জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংকের পরীক্ষা স্থগিত

আগের সংবাদ

ইমামদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখতে আপনাদের সহযোগিতা চাই

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িকতা নয় মানবতা চাই

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একটি ভাষা সৃষ্টি করেছে একটি জাতিকে, পৃথিবীর ইতিহাসে যা অনন্য এক দৃষ্টান্ত। রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষার এই দেশ, যার নাম বাংলাদেশ। বিভিন্ন ধর্ম ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক বাংলাদেশে বাস করে। জাতিগত দিক দিয়ে এ দেশে সবচেয়ে বেশি লোক বাঙালি আর ধর্মীয় দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এর বাইরেও বিভিন্ন উপজাতি ও বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে এ দেশে। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ হলো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
এই বছরে আলোচিত একটি বিষয় হলো কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণ ও হত্যা। তথ্যমতে, চট্টগ্রামের রাউজানে অপহরণের ১৪ দিন পর পাহাড়ের গর্তে মিলে কলেজছাত্রের খণ্ড-বিখণ্ড দেহ। এই নৃশংস কাজটি করেছে মারমা সম্প্রদায়ের কিছু ছেলে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার পর সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
সামগ্রিকভাবে নির্দিষ্ট একটি জাতির প্রতি প্রাধান্য দেয়া সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে। ভালো-মন্দের দ্ব›দ্ব ও এই বিভেদ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। কারণ দ্ব›দ্ব ও বিভেদ থেকেই সৃষ্টি হয় মনুষ্যত্বের অবনতি। এরূপ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট জাতির ওপর গুরুত্ব না দিয়ে একজন ব্যক্তির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একজন ব্যক্তি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। জাতিগত পরিচয় থেকেও বড় পরিচয় সে মানুষ। বাঙালি জাতিও যেমন মানুষ, তেমনি বিভিন্ন উপজাতি বা আধিবাসীরাও মানুষ। আর সমাজে এই মানুষরাই ইতিবাচক কাজ যেমন করে, তেমনি নৃশংস কাজও করে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নৃশংসতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর এর পেছনে মূল যে সংকটটি কাজ করেছে, তা হলো ব্যক্তি মানুষকে গুরুত্ব না দেয়ার সংকট। নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের কিছু ছেলে সম্মিলিত হয়ে সাম্প্রদায়িক মনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডটি পরিচালনা করেছে। এখানে সাম্প্রদায়িক মনোভাব হলো শুধু নিজ সম্প্রদায়কেই প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা। প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এরূপ মানসিকতার মানুষ রয়েছে, এখানেও যদি মারমা সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি হতো তবে তার পরিণতিটা অন্যরকমও হতে পারত। হত্যাকাণ্ড করার পরে মৃত লাশের সঙ্গে তাদের যেই কার্যক্রম, সেটা চরম মানসিক বিকারগ্রস্ততার পরিচয় দিয়েছে।
চট্টগ্রামের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি অধিবাসী বিভিন্ন উপজাতির প্রতি আমাদের এক বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে। ফলে সম্প্রদায় থেকে সম্প্রদায়ে হিংসা-প্রতিহিংসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হাজারো নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটছে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে এমনকি নিজ পরিবারের মধ্যে। তিক্ত সত্য এই, সেই সময় কিন্তু আমরা নিজ পরিবার ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ করি না। এর পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে, সেটা নিজ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংকটগুলোকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টা। অন্যদিকে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তোলার পেছনে হয়তো কাজ করে সাম্প্রদায়িক ঐক্য। এই ঐক্য মন্দের ভালো তবে এখানে মানবতা প্রশ্নবিদ্ধ! এই ঐক্যে খণ্ডিত সম্প্রীতি থাকলেও সামগ্রিক সম্প্রীতি অনুপস্থিত। এ অনুপস্থিত বিষয়টিই একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর এ জন্য হলেও ব্যক্তি মানুষটাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। আলো-আঁধারির এই পৃথিবীতে একদিকে যেমন আলো আছে, অন্যদিকে তেমনি অন্ধকারও আছে। একটি সম্প্রদায়ে যেমন ভালো লোক আছে তেমনি একটি সম্প্রদায়ে খারাপ লোকও আছে। গুটিকয়েক খারাপ লোককে কেন্দ্র করে সমগ্র জাতির প্রতি দোষারোপ করা বা পুরো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা কখনো কাম্য হতে পারে না। হত্যার বিপরীতে হত্যা প্রতিশোধস্পৃহা বাড়িয়ে দেয় এবং একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। আমাদের সবাইকে এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সমাজে মনুষ্যত্বের শিক্ষা প্রচার করতে হবে। আর এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে আমাদেরই। পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান সব স্তরে মনুষ্যত্বের শিক্ষা দিতে হবে। আর এই শিক্ষা তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন আমরা মন থেকে মানবিক হবো।

আলী আহসান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়