প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
ভূরাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিও অনেক ধোঁয়াশায় কুণ্ডলীতে ঘুরপাক খাচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এদেশের নির্বাচন তথা রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র লেগে আছে আঁঠার মতো। পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। এ দেশে ওরা গণতন্ত্র, মানবাধিকারের ছবক বিরতিহীন দিয়েই যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, এ অঞ্চলে চীনা আধিপত্য প্রতিরোধ করতে হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার কিছু মিত্র প্রয়োজন, যারা তাদের কথায় চলবে। এ দেশের সংবিধানে গ্যারান্টি যুক্ত সব ক্ষমতার মালিক জনগণকে আর চায় না তারা। তাদেরই তল্পিবাহক রবার স্টাম্প ধরনের সরকার তাদের চাই। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা, সুশীল সমাজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় চষে বেড়াচ্ছেন আমেরিকান দূত বা তাদের প্রতিনিধি। এক দল এলো তো আরেক দল আসতে দু-চার দিনও লাগছে না।
তবে ইতিহাস বলে না যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর কোনো দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে সার্থক হয়েছে। যেখানেই গেছে স্বার্থ উদ্ধারের পর হাত গুটিয়ে ফিরে এসেছে।
নিজেদের দেশে বন্দুক সন্ত্রাস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে মার্কিন প্রশাসন। আর বর্ণবাদ ধারণ করেছে মারাত্মক আকার। কৃষ্ণাঙ্গের গলার ওপর সেদেশের পুলিশ পা দিয়ে চেপে ধরে রাখে যতক্ষণ না প্রাণ-ওষ্ঠাগত হয়। কিছুদিন পরপর শিশুদের স্কুলে বন্দুক সন্ত্রাসে মারা পড়ছে অনেকে। একজন আমেরিকান ফিলিস্তিনের ৬ বছরের বালককে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হলো। তথাপি যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয় না, ওরা ভিনদেশে আসে মানবাধিকারের অতন্দ্রপ্রহরী সেজে।
একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রয়োগ করে ভিসানীতি। আর আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ধরনা দিয়েই চলেছে- রাত দিনের বালাই নেই।
ছলেবলে কৌশলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে লেগে আছে এই দেশটি। কারণ ওরা জেনে গেছে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বাগে আনা অসম্ভব। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও ২ লাখ মা-বোনের আব্রুর বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশের ১ ইঞ্চি জমিও প্রাণ থাকতে কারো হাতে তুলে দেবেন না জননেত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তার শিরায় শিরায় ধমনীতে শেখ মুজিবের রক্ত। মাথা অবনত করার শিক্ষা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পায়নি। কোনো রকমের হুমকি-ধমকি চোখ রাঙানির তোয়াক্কা করেন না মানবতার নেত্রী। উন্নয়নের দার্শনিক।
যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বিরোধী দল বিএনপিকে কব্জায় এনে নানা ফন্দি আঁটছে মার্কিন পরাশক্তি। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ঘোর বিরোধিতা করেছে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে বাঙালি নিধনে ষষ্ঠ নৌবহর পাঠিয়েছিল। তারা এখন এদেশের বন্ধু হতে চায়। হতে চায় গণতন্ত্র মানবাধিকার উন্নয়নের অকৃত্রিম সহযোগী। ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে দেখে রাতের ঘুম হারাম বিএনপির। এক দফা এক দাবিতে অনড়। আর তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়। সংবিধানে যা কিছু থাক না কেন ক্ষমতা ছাড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। কর্মসূচির পর কর্মসূচি। বলা হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এখন পল্টনে গণঅনশন। হুমকি দিচ্ছে লাগাতার অসহযোগ ও হরতাল অবরোধের।
ওরা ভুলে গেছে যুক্তরাষ্ট্রই তারেক জিয়াকে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে কঠোরভাবে কালো তালিকাভুক্ত।
যেন নব্য তুর্কি আমেরিকার বিছানো জালে সারা বাংলাদেশ বন্দি। ওরাই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ওর এক দিয়ে যাচ্ছে প্রেসক্রিপশন। ২০১৮ সালে ব্যাপক ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ এবং ভোট হয়েছে রাতের অন্ধকারে এই মৃদঙ্গ বাজাতে বাজাতে একটি গোষ্ঠীর কাছে তাকে সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোট গঠন করে বিএনপি পাঁচনে অংশ নেয়; যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. কামাল হোসেন তিনি ভোটের দিন বলেছিলেন ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। বেলা শেষে মির্জা ফখরুলও বলেছিলেন যারা ভোট বর্জন করেছে তারা তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছায় করেছে- আমরা বর্জন করিনি। তখনো মির্জা ফখরুল এমন কোনো অভিযোগ করেননি যে রাতের বেলায় ভোট হয়ে গেছে। রাতের বেলায় ভোট চুরির কোনো দলিল বা ফুটেজ কেউ দেখাতে পারেনি। মাহমুদুর রহমান মান্না ৬০ হাজার ভোট পায় বেলা ১১টার মধ্যেই। সকাল থেকে ভোট চলাকালে অনিয়মের অভিযোগে তুলে দুপুরের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ব্রিগেডিয়ার (অব) ইব্রাহিম। কিন্তু তিনি একদিন রাতে ভোট হয়ে গেছে এরকম কোনো অভিযোগ তুলেননি। মির্জা ফখরুলসহ তাদের জোটের ৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। তবে প্রশ্ন জাগে তারাও কি একদিন আগে রাতে সব ভোট নিয়ে নিয়েছিল।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভোট ডাকাতের ওদের প্রেসিডেন্ট জিয়া সৃষ্টি করেছিলেন হ্যাঁ না ভোটের নামে এই ভোট ডাকাতি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে না ভোটের বাক্স শুধু যে লুকিয়ে রেখেছে তাই নয়; কোনো কোনো কেন্দ্রে এর চেয়েও বেশি ভোট করেছে। একেকজন ৬ হাজারের বেশি ভোট দিয়েছেন। ওই ভোট চলাকালে জিয়া সামরিক আইন প্রশাসক এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতিও। সেনাবাহিনীর উর্দি পরে এরকম প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে বৈধ নয়। তখন দেশে চালু ছিল সামরিক আইন। মাগুরায় ভোট ডাকাতির নির্লজ্জতা জনগণ ভুলে যায়নি।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের নামে এক প্রহসন চলায় আজকে যারা গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আবারো পাকিস্তানপন্থি এবং একাত্তরের পরাজিত ভাবধারা বাস্তবায়িত করার নকশা বাস্তবায়নে নেমেছে।
১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচন ছাড়াই ৪৮ জনকে এমপি করা হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ১০ শতাংশেরও কম। এই কুখ্যাত একতরফা ভোট ডাকাতির খেসারত দিতে হয় বিএনপি সরকারের বিদায়ের মধ্য দিয়ে।
এখন ওদের মুখেই সুষ্ঠু নির্বাচনের খেই ফুটছে দিবানিশি। আর এরশাদ সরকারের ভোট ডাকাতির কথা নাইবা বললাম।
৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৯টি আসন বিএনপির লুটের মালে পরিণত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। এ প্রহসনে বিরোধী দল বলতে কিছু ছিল না। একটি আসন পেয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফ্রিডম পার্টির সৈয়দ ফারুককে বিরোধী দলের নেতার তকমা দেয়া হয়। আবারো প্রকারান্তরে প্রমাণিত হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে ছিল জিয়ার সূ² ও দূরদর্শী পাষণ্ড পরিকল্পনা।
আজকের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এক গর্বিত সাফল্যে নিয়ে গেছেন। মহাশূন্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পরমাণু প্রযুক্তি, নীল অর্থনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মর্যাদার আসনে। ডক্টর ইউনূসের ষড়যন্ত্রের পর আইএমএফ অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, সড়ক রেল ও আকাশ পথে যাত্রী পরিবহন, ভূমি ও গৃহীনদের পুনর্বাসন, নানারকম ভাতা, সর্বজনীন পেনশন এবং সর্বোপরি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের মানচিত্রে তারকায় তারকায় পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
সঙ্গত কারণে আজকে যখন ভোট ডাকাতির দায়ে আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে- ঠিক এ মুহূর্তে দেশবাসীর চিহ্নিত করা ও স্মরণে রাখা উচিত সত্যিকার অর্থে এ দেশে কারা বছরের পর বছর স্বৈরশাসন চালিয়ে গেছে, ইতিহাসের আলোকে কারাইবা ভোট চুরির জন্মদাতা- তাদের জাতির স্বার্থে পেছনে ফিরে তাকানোর সময় এসে গেছে। তাই অসাম্প্রদায়িক মুক্তবুদ্ধিভিত্তিক চেতনায় বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির ঐতিহাসিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
আবু তাহের মুহাম্মদ : কবি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাবেক সহ-সভাপতি বিএফইউজে। [email protected]
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।