ঢাবি উপাচার্য : বিদেশিরা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায়

আগের সংবাদ

সিগন্যালের অপেক্ষায় তারা : ৮০ থেকে ১০০ আসনে জোট-মিত্রদের ‘ছাড়’ > ১৭ ডিসেম্বরের আগেই সমঝোতা

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামের ১৬ আসন : ৩০ স্বতন্ত্র প্রার্থী অধিকাংশই আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনের মাঠে এসেছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ২১টি দলের প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য বিভিন্ন আসনে মোট ১৫১টি মনোনয়নপত্র জমা দেন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে মহানগরী ও সংশ্লিষ্ট ছয়টিতে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগীয় কমিশনার। জেলার ১০টি আসনে দায়িত্বে আছেন জেলা প্রশাসক। মনোনয়নপত্র জমাদান প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রামের দুই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ছাড়াও চট্টগ্রামে প্রার্থী দেয়া দলগুলো হচ্ছে- জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাশনাল পিপলস ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, জাকের পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং গণফোরাম।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে মোট ৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মাহবুব রহমান রুহেলের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। এছাড়া সাম্যবাদী দলের নেতা সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, মো. আবদুল মন্নান (ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. নুরুল করিম আফছার (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), মো. ইউসুফ (বিএনএফ), মো. এমদাদ হোসেন চৌধুরী (জাতীয় পার্টি) প্রার্থী হয়েছেন। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ১৪টি মনোনয়নপত্র জমা পড়লেও দুজন একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ হিসেবে এ আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১২ জন। ফটিকছড়িতে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পাশাপাশি একই প্রতীকের বর্তমান সাংসদ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিও মনোনয়ন জমা দেন। এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হুসাইন মো. আবু তৈয়বসহ ৪ জন। এছাড়া সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), মাজাহারুল হক শাহ চৌধুরী (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), মো. শফিউল আজম চৌধুরী (জাতীয় পার্টি) ও এম এ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট) প্রার্থী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে বর্তমান নৌকার সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাসহ ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে মোট প্রার্থী ৯ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুনের বিপরীতে ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বর্তমান সংসদ সদস্য, যিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া মো. দিদারুল কবির (জাতীয় পার্টি), মো. আকতার হোসেন (বিএনএফ), খোকন চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি), মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী (বাংলাদেশ কংগ্রেস) প্রার্থী হয়েছেন। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের এম এ সালাম, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং তৃণমূল বিএনপির সাবেক চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন এখানে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ২জন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ পাঁচজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এছাড়া শফিউল আজম (স্বতন্ত্র), স.ম. জাফর উল্লাহ (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি), মো. সফিক উল আলম চৌধুরী (জাতীয় পার্টি) প্রার্থী হয়েছেন। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে মোট সাতটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ দুটি মনোনয়নপত্র দাখিল করায় এখানে প্রার্থীর সংখ্যা ছয়। এ আসনে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরীর একাংশ) আসনে মোট ১৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। এ আসনে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদের বিপরীতে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু এবং বিজয় কুমার চৌধুরী আছেন। এছাড়া সোলায়মান আলম শেঠ (জাতীয় পার্টি), এসএম আবুল কালাম আজাদ (বিএনএফ), সন্তোষ শর্মা (তৃণমূল বিএনপি), মোহাম্মদ ইলিয়াছ (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি), সৈয়দ মো. ফরিদ উদ্দিন (ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. কামাল পাশা (এপিপি), আবদুল নবী (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট), মনজুর হোসেন বাদল (কংগ্রেস) মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া-চকবাজার) আসনে আওয়াামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। অন্যরা হলেন- মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মিটুল দাশগুপ্ত (ন্যাপ), সৈয়দ আবু আজম (ইসলামী ফ্রন্ট), মুহাম্মদ নুরুল হুসাইন (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি), সুজিত সরকার (তৃণমূল বিএনপি), সানজীদ রশীদ চৌধুরী (জাতীয় পার্টি)। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী) আসনে মোট প্রার্থী ১২ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিপরীতে সাবেক মেয়র মনজুর আলম ও সাবেক যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদসহ চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে মোট প্রার্থী নয়জন। এ আসনে এম এ লতিফের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দুজন। এদের একজন মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থনপ্রাপ্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন ও সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী। এই আসনে মো. জসিম উদ্দিন (জাসদ), আবুল বসার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট), মো. মহিউদ্দিন (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), দীপক কুমার পালিত (তৃণমূল বিএনপি), নারায়ণ রক্ষিত (এনপিপি), উজ্জ্বল ভৌমিক (গণফোরাম) মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ৩ জন। এ আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে মোট সাতটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় দুটি বাতিল হয়ে এখানে প্রার্থী হবে পাঁচজন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিপরীতে এখানে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে মোট ৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীতে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে মোট ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমানের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি মুজিবুর রহমানসহ ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। মোট প্রার্থী ১৩ জন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, তফসিল অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নমিনেশন ফরমগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যে সব স্বতন্ত্র প্রার্থী নমিনেশন পেপার সাবমিট করেছেন, তাদের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। আমরা সেগুলো যাচাই করব ১ ও ২ ডিসেম্বর। ৩ ডিসেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর দল থেকে নমিনেশন পাওয়া প্রার্থীদের যাছাই-বাছাই করা হবে। সেখানে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কেউ ঋণখেলাপি আছেন কিনা বা যে সব বিষয়গুলো থাকলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে সে বিষয়গুলো আমরা যাচাই-বাছাই করব। সেটার পর আমরা প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করব।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ৯৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ভোটার ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯০২ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়