে রাস্তার ওপারের বাড়ির বুড়ো ডিএসপি বাঁশ দিয়ে উঠানের পানি মাপেন, পানি স্থির ও অবিচল আর ‘স্টেপ-ইন যেন নূহ নবীর নৌকা’।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়