চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণা রহমান

আগের সংবাদ

বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর ইসি : তিন শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ > কয়েকজনকে জরিমানা > মামলা ৩ প্রার্থীর বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

নির্বাচনের আইন ও বিধি লঙ্ঘনের পরিণতি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কিছুটা অসুস্থতার কারণে গত তিন দিন চার দেয়ালে আবদ্ধ। সময় কাটছে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে সখ্য সৃষ্টির মাধ্যমে। এসব মিডিয়ায় এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে নির্বাচনের খবরাদি। তিন দিনের খবরাদির বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গায় প্রার্থীরা বা তাদের সমর্থকরা এক বা একাধিক আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তারা প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করছে, বাড়ি-ঘরে বা নির্বাচনী ডেরায় অগ্নিসংযোগ করছেন। আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার খবরই বেশি। জানা গেছে, হানাহানিতে একজনের জীবনহানি ঘটেছে, বহু জায়গায় নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কে ভুগছেন। তবে নির্বাচন কমিশন হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা শোকজ নোটিস জারি করেছে, তবে শোকজের জবাবদান প্রক্রিয়ার কোথাও কোথাও তারতম্যের সূত্র ধরে স্বয়ং অভিযুক্তের মনেও নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষেত্রভেদে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বিধি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সহিংসতা রোধে প্রচণ্ড বাক্যবাণ বর্ষণ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাধিকবার উচ্চারণ করেছেন, নির্বাচনকালে কোনো কেন্দ্রে একটি অনিয়মও পরিলক্ষিত হলে সে কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে। সেটা নিঃসন্দেহে তার ও তার কমিশনের সদিচ্ছার প্রকাশ। তবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বসে না থেকে এর আগে অবাঞ্ছিত আচরণ কী কী হতে পারে বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিলে কাক্সিক্ষত ফল লাভ হতে পারে। পুলিশ প্রশাসন ইতোমধ্যে অন্তত একটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এ জাতীয় ব্যবস্থা যদি অনেক ক্ষেত্রে নিতে হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের অন্য কোনো জটিল ও কঠিন কাজে নিয়োগ শিথিল হবে। তার চেয়ে ভালো পদক্ষেপ হবে অভিযুক্ত প্রার্থীকে বা তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করা। নির্বাচন কমিশন যে তা করতে পারে, বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। ইত্যবসরে কমিশন আরো কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। তারা আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর প্রার্থিতাকে কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ দর্শাতে সশরীরে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে। তারপরও খবর আসছে ‘থেমে নেই সংঘাত, সহিংসতা’, আর এই সংঘাতটি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে রূপান্তরিত হয়ে যদি একটি আসনে নয়, ২২৪ আসনে ১৪৪ ধারা প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? এর চেয়ে ভালো হবে স্বয়ং প্রার্থীকেই দোষী সাব্যস্ত করা এবং তার সমর্থকদের যে কোনো প্রক্রিয়ায় এলাকা ছাড়া করা বা হাত গুটাতে বাধ্য করা। প্রার্থীর সমর্থকদের অপকর্মের জন্য প্রার্থীকে দায়ী করা যাবে না বলেই তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা ছাড়া করা গেলেও অভীষ্ট লক্ষ্যার্জন হতে পারে। এই কঠিন কাজটি প্রায় অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে কুপিয়ে হত্যা, গুলিসন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, হানাহানিতে অন্তত ৫৯টি নির্বাচনি এলাকায় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এসব এলাকার ওসিদের মনোভঙ্গি হচ্ছে ধরি মাছ না ছুঁই পানি কিংবা সাপও মারব না, লাঠিও ভাঙব না। যদিও কমিশন জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রেখেছে, আরো বেশ কিছু ওসিকে প্রত্যাহার বা বদলি করেছে। তবুও এই মনোভঙ্গির কারণে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারির অভাব হবে না। লক্ষণীয় যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে নির্বাচন প্রয়োজনীয় তারা আগেও তা বলবত রেখেছেন।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বেশি হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে; এ কথার প্রতিধ্বনি করেছেন অন্তত দুজন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিবও। এর সঙ্গে যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একই কথা উচ্চারণ করতেন, তাহলে ভুল পথে চলা প্রার্থী ও তার সমর্থকরা কমিশনকে বিষদাঁতবিহীন ঢোঁড়া সাপ মনে করত না। তবে দুই প্রার্থীর নামে শোকজ জারির পর অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উক্তিটি আগেই তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু সে দিনটি আসার আগেই যা ঘটতে পারে সে সম্পর্কে অগ্রিম ব্যবস্থা প্রয়োজন। এটা সত্যি, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পূর্বে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রশ্নবোধক। তবে ত্বরিত ব্যবস্থা না নিলে বা শুধু শোকজ, জরিমানা, কিংবা ১৪৪ ধারা জারি জাতীয় লঘু ব্যবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। তাই অভিযুক্ত প্রার্থীকে অন্তত এলাকার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া যেতে পারে। দুষ্কর্মে নিয়োজিত তার সহযোগীদের জেলে পাঠালেও কাক্সিক্ষত ফল মিলবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে আইন ভাঙাই আইনে পরিণত হয়ে যাবে। শেষকালে ২২৪ নির্বাচনী এলাকায় ১৪৪ জারি করেও পরিস্থিতির সামাল দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই সময়ের এক ফোঁড় অর্থাৎ প্রার্থিতা বাতিলটাই হবে অসময়ের ৯ ফোঁড়ের সমান। জনগণ প্রার্থিতা বাতিলই চাইছে। একটি-দুটি প্রার্থিতা বাতিলেই সর্বত্র সামাল সামাল রব উঠবে এবং প্রার্থী আর তার সমর্থকদের আচরণে শান্তশিষ্টতা ও আইনানুগতা দেখাবে নিশ্চিত। প্রার্থিতা বাতিল অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ। প্রয়োজনে সেই কঠিন ও কঠোর মনোভঙ্গি বাস্তবে রূপায়িত করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য করাটাই হবে কমিশনের যোগ্য ভূমিকা।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়