কাগজ প্রতিবেদক : মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতেই দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেছেন, তাদের এই বদলির কারণে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। যার বদলি হয়ে আসবেন তারা দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল শনিবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। মাঠে আছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট, সেই সঙ্গে কাজ করছে র‌্যাব, বিজিবি, আর্মড ফোর্স, পুলিশ, আনসারসহ গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা। টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার কোনো সমস্যা হবে না। সব ঠিক আছে।
সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কমিশন মনে করে, সেটার প্রয়োজনীয়তা আছে তাহলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এ মুহূর্তে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই।
ওসি ও ইউএনওদের বদলি সরকার চেয়েছে নাকি আপনারা চেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন চেয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং অঞ্চল সফরে আমাদের কমিশনারদের ফাইন্ডিংসের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন বসে গত ৩০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন অনুভব করেছে, এ বদলি দরকার। সব তথ্য তো ওপেনলি বলা হয় না। নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায় থেকে যেসব তথ্য পেয়েছেন, বিভিন্ন প্রার্থী কিংবা বিভিন্ন কোয়াটার থেকে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত।
একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, বড় আকারে রদবদল করা হলে পুলিশ-প্রশাসনে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে, এর দায়ভার ইসি কেন নেবে? আর একটা কথা বলেছিলেন, ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ১০০ কোটি টাকা কেন ব্যয় হবে, তাহলে ওই কমিশনারের কাছে জানতে চাইতে হবে। কমিশনে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমি সেটা বলতে পারব না।
ডিসি-এসপিদের বদলির কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই। পরবর্তী সময় যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তখন বলতে পারব। যদি নির্বাচন কমিশন বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে এটা হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
রদবদলের ক্ষেত্রে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ আছে কিনা?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি নেই। একজন কর্মচারী যে উপজেলা বা জেলায় দায়িত্ব পালন করুক না কেন, তিনি সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন।
কতগুলো দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির এই অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, আমাদের নিবন্ধিত যে ৪৪টি রাজনৈতিক দল আছে, তার মধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জেডি পিপলস নামে একটি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, যেটি আমাদের নিবন্ধিত দল নয়। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে দেখা গেছে ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি এবং একটি স্থানে দুইবার জমার দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, আওয়ামী লীগ থেকে ৩০৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। যে পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি, সেখানে কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, সেটা বাছাইয়ের সময় দেখা যাবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে মেসেজ দিয়েছি। এটা পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের ও আমাদের রিটার্নিং অফিসারদের বলেছি। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এসেছিলেন, সব বিষয়ে তাদের মেসেজ দেয়া হয়েছে। কেউ যেন নিরাপত্তার ঘাটতিতে না ভোগে। এরপরও যদি কারও গাফিলতিতে কিছু হয়, তার বিরুদ্ধে ইসি খুব কঠিন ব্যবস্থা নেবে।
সব প্রার্থীকে বডিগার্ড দেয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো সম্ভব হবে না। এত বডিগার্ড দেয়া যাবে না। তবে, নিরাপত্তার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা যেন তা নিশ্চিত করতে পারে, সেটাই আমাদের কাম্য।