ক্ষমতার অসমতায় ঘটছে নারীর প্রতি সহিংসতা : অনুষ্ঠানে বক্তারা

আগের সংবাদ

নাশকতার পেছনে বাইরের উসকানি : ফারুক হাসান, সভাপতি, বিজিএমইএ

পরের সংবাদ

ওষুধের দাম সহনীয় থাকুক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপণ্যের মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বৃদ্ধির খবরে আমরা শঙ্কিত হই। বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা, সেকলো, অমিডন, মন্টিয়ার-মোনাস, এমকাস, রিভার্সএয়ারের মতো ওষুধগুলোর দাম বেড়েছে কারণ ছাড়াই। মোট ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিকের মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত ওষুধ ১১৭টি। এর মধ্যে সম্প্রতি ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। সেই দাম বাড়ানোর প্রভাবে জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম যে বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা আর কমেনি। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচ পোষাতে না পারায় বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় আমদানিকৃত ওষুধের দামও সমন্বয় করতে হয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুধু কাঁচামালের দামই বাড়েনি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালস, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের দাম বাড়াতে মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। দাম বাড়াতে না দিলে উৎপাদন বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল তারা। এখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অসহায়। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। আর গত বছর ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় অর্ধশতাধিক ওষুধের পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের করা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯ থেকে ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত এসব মূল্য বাজারে ফেলেছে পুরোপুরি নেতিবাচক প্রভাব। দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি ও অধিক মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এটি অনৈতিক। সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। উদ্বেগের বিষয়, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক এ দুর্যোগের সময় কেউ যদি ওষুধের সংকট তৈরি করে বা বেশি দাম নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এটা মানুষের জীবন রক্ষার উপকরণ। কাজেই ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা ও মানবিক হওয়া প্রয়োজন। জনগণের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানোর বিকল্প নেই। মূল্যস্ফীতির এ সময়টায় মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে জোগাতে হবে ভর্তুকি। সরকারের অন্যান্য ব্যয় কাটছাঁট করে হলেও এটা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়