বিজিএমইএ নির্বাচন মার্চে

আগের সংবাদ

জাপার আসনে নৌকা প্রত্যাহার! ৩০ থেকে ৩৫ আসন প্রত্যাশা জাতীয় পার্টির > চলছে দেনদরবার

পরের সংবাদ

দেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় পথিকৃতের জীবনাবসান : জাতীয় অধ্যাপক ডা. মালিক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক। তিনি ছিলেন একাধারে চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক। দেশে হৃদরোগ চিকিৎসাসহ তামাকবিরোধী আন্দোলনের এই অগ্রসৈনিক যখন যে বিষয়ে কাজ করছেন সেখানেই রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। সেই বর্ণিল জীবনের সমাপ্তি ঘটল ৯৪ বছর বয়সে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নিজের গড়া ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রখ্যাত এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, নানা জটিলতার কারণে ডা. মালিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।
ঢাকায় ডা. আব্দুল মালিকের তিনটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে, বাদ আসর শ্যামলী শাহী জামে মসজিদে এবং বাদ মাগরিব মিরপুর-২ নম্বরে হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে। আরো একটি জানাজার পর আজ বুধবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পশ্চিমবাগে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আব্দুল মালিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি বলেছেন, ডা. মালিক বাংলাদেশের হৃদরোগ চিকিৎসার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি একাধারে একজন সফল চিকিৎসক, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক। মানব হিতৈষী কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি নানাভাবে পুরষ্কৃত এবং প্রশংসিত হয়েছেন। বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ডা. মালিকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ডা. মালিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শোকবার্তায় তিনি বলেন, অধ্যাপক মালিক কেবল বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয়, বরং উপমহাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বর্ষীয়ান উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। অধ্যাপক মালিকের মতো এরকম একজন মহান ব্যক্তিত্বের মৃত্যুজনিত ক্ষতি কখনোই পূরণ হবার নয়। তিনি ছিলেন আমাদের সবার জন্য জাতীয় সম্পদ।
এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ

মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, জাতীয়

পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)সহ বিভিন্ন চিকিৎসক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন।
১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল মালিক। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তাকে সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) পেশোয়ারে কর্নেল আজমিরের কাছে মেডিকেল স্পেশালিস্টের যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে সরকার তাকে বিলেতে পাঠায় উচ্চশিক্ষার জন্য। এরপর ১৯৬৪ সালে তিনি এমআরসিপি পাস করেন এবং হ্যামার স্মিথ হসপিটাল অ্যান্ড পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুল, লন্ডন থেকে কার্ডিওলজিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। তিনি ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটির সদস্য ছিলেন। চিকিৎসা খাতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। আর ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসাবে নির্বাচিত হন। সর্বজনশ্রদ্ধেয় এ চিকিৎসক ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভাপতিসহ জাতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। দেশে তামাকবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
ডা. মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নেসা খাতুন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। তার মেয়ে ডা. ফজিলাতুন্নেছা মালিক ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ঢাকার কার্ডিলজি বিভাগের অধ্যাপক। তার ছেলে মো. মাসুদ মালিক একজন ব্যবসায়ী এবং অপর ছেলে মো. মনজুর মালিক বর্তমানে কানাডায় কর্মরত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়