টিআইবি : ড. ইউনূসের মামলা বিচারিক শুদ্ধাচার ও স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা

আগের সংবাদ

নাশকতা উপেক্ষা করেই ভোট উৎসব : স্বচ্ছ ভোটগ্রহণে প্রস্তুত ইসি, দেড়শ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা : ডিসেম্বরে ৫১২ জন নিহত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বেপরোয়া গাড়ি চালনা, ট্রাফিক আইন মান্য না করাসহ নানা কারণে সড়কে মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত দীর্ঘ হচ্ছে। নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার ৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে ৫১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৭৯৩ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৯ নারী ও ৬৪টি শিশু। এ ছাড়া ৭১ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। একই সময়ে ২১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৩৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ১৯ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৬ জন, যা ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত মাসিক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বরে দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এসব সড়কের ধরন বিশ্লেষণে জানা গেছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬২টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৩৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৭৭টি গ্রামীণ সড়কে ও ৩৭ শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী ৫ লাখের বেশি ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। কাজেই মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বাসে সিট বেল্ট বাঁধার ব্যবস্থা, হেলমেট ব্যবহার কম থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও প্রাণহানি ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের নানা বাধা ও পুরনো পদ্ধতিতে এই আইন প্রয়োগের ফলে এই সেক্টরে কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশ সীমিত আকারে আইনের প্রয়োগ করলেও সারাদেশে অনেকটা স্থবির অবস্থা রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো। কিন্তু কোনো সরকার এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে বলে মনে হয় না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়