পুলিশ হত্যা মামলা : খসরু-স্বপনের জামিন শুনানি ২৯ নভেম্বর

আগের সংবাদ

নাশকতা ঠেকাতে হার্ডলাইন : আগুনসন্ত্রাস মোকাবিলায় কঠোর পুলিশ, সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে নির্দেশ আ.লীগের

পরের সংবাদ

কর্মস্থলে নারীরা কবে নিরাপদ হবে?

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে আমরা আধুনিক হলেও নারীদের প্রতি আমাদের মানসিকতা এখনো আধুনিক হয়নি। এখনো প্রতিটি নারী কর্মস্থলে কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এখনো অফিসে সিনিয়র বসের ইভটিজিং, সেক্সুয়েল হ্যারেজমেন্টের শিকার হতে হয় একজন নারী কর্মীকে। এই অসহ্য, অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করেও অনেকে চাকরি করে আসছেন দিনের পর দিন। নীরবে মুখ বুজে সহ্য করে আসছেন অনেক নারী। আপনার প্রশ্ন হতে পারে, কিন্তু কেন সহ্য করছেন তারা? আপনি হয়তো জানেন না বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে চাকরির বাজার কতটা কঠিন। এখানে চাকরি হারিয়ে ফেলা মানে জীবনে অন্ধকারে চলে যাওয়া। শুধু যে নিজের জীবনে অন্ধকার আসবে তা নয়, পুরো একটা পরিবার অন্ধকারে চলে যেতে পারে। এমন আরো অনেক ভয়ে চাকরিতে এসব অন্যায়, অমানবিকতা সহ্য করে থাকেন নারীরা। চাকরি হারানোর ভয়ে অভিযোগটাও করেন না। শুধু কি তাই? এই সমাজ কী বলবে? সমাজের মানুষের কথার ভয় আছে, আছে পরিবার, স্বামী কীভাবে নেয় বিষয়টা- সেই ভয়। এসবের সঙ্গে পেরে ওঠাও যে বড় মুশকিল!
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের সহায়তায় একটি জরিপ পরিচালনা করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী ১৩৫ নারীর শতভাগই নিজ কর্মস্থলে কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে জানা যায়। এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট ৪২ লাখ ২০ হাজার পোশাকশ্রমিকের মধ্যে নারী ২৪ লাখ ৯৮ হাজার। এ খাতে নিয়োজিত নারী কর্মী দেশের শিল্প খাতে নিয়োজিত মোট নারী কর্মীর ৭০ ভাগ। তবে এখানেও যে তারা অন্যায়-অবিচারের শিকার হন না তা কিন্তু নয়। ৭৪ শতাংশ নারী পোশাকশ্রমিক কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজে বাধ্য হন। তৈরি পোশাকশিল্পে নারী বেশি নির্যাতিত। ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারীকে কারখানার ভেতর মৌখিক নির্যাতন ও গালাগালের শিকার হতে হয়। ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ নারীর ওপর মানসিক নির্যাতন করা হয়। শতকরা ২০ জন শারীরিক নির্যাতন অর্থাৎ তারা মারধরের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। কর্মজীবী নারী ও কেয়ার বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বর্তমানে মামলা করেও খুব বেশি সুবিধা পাওয়া যায় না। সেটা আমরা নিকট অতীতের কিছু ঘটনা দেখলেই বুঝতে পারি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব অপরাধের সাজার হার মাত্র ৩ শতাংশ। আর এত লম্বা সময় লাগে যে এ মামলার ফল আপনি দেখে যেতে নাও পারেন।
এমন আরো অনেক জরিপ এবং গবেষণা হয়েছে এ দেশে। কিন্তু এসব জরিপ কিংবা গবেষণায় নারীদের খুব বেশি উপকার হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। দিন দিন এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হচ্ছে। নারীর প্রতি যৌন হয়রানি এমনকি ধর্ষণের মতো নোংরামিও চলছে রোজ। এর কিছু গণমাধ্যমে আসছে, কিছু আড়ালে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, কর্মস্থলে নারীরা বেশ অনিরাপদ। তারা তাদের বিষয়টা প্রকাশ্যে বলতেও ভয় পাচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসন এবং সরকারের তেমন ভূমিকা চোখে পড়ে না। অথচ এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি।
নারীর নিরাপত্তায় আইন করে প্রতিটি কর্মস্থলে নারীদের জন্য অভিযোগ বাক্স রাখতে হবে। সেখানে তারা তাদের অভিযোগ জমা দেবে। সেই সঙ্গে শ্রমজীবী নারীর চাকরির নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। তবেই অভিযোগ করার সাহস পাবে নারীরা। এ ছাড়াও কর্মস্থলে সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে একটি নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। নারী কোনো যানবাহনে চড়লে সে পরিবহনের ছবি তুলে রাখতে পারেন। তাহলে তিনি কোন গাড়িতে কখন হয়রানির শিকার হয়েছেন, সেটা জানা সহজ হয়। এভাবে আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এ বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে নজরে আনা জরুরি বলে মনে করছি আমি। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব- এটা আমরা সবাই জানি। তাই সরকারের উচিত এই বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে নজর দিয়ে নারীদের নিরাপদ কর্মস্থলের সুযোগ করে দেয়া।

আজহার মাহমুদ : খুলশী-১, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়