ঢাকা জেলার সোয়া ৫ লাখ শিশু ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাবে আজ

আগের সংবাদ

রেললাইনে ভয়াবহ নাশকতা : গাজীপুরে ইঞ্জিনসহ ৭ বগি লণ্ডভণ্ড > নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক > তিন তদন্ত কমিটি গঠন

পরের সংবাদ

বুদ্ধিজীবী নিধন : ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বুদ্ধিজীবী নিধন বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা এই সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। পরাজয়ের সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে পাকবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদদের স্মরণে এ দিনটি আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করি। এ দেশের আপামর জনতা, মুক্তিযোদ্ধা, গেরিলা ও যৌথবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দিশাহারা হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে পরাজয় অবধারিত। স্বাধীনতার পরপরই দেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য এক জঘন্য ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের সহযোগিতা করে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলশামস। বাঙালিদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত দিক দিয়ে পিছিয়ে দেয়ার জন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার ঘৃণ্য নীলনকশা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা। এ দেশের খ্যাতিমান লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসকসহ জ্ঞানীগুণী মানুষদের নিজ বাসভবন থেকে ধরে এনে নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান নির্ণয় এবং পাকিস্তানি দোসরদের কাছে তাদের ধরে আনার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যারা এ মাটিরই সন্তান ছিল। তারা সেদিন এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে পশ্চিম পাকিস্তানের যে কোনো অন্যায়-অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা। এই কারণে পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের কাছে যথেষ্ট বিরাগভাজন। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২৫ মার্চ রাত থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যা করা শুরু করে দিয়েছিল। বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বেই প্রণীত হয়। পাকবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশনায় নীলনকশা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার বশির, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেজাজী, মেজর জহুর, মেজর আসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির ও ক্যাপ্টেন কাইউম। এছাড়া আধাসামরিক আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা এই ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। হাত-পা বেঁধে ও চোখে কালো কাপড় পেঁচিয়ে বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। পরবর্তীদের এসব বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়, যা চিহ্নিত করা তখন কঠিন হয়ে পড়ে। ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি, আলকেদি বধ্যভূমি, কালাপানি বধ্যভূমি, রাইনখোলা বধ্যভূমি, শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি, হরিরামপুর গোরস্তানসহ কয়েকটি স্থানে কয়েক শতাধিক ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। এক তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। যাদের মধ্যে শিক্ষক ছিলেন ৯৯১ জন, সাংবাদিক ছিলেন ১৩ জন, চিকিৎসক ছিলেন ৪৯ জন, আইনজীবী ছিলেন ৪২ জন এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার ছিলেন ১৬ জন। শুধু ১৪ ডিসেম্বর রাতেই ২০০-৩০০ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা। ‘ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি’ ২৯ বছর ধরে সারাদেশে বধ্যভূমি খুঁজে চলেছে। সারাদেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করা গেছে। ১০-১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। জাতির বিবেক এসব শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মরণে আমরা প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করি বিনম্র শ্রদ্ধায়।

এস ডি সুব্রত : কবি ও লেখক, সুনামগঞ্জ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়