চট্টগ্রাম অফিস : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর দিন থেকে তিন দিনে সাত স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন একই আসনে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা বলছেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ইয়াবা কারবারের হোতা সামশুল হক এখন মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপি-জামায়াতের সুরে কথা বলছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হুইপ শামসুল হক বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন থেকে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা ঈগল প্রতীকের প্রচারণায় বাধা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘গত সোমবার পটিয়ার হল ওকে নামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণার অফিস উদ্বোধন, সংবাদ সম্মেলন ও কর্মী সমাবেশ ছিল। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ইন্দ্রপুল, হাবিলা সদ্বীপের পাঁচুরিয়া এলাকায় ওই রাতে ফকিরা মসজিদ বাজারে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর এবং কয়েকজন কর্মী আহত, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শান্তিরহাট, কুসুমপুরা এলাকায় ক্যাম্প ভাঙচুর, বাকখাইন এলাকায় প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুর, ওই রাতে মেহেরআটিতে এক সমর্থককে মারধর এবং সবশেষ বুধবার কাশিয়াইশে গণসংযোগে হামলা করে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। নৌকার প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে উসকানি ও বিষোদগারমূলক বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন সভা-সমাবেশে। আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা, তাদের মাঠে নামতে না দেয়ার নির্দেশমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তার সঙ্গে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ সুবিধাভোগী শ্রেণি জুটেছে। নিজে শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার গণসংযোগে সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি ও ঢল দেখে মোতাহেরুল ইসলাম হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তাই আমাকে ঠেকাতে তিনি সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন।
এদিকে হুইপের কথিত পি এস এজাজের ইয়াবা কারবারসহ এলাকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হুইপ জানান, এজাজ তার পিএস নন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি থাকলে দুদকে অভিযোগ দেয়ারও অনুরোধ করেন তিনি। হুইপ বলেন, ‘বিগত দিনে যাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হয়নি, কিংবা যারা সুযোগ পাননি, তারাই মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে গিয়ে ঈগল প্রতীকের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, গত ১৫ বছর সামশুল হক চৌধুরী পটিয়ার এমপি ছিলেন। এ সময়ে তিনি আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সামশুল হক লীগ তৈরি করেন। তিনি দুর্দিনের ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন দলের হাইব্রিডদের দলে ভিড়িয়েছেন। ওই হাইব্রিডরাই সামশুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে পটিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ইয়াবা কারবার, বালুর ব্যবসা করেছেন। এসবের বিরোধিতা করতে গিয়ে দুর্দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। এখন হুইপ ক্ষমতাহীন হওয়ার পর মূলত হুইপের মামলা হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তরাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। হুইপ সামশুল এখন বিএনপি-জামায়াতের সুরে কথা বলছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, জেলা পরিষদের সদস্য দেবব্রত দাশ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ নবী চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান নাছির আহমদ, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজন চক্রবর্তী, আবু সালেহ চৌধুরী, হুইপপুত্র নাজমুল হক সারুন, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর খালেদ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।