চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণা রহমান

আগের সংবাদ

বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর ইসি : তিন শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ > কয়েকজনকে জরিমানা > মামলা ৩ প্রার্থীর বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

ফুল রপ্তানি বদলাতে পারে দেশের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৌন্দর্যে আর সৌরভে মন জুড়িয়ে নেয় যে জিনিসটা, তার নাম ফুল। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। প্রকৃতিতে যা কিছু শুভ ও সুন্দর, তার মাঝে ফুলকে অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন এই ফুল চাষই হয়ে উঠে জীবন নির্বাহের প্রধান মাধ্যম, তখন অর্থনীতির চাকা তো ঘুরে যাবেই।
যশোরের ছোট্ট উপজেলা ঝিকরগাছা। এই উপজেলার একটি গ্রামের নাম গদখালি। যার অর্থনীতিজুড়ে এখন ফুলের সৌরভ। ফুল চাষকে কেন্দ্র করে এখানকার বেশির ভাগ মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গত ২০ বছর আগেও যারা পরিবার নিয়ে একসঙ্গে দুই বেলা খেতে পারত না, তারাই এখন ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় এই গদখালির ফুল। গদখালিকে বলা হয়ে থাকে ফুলের রাজধানী।
১৯৮৩ সালে ৩০ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুল চাষের মধ্য দিয়ে আমাদের বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন শুরু হয়েছিল। বাড়ির উঠান কিংবা ছাদের কোনায় টবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই ফুল। কিন্তু এখন শৌখিন উৎপাদকের গণ্ডি পেরিয়ে ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।
অর্থনীতির বুকে কুঁড়ি হয়ে ফুটেছে এই ফুল চাষ। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গøাডিওলাস, টিউলিপ, রজনীগন্ধা, জারবেরাসহ অনেক ফুল চাষ হচ্ছে এখন আমাদের দেশে। আমাদের দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭০ শতাংশই মেটায় গদখালির এই ফুল। সারাদেশ তো এখনো পড়েই আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০২২-এ ৩২ হাজার টনের বেশি ফুল ফুটেছে আমাদের দেশে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির তথ্য বলছে, আমাদের দেশে দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার রয়েছে। একসময় গাঁদা, গোলাপ চাষ হলেও এখন ১৫-১৬ ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে আমাদের দেশে। রাজধানী ঢাকার বাজার ভরে আছে হরেক রকমের ফুলে। একসময় এই ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। আর এখন এই ফুল নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ফুল রপ্তানির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১২ হাজার টাকা, ১৯৯৪-৯৫ সালে ১৬ হাজার টাকার ফুল রপ্তানি হলেও ২০০৫ সালে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ কোটিতে দাঁড়ায়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ফুল রপ্তানি হয়েছিল ২৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকার মতো। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৬২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এভাবেই ফুল চাষে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সক্ষম হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে এখন আমাদের দেশে। একটি গবেষণা বলছে, সারা বিশ্বে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ফুলের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার ধরার মতো সুযোগ আছে আমাদের দেশের। এই সুযোগকে এখনই কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। আমাদের এই ফুল মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ভারত, ইতালি, চীন, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও ফ্রান্সে রপ্তানি হচ্ছে। সুনাম কুড়াচ্ছে আমাদের দেশ। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে। শুধু শীতকাল কিংবা বসন্তকালই নয়, বছরজুড়ে এখন ফুলের চাষ হয়। কিন্তু এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাহিদা কম থাকায় বিক্রির থেকে নষ্ট হয় বেশি। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত থাকে চাষিদের সুখের দিন। ফুল যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায় পাশাপাশি বাইরেও রয়েছে ফুলের বিপুল চাহিদা। আমাদের অর্থনীতিকে আরো বিকশিত করতে ফুলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ব্যাপক সম্প্রসারণ করতে হবে। পাশাপাশি ফুল যেন নষ্ট না হয়ে যায়, সে জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ফুল চাষিদের। যাতে তারা অনেক দিন ফুল সংরক্ষণ করতে পারে। ফুল চাষকে যদি আরো সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবনের চালিকাশক্তি সচল হবে। বাড়বে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও।

আইরিন হাসান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়