টিআইবি : ড. ইউনূসের মামলা বিচারিক শুদ্ধাচার ও স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা

আগের সংবাদ

নাশকতা উপেক্ষা করেই ভোট উৎসব : স্বচ্ছ ভোটগ্রহণে প্রস্তুত ইসি, দেড়শ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

বাজার অস্থিরতায় বিপাকে জনগণ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে অস্থির বাজারব্যবস্থা নিয়ে হরহামেশা প্রতিবেদন-প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়ে আসছে। গত মাসে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়ার সংবাদের পরমুহূর্তে এক লাফে পেঁয়াজের মূল্য আড়াইশ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হয়। দেশে নতুন পেঁয়াজের ফলন ওঠার ফলে মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে কেজি একশ টাকায় নেমে আসে। খাদ্যপণ্য মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সমষ্টিগত মানুষ দুর্দশার কবলে। খাদ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের কিংবা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে খাদ্যপণ্যের মূল্য আমাদের নাকাল করে চলেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি নেই। বাজারব্যবস্থার এমন অসঙ্গতি বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। নিয়ন্ত্রণহীন বাজারব্যবস্থার খেসারত দিচ্ছে জনসমষ্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। অথচ রাষ্ট্র ও সরকার নির্বিকার।
দেশে ভোক্তা অধিকার আইন রয়েছে। তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের সংবাদ গণমাধ্যমে আসে বৈকি। তবে এতে ইতিবাচক ফল লাভ হয়েছে সেটা বলা যাবে না। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তাদের প্রোটিন চাহিদা পূরণে কেবল থাই পাঙাশ আর ব্রয়লার মুরগি ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তারও মূল্য বৃদ্ধির ফলে তাদের প্রোটিন চাহিদা পূরণের বিকল্প কিছু থাকছে না। আমাদের দেশে সবচেয়ে কম মূল্যের গরুর মাংস এখন সবচেয়ে দামি খাবারের তালিকায় চলে যাওয়ার ফলে নির্দিষ্ট শ্রেণির বাইরে সামষ্টিক মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এতে দেশের গরুর মাংসের দোকানে বেচা-বিক্রি মাত্রাতিরিক্ত হারে কমে যাওয়ার ফলে মাংস বিক্রেতারা চরম বিপাকে পড়ে। মাংস বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে তারা জোট বেঁধে ক্রেতা আকর্ষণে ৮০০ টাকা কেজির স্থলে ৫৫০-৬৫০ নির্ধারণ করেছে। এতে মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের তারা ফেরাতে সক্ষম হলেও দর কমিয়ে মাংসের সঙ্গে অতিরিক্ত হাড়-চর্বি যুক্ত করে বেচা-বিক্রি করছে। অখাদ্য ফেলনা অংশও জুড়ে দিচ্ছে বিক্রীত মাংসের সঙ্গে। প্রতিবাদ করলে বলে, ৮০০ টাকার মাংস ২০০ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছি, আমাদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ করতে এ ছাড়া উপায় নেই। ক্রেতারাও কেজিপ্রতি ২০০ টাকা কম মূল্যে মাংস পাচ্ছে ভেবে খাদ্য-অখাদ্য মেশানো মাংস নিতে বাধ্য হচ্ছে। একদিকে ক্রেতা আকর্ষণে মূল্য কমিয়েছে আরেক দিকে ফেলনা অখাদ্য হাড়, চর্বি ক্রেতাকে তুলে দিচ্ছে। বাস্তবে এটা তো এক ধরনের প্রতারণা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। অথচ এ বিষয়েও যেন কারো কোনো দায় নেই; দেখভালের প্রয়োজন নেই। সব ক্ষেত্রেই তুঘলকি কাণ্ড চলছে। কিন্তু নিরসনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকার নির্বিকার। নাগরিকদের স্বার্থরক্ষায় কারো যেন কোনো দায়ভার নেই।
একটি পরিবারে খাদ্যের মৌলিক চাহিদা পূরণে যে পণ্যদ্রব্যগুলো অত্যাবশ্যকীয় যেমন চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি প্রতিটি খাদ্যপণ্য সাধারণের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সাধারণ ক্রেতা বাজারে গিয়ে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কাছে নাজেহাল হয়ে পড়েন। কোনটা কিনবেন, আর কোনটা বাদ দেবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না, বাধ্য হয়ে বাজারের ফর্দ সংকুচিত করতে হয়, এ যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাধারণের জীবনে। জীবনের নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপত্তার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নেই। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারছে না, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটা কাক্সিক্ষত হতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম হঠাৎ বৃদ্ধিতে মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণকে জিম্মি করে দ্বিগুণ মুনাফা লুটেন। এটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়ে পড়েছে। সাধারণ জনগণ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে অসহায় শ্রেণি, নীরবে সব অনাচার হজম করে যাচ্ছে।
সরকারের এ বিষয়ে কোনো দৃষ্টি নেই। সর্বক্ষেত্রেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় স্পষ্ট। সরকার দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মৌলিক দায়িত্ব। মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চক্রের কাছে সাধারণ জনগণ ক্রমাগত জিম্মি হয়ে পড়েছে, তাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষার ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। সরকার টিসিবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের সুযোগ দিত, তাহলে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র একচেটিয়া বাজারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারত না।
সরকারকে কঠোরভাবে বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের কৃষিতে নজর দিতে হবে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনে কৃষককে যে প্রণোদনা দেয়ার কথা তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা, আরো দেখভাল করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে যখনই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতিতে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, তখন সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট চক্র পরস্পরকে দোষারোপ করতে শুরু করে। ভোক্তা অধিকার আইন নিয়ে যারা কথা বলে, তাদেরও জানা দরকার শুধু বাজারে বাজারে তল্লাশি চালিয়েই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও অবৈধ মজুত ঠেকানো সম্ভব নয়। বরং বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নতুন বছরে আমরা প্রবেশ করলাম, নানা প্রত্যাশাকে সামনে রেখে। আমাদের সর্বাধিক প্রত্যাশা থাকবে আমাদের জীবনের নিরাপত্তার অনুষঙ্গ মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম বাজার নিয়ন্ত্রণের। না খেয়ে মানুষ দেশে মরছে না হয়তো; কিন্তু অখাদ্য খেয়ে জীবন রক্ষা করা নিশ্চয় সম্ভব নয়। দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাজারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি তথাকথিত মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের অবসান ঘটানো। পাশাপাশি টিসিবিকে শক্তিশালী করে ব্যবসায়ীদের একচ্ছত্র প্রভাব বলয় থেকে বাজারব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই বাজারব্যবস্থায় স্থিতি ফিরে আসবে বলেই মনে করি।

মাহজাবিন আলমগীর : শিক্ষক ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়