রাজপথে সহিংসতা ও প্রাণহানিতে মর্মাহত ইইউ

আগের সংবাদ

খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয় : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের শেষ কোথায়

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন সংবাদকর্মী। গত শনিবার কাকরাইল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন ও বিজয়নগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তারা আক্রান্ত হন। তাদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ সময় সাংবাদিকদের গাড়ি, ক্যামেরা ভাঙচুরসহ মোবাইল, মেমরি কার্ড রেখে দিয়েছে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাই। আমাদের দেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিগত কয়েক দশকে দেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে; যা দেশের গণমাধ্যম জগতের জন্য এক অশনিসংকেত। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক ২০২৩-এর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত দুই বছরে বাংলাদেশ (গণমাধ্যম সূচকে) ১১ ধাপ ও ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নিচে নেমেছে। যে বিষয়গুলোর ওপর এই সূচক নির্ধারিত হয়, তার অন্যতম একটি বিষয় হলো সাংবাদিকের নিরাপত্তা। আর ঠিক সেখানেই বাংলাদেশের স্কোর হতাশাজনকভাবে কম। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬০ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ১১৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলার শিকার হয়েছেন। উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচার হওয়ার নজির খুব কমই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিক হত্যার বিচার ঝুলে যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রতায়। শুধু গত এক দশকেই নয়, তার আগের হত্যাকাণ্ডগুলোরও বিচারের নজির মিলছে কম। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের কোনোটার বিচারই শুরু হয় না, কোনোটা চার্জশিটে আবদ্ধ, কোনোটা আবার তথ্য-প্রমাণের অভাবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে যায়। ফলে বিচার না হওয়ায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলছে। গণ্যমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকরা দেশের দুর্যোগ, সংকট, মহামারিতে সামনের সারিতে কাজ করেন। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ যা-ই হোক এটাই পেশাগত দায়িত্ব সাংবাদিকের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দায়িত্ব পালনকালেই সাংবাদিকরা মারাত্মক হামলার শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে সাংবাদিকদের জীবন চরম অনিরাপদ। দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’। একদিকে এমন আইন ও নানারকম ভয়ভীতি-হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে উঠছে; অন্যদিকে শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শনিবারের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ত্বরিত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জোর দাবি জানাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়