স্থাপত্যকলা মানে যে শুধু বাড়ি বানানো তা কিন্তু নয়, জীবনযাপনের পুরো বিষয়ই এখানে সম্পৃক্ত। তাই একজন স্থপতিকে ভাবতে হয় অনেক গভীর থেকে। যারা আর্কিটেকচারে পড়াশুনা করছেন তাদের কাছে খুব পরিচিত শব্দ হচ্ছে ‘ফয়ার’। একজন স্থপতি কীভাবে কৌতুহলী মুন্সিয়ানায় বাড়ির প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে অন্দরমহলের অপ্রয়োজনীয় ফাঁকা জায়গাগুলোকে সুন্দর করে তোলেন তাই ফয়ারের বিষয়। নতুন ভাবনার অনুপ্রেরণায় যা দৃশ্যমান হয় নান্দনিকতায়।

সোহেল শামসুদ্দোহা, স্থপতি
বাসার মুল দরজায় প্রবেশ করে যে স্থানটি দেখতে পাওয়া যায় পুথিগত অর্থে তাকে ফয়ার বলে। অন্দরে প্রবেশ করার উষ্ণ অভ্যর্থনা ফয়ার স্পেস থেকেই শুরু হয়। আসলে ফয়ারের জায়গাটা এমন যাকে খুব কৌশলী হয়ে যথাযথও ভাবে ব্যবহার করতে হয়। কারণ ফয়ারের জায়গাটা আসলে অন্দরের অন্য জায়গা থেকে ভিন্ন। কারণ চাইলেও সহজে কাজে লাগানো যায়না এই ফয়ারের জায়গাটাকে। কিন্তু দক্ষতার সাথে ডিজাইন করে আবার অন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও পরিনত করতে পারেন এই অংশটিকে। বাসার আকার এবং ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে মুলত ফয়ারের সাইজ নির্ভর করে।
বাসার আকার একটু বড় হলে অনেক সময় একটি আলাদা রুমও ফয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে আবার একটু ছোট বাসা হলে প্রবেশের মুখের জায়গাটিই ফয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ফয়ার একটি বাসার বসবাসকারীদের রুচিবোধ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দিয়ে থাকে। তাই ফয়ারকে গুছিয়ে রাখা গৃহসজ্জার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
ফয়ার কিভাবে সাজাবেন? এটা অবশ্যই নির্ভর করবে ফয়ারের আকার, অবস্থান এবং অবশ্যই আপনার ইচ্ছার উপর। কখনও একটি সাধারন ফুলদানি, জুতার বাক্সের সাথে বসার জন্য ছোট একটি টুল বা দুই-একটি ঝুলানো লাইট, বড় ফ্রেমের ছবি বা আয়না ইত্যাদি দিয়ে ফয়ার সাজানো যায়।
বাড়িতে ঢোকার সময় বা বের হওয়ার সময় কি কি প্রয়োজন হতে পারে, বাইরে থেকে অতিথি এলে তার কি প্রয়োজন হতে পারে এবং সর্বোপরি সারাদিন পর বাড়ি ফিরে কি দেখলে আপনার হালকা লাগবে, এসব ভেবেই একটি ফয়ার সাজানো উচিত বলে আমরা মনে করি।
আপনার ফয়ার যদি অনেক বড় হয় তবে আপনি সেখানে জুতা রাখার কেবিনেট, বসে জুতা পরার জায়গা রাখার পাশাপাশি সুসজ্জিত একটি কোণ তৈরি করতে পারেন। এতে প্রতিবার বাড়িতে ফিরেই যেমন আপনি আনন্দিত হবেন, তেমনি আপনার অতিথিদেরও ভাল লাগবে। এছাড়া আপনি ছাতা, বাজারের ব্যাগ, খবরের কাগজ রাখার জায়গা দরজার কাছেই করে নিতে পারেন। অনেক সময় আমাদের শহুরে ফ্লাটগুলোতে বাড়ির বা অতিথির গাড়ির ড্রাইভার বা দারোয়ানদের খাওয়ার জায়গার অভাব থাকে।
ফয়ারে একটি ছোট বসার জায়গা, একটি ফ্যান ও একটি ফোলডিং টেবিল রাখলে সহজেই তাদেরকে আরামে বসতে দেওয়া সম্ভব।

অনেক বাড়ির নকশায় ফয়ার থাকলেও আকারে এতই ছোট হয় যে এক চিলতে এই জায়গায় কোন ফার্নিচার রাখার কথা তখন ভাবাই যায় না। এসব ক্ষেত্রে দেয়ালকে কাজে লাগান। আপনি দেয়ালে একটি আয়না লাগিয়ে নিন। দেখবেন জায়গাটি বড় দেখাচ্ছে। যদি জানালা থাকে, তাহলে জানালার অপর পাড়ে আয়নাটি লাগান। দিনের আলো প্রতিফলিত হয়ে সুন্দর ও আলোকিত পরিবেশ তৈরি হবে। কিছু গাছ রাখুন, সাথে ছোট একটি নকশা করা টুল অথবা সম্ভব হলে একটি স্টো, দিনগুলো সহজ ও সুন্দর হবে।
আবার যে সব বাড়িতে ফয়ার নেই, ড্রয়িং রুম বা ডাইনিং রুম দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, সেখানে ও মূল দরজার সামনে একটি উঁচু ফার্নিচার বা ফোলডিং পার্টিশন ব্যবহার করে আপনি সহজেই একটি ফয়ার তৈরি করে নিতে পারেন। এরপর এই আড়ালের এপিঠ ওপিঠ আপনার প্রয়োজন মতন সাজিয়ে নিয়ে নিশ্চিত করতে পারেন ঘরের প্রাইভেসি ও সৌন্দর্য দুটোই।
ঘরের যেকোনো অংশের মতই ফয়ার সাজানোর ও কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। আপনার আনন্দ, ইচ্ছা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি আপনার ঘরের প্রবেশ পথ সাজিয়ে নিন।

মনে রাখবেন

ফ্ল্যাট বাড়ি কিংবা এপার্টমেন্ট প্লানিং -এ ফয়ার স্পেসটা বেশ সরু থাকে। ফলে দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে হবে জায়গাটি। কম উচ্চতা এবং দৈর্ঘ্যের সু ক্যাবিনেট অথবা কনসোল টেবিল ব্যবহার করা যায়। সেই ক্ষেত্রে বড় সাইজের একটা ওয়ালে মিরর ঝুলালে জায়গাটার ব্যাপ্তি কিছুটা হলেও বড় মনে হবে। খুব নরম আলো আর হালকা নকাশার সিলিং করলে এমনিতেই শোভা বেড়ে যাবে জায়গাটির। এছাড়াও শখের কোনও পেইন্টিং, ল্যাম্পশেড, শৌখিন জিনিসপত্র ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র : ভোগ লিভিং ও বেটার হোম