চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণা রহমান

আগের সংবাদ

বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর ইসি : তিন শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ > কয়েকজনকে জরিমানা > মামলা ৩ প্রার্থীর বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

দ্রব্যমূল্যের বাজার : নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এর দ্বারা এমন বোঝায় যে প্রথমে তো একজন ব্যক্তি দুর্বল অথবা মৃত্যুসম অবস্থা, তার উপরে আরো বাড়তি কোনো অত্যাচার। একজন মৃতপ্রায় মানুষকে যখন আরো অত্যাচার চাপিয়ে দেয়া হয় তখন তার অবস্থা কেমন হবে। নিঃসন্দেহে অসহ্যনীয় হবে। তেমনি অবস্থা দাঁড়িয়েছে দেশের মানুষের বর্তমানের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে। একে তো দারিদ্র্য তাদের নিত্যসঙ্গী তার মধ্যে যেখানে মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতেই রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম দিনকে দিন হু হু করে বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, আটা, গ্যাস, চিনি, পেঁয়াজ, মাছ, ডিমসহ সব কাঁচামাল-সবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো দ্রব্য বাদ নেই যার দাম বাড়েনি। শীত মৌসুমে সবজির বাজারজুড়ে রমরমা অবস্থা এবং সহজলভ্য হওয়ার কথা থাকা সত্ত্বেও সবজির দামও যেন আকাশচুম্বী।
সাধারণ মানুষের অথবা অতি দরিদ্র মানুষের আয়ের সঙ্গে যেন কিছুতেই ব্যয় মিলছে না। নিত্যপণ্যের লাগামহীন চড়ামূল্য হওয়ায় তাদের যেন হতাশা আর ক্ষোভের অন্ত নেই। যে পণ্যের দাম একবার বেড়েছে তো বেড়েছেই। তা আর কমেনি।
পক্ষান্তরে মানুষের আয়ের কোনো বৃদ্ধি না থাকায় হিমশিম খাচ্ছে সবাই। এমন অনেকেই রয়েছে যারা বাজারে পণ্য কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসছে। পণ্যের লাগামহীন দাম শুনে পণ্য না কিনে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরছে। চাকরিজীবী বা মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া কর্মজীবীরও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে যেন হতাশার কমতি নেই। দেশের অতি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ওপর এক প্রকার বেনামি অত্যাচার নিয়ে হাজির হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
সাধারণ মানুষ অসাধারণ হতে পারছে না বলে তাদের কষ্টের সীমারেখা নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জাঁতাকলে অসহায় মানুষের দুঃখের কথা বলারও কোনো জায়গা নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় মানুষদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বেঁচে থাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের কাছে যেন এক নতুন অভিশাপ। প্রাকৃতিক ভয়াবহ দুর্যোগের কথা শুনলে মানুষ এত ভয় পায় না যতটা দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে পাচ্ছে।
খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার ও বেঁচে থাকার মাধ্যম। জীবন ধারণের জন্য ও সুস্থভাবে চলাফেরা করার জন্য পুষ্টিসম্পন্ন ও সুষম খাবার গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। যদি খাদ্য ঠিকঠাক কেউ গ্রহণ না করতে পারে তখন তার কাজকর্ম কীভাবে ঠিকঠাক মতো চলবে। বর্তমানে নিত্যসঙ্গী দারিদ্র্যের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে যে কোনো প্রকারের গোশত। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জনগণকে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিয়েছে, শত চেষ্টা করেও যেন বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এদিকে মধ্যবিত্তদের যেন দুঃখের অন্ত নেই। তারা না পারছে লোক-লজ্জার ভয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে না পারছে বাজার থেকে চড়া মূল্যে শান্তিমতো পণ্য কিনতে। উন্নয়নের জোয়ারে সারাদেশ ভেসে গেলে বা উড়ে গেলেও জনগণের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ঠিকমতো খাবারই পাচ্ছে না। তাদের সাধ্যের বাইরে পণ্যের দাম থাকায় মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য নিরাপত্তাই যেখানে বিঘœ হচ্ছে, সেখানে উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে শুধু চোখের শান্তি অনুভব করে কী হবে বলে জনমনে-মুখে প্রায়ই এ কথার আলোচনা হচ্ছে। আগে তো খেয়েদেয়ে বেঁচে থাকা, তারপর আরো অন্যান্য বিষয় বা ভোগ-বিলাস।
বর্তমান অবস্থা আরো দীর্ঘতর হলে দরিদ্র ও হতদরিদ্রদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়া হচ্ছে বাজারে। বাজারের এ অস্থিরতা দূর করতে হলে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বন্ধ করা জরুরি। ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা অর্জনের আসক্তি পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে আরো জোরদার করছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর হস্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের আরো সচেতন হতে হবে।
অপর আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, দেশে ঈদ উপলক্ষে বা কোনো বিশেষ সর্বজনীন দিন উপলক্ষে, বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাত, বিভিন্ন নির্মাণকাজ চলাকালে যাতায়াতের অজুহাতে, অভ্যন্তরীণ হরতাল-অবরোধ চলাকালে, অতিবৃষ্টি ও খরার মতো দুর্যোগের আশঙ্কা থাকলে বা কোনো দুর্যোগ দেখা দিলেই এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এর সমাধান হিসেবে সে জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও পচনশীল খাদ্যপণ্যগুলো সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করতে হবে। গবেষণায় দেখা যায়, সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ খাদ্য পণ্য নষ্ট হয়। আধুনিক স্টোরেজ পদ্ধতিতে হিমাগারে খাদ্যজাতীয় পণ্য ও দ্রব্যাদি সংরক্ষণ করলে উল্লেখিত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাদ্য পণ্যের জোগান স্বাভাবিকভাবে দেয়া সম্ভব হবে।
এত সব সমাধান থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এর মূল কারণ হিসেবে বলা যায় কর্তৃপক্ষের তদারকিতে অনীহা বা ফাঁকিবাজি ও সুনজর না থাকা। অথচ তারাও এ সমস্যাটির শিকার অবশ্যই হচ্ছেন। কঠোর আইন প্রণয়ন যেমন প্রয়োজন তেমনি তার বাস্তবায়ন তার থেকে আরো বেশি প্রয়োজন। আইনের যথাযথ প্রয়োগই পারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে নিম্নগামী করতে। কারণ আইনের ভয় নেই এমন ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যদিও ইতোমধ্যে আমরা শুনি যে বাজার মনিটরিংয়ে অমুক ব্যবসায়ী তমুক ব্যবসায়ীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রমাণ সমেত ধরেছে বা আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠিকই নিজেদের বাঁচিয়ে নিচ্ছে, পরবর্তীতে অসাধু কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আর সে কারণে কঠোর পদক্ষেপ আরো জোরদার করা এবং বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণের হাত কঠোর আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব। নতুবা আইন প্রণয়ন পর্যন্ত সীমাবদ্ধতা কখনই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। জনমানুষের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর ভারসাম্যসম্পন্ন জীবনযাপন নিশ্চিতকরণে দ্রব্যমূল্যের নিম্নগামিতা অত্যাবশ্যকীয়। সুতরাং ব্যবসায়ীদের ব্যক্তির সচেতনতা অবলম্বনের পাশাপাশি সততা ও সাধুতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলে আশা করা যায় দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সাইশা সুলতানা সাদিয়া : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়