মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে পরিচয় বদল, ৩০ বছর পর গ্রেপ্তার : কেরানীগঞ্জে বাবা-ছেলে হত্যা

আগের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে নমনীয় আ.লীগ : ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি বাড়ানো প্রধান টার্গেট > সরকার চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস আজ : বহুমাত্রিক দূষণ-দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রতিবন্ধী মানুষ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : দীর্ঘদিন ধরে নানা দূষণে ভুগছে রাজধানী ঢাকা। এসব দূষণের তালিকায় রয়েছে- বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ এবং তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাসহ কর্মস্থলে দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এতে করে বাড়ছে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে সবাই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী নয়। বিভিন্ন দূষণের নেতিবাচক প্রভাবে মানুষ প্রতিবন্ধী হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা বা কর্মস্থলে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী জীবন যাপন করছেন। ধরন অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক, মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাক, বুদ্ধি এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ ভাগ। এর মধ্যে ৯৮ ভাগই বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিগ্রহের শিকার। প্রতিবন্ধীদের মাত্র ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কোনো না কোনো অর্থনৈতিক কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। জরিপের তথ্যে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধীরা আশঙ্কাজনক হারে পিছিয়ে আছে। কারিগরি শিক্ষাসহ শিক্ষার সুযোগ বাড়িয়ে প্রতিবন্ধীদের জনশক্তিতে রূপান্তর করে তাদের অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন তারা।
সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ৮ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। ৫৯ বছর কিংবা এর চেয়ে কম বয়সিদের প্রতিবন্ধীতার হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর ৭০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সিদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার ৪৭ শতাংশ। এই সমীক্ষার তথ্যও বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা করা হয়েছে ২৯ লাখ। তারা প্রতি মাসে ৮৫০ টাকা ভাতা পান।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি পুরুষের সংখ্যা বেশি। এই বয়সের পুরুষেরাই কর্মক্ষম। সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অনেকেরই হাত-পা কাঁটতে হয়, তারা তখন প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। পঙ্গুত্ব পরিবার ও সমাজের জন্য বোঝা, তাই প্রতিবন্ধিতা কমাতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি রোগীদের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ থাকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী।
অন্যদিকে গবেষকরা বলছেন, উচ্চমাত্রার দূষণ অটিজমের সম্ভাবনা দ্বিগুণ করে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে- বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের চাইতেও ভয়াবহ দূষণ হলো মোবাইল টাওয়ার, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও বিদ্যুতের লাইনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন (তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ)। যা মানুষের ব্রেন টিউমার, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, হৃদরোগ ও গর্ভপাতসহ অনেক জটিল রোগের কারণ। অর্থাৎ এই তিন ধরনের দূষণই অটিস্টিক শিশুর জন্মহার বৃদ্ধির পাশাপাশি মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির ডিজেবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেম (ডিআইএস) ডাটাবেইজে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮৯০ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের অধ্যাপক

ডা. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী বা যারা কাজ করতে একেবারে অক্ষম তাদের সরকারের ভাতার আওতায় আনতে হবে। তবে অন্য প্রতিবন্ধী যারা আছে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করতে হবে। এছাড়া দেশের সব মানুষকে বিমার আওতায় আনতে হবে, যাতে কেউ দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবন্ধী হলে বীমার আওতায় থাকতে পারে।
প্রতিবন্ধীদের সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে উইমেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট (ডাব্লিউডিডিএফ)। ডব্লিউডিডিএফের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি জানান, সরকার বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে ইতিবাচক পন্থায় কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এখনো নিজেদের অধিকার ও আইন সম্পর্কে অজ্ঞ। সচেতনতা ও সহযোগিতার অভাবে নানা স্থানে অবহেলিত হচ্ছে তারা। এদের অনেকে এখনো কর্মমুখী হতে পারেনি। স্বপ্ন ও সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করা গেলে তারাও দেশের সম্পদে পরিণত হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস আজ : এই প্রেক্ষাপটে আজ ৩ ডিসেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশেই দিবসটির সূচনা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণ, নিশ্চিত করবে এসডিজি অর্জন’। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি পালনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়