মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে পরিচয় বদল, ৩০ বছর পর গ্রেপ্তার : কেরানীগঞ্জে বাবা-ছেলে হত্যা

আগের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে নমনীয় আ.লীগ : ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি বাড়ানো প্রধান টার্গেট > সরকার চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

পরের সংবাদ

নারীর প্রতি সাইবার সহিংসতা বেড়েছে ১৩ শতাংশ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাবে দেশে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। একশন এইড বাংলাদেশের গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক বছরে এই সহিংসতা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ২০২২ সালে ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার শিকার হন, যা ২০২১ সালে ছিল ৫০ দশমিক ১৯ শতাংশ। ৬৩ শতাংশ শিশু-কিশোর বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় পর্নোগ্রাফিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। সাইবার ক্রাইম এওয়ারনেস ফাউন্ডেশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ক্রিমিনাল কোর্টে এসব অভিযোগের বিচার হয়েছে। কাজেই নারীরা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাননি। ৮০ শতাংশ ভুক্তভোগীই আইনের আশ্রয় নেন না।
গতকাল শনিবার ‘নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা : বাস্তবতা ও করণীয়’ বিষয়ে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব বিষয় উঠে আসে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাইবার ট্রাইবুনাল, ঢাকার বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এবং বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল আমেনা বেগম, বিপিএম। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সভাপতি ও সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা; বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার; সাইবার ক্রাইম এওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ এবং বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের বক্সার তামান্না হক, নিঃসঙ্কোচ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ফাহিম এবং শিশু কিশোর ক্রিকেট উইমেনস একাডেমির টিম ম্যানেজার লামিয়া জালাল প্রমুখ। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ই-

মেইলের মাধ্যমে হয়রানি, সাইবার বুলিয়িং, সাইবার স্টকিং, সাইবার পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপবাদ, মরফিং, ই-মেইল স্পূফিং এবং নানা ধরনের সাইবার সহিংসতা ঘটছে। সাইবার অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো মূলত কাজ করে সেগুলো হলো- ভিকটিমদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলীর সহজলভ্যতা, ব্যবহারকারীদের অজ্ঞতা এবং উদাসীনতা, ভিকটিমের দায়, একজনের ব্যক্তিগত তথ্য অন্য প্রোফাইলের নিচে ব্যবহার, এবং প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে আইনি পদক্ষেপের ফাঁক।
শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, সাইবার জগৎ একটি মুক্ত জায়গা যেখানে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হবে। সোশাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এদেশে নেই। এরপরও বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিটিআরসির উদ্যোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৩৫ হাজার আপত্তিকর কনটেন্ট ফেসবুক থেকে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিভাবকদের শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার মনিটর করতে হবে, তাদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। তিনি এ সময় বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় বিটিআরসির নির্দেশ অনুসারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল গাইডলাইন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারদের থেকে সংগ্রহ করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
এ এম জুলফিকার হায়াত বলেন, সাইবার স্পেসে বেশির ভাগ নারী ভিকটিম হয় প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাবে এবং অপরাধ প্রমাণের জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকার কারনে অপরাধী মুক্তি পেয়ে যায়। বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহারের আগে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। ফেসবুক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেয়া থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকতে হবে। তিনি নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে একাধিক সিমকার্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমূহকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং টিকটক, ইমো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনি নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দেন।
আমেনা বেগম বিপিএম বলেন, মাঠপর্যায়ে ৬৫৯ টি পুলিশি থানা আছে। এসব থানার কেস তদন্ত কর্মকর্তাদের সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এতে ঢাকা শহরের চেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অভিযোগ না করার কারণে সহিংসতার ঘটনা বেশি হচ্ছে। পুলিশের সাইবার সাপোর্ট টিমে জনবল আছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ জন। সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে সাইবার সাপোর্ট টিমের জনবল বাড়াতে হবে।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সহিংসতার ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধরণ যুক্ত হচ্ছে, বর্তমানে সাইবার সহিংসতার বেড়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশকে নেতৃত্ব দানকারীদের সচেতনতা তৈরির কাজটা করতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার ক্ষেত্র শক্তিশালী না হলে বাংলাদেশ সাইবার দুনিয়ায় ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়