ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে ফের অশনি সংকেত : মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানো অর্ধেকে নেমে এসেছে, গাজা পরিস্থিতি নতুন ধাক্কা হয়ে এসেছে

পরের সংবাদ

ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ব্যর্থতা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি রাষ্ট্রের জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তী সময়ে বিলুপ্ত লিগ অব নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ জাতিসংঘের সদস্য এবং ভ্যাটিকান সিটি ও ফিলিস্তিন দুটি পর্যবেক্ষণকারী দেশ। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংকটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী সংকট হলো মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংকট। ইসরায়েলকে বৃহৎ শক্তিগুলোর একচ্ছত্র সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার কারণে জাতিসংঘ কিংবা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার কেউই এই দ্ব›দ্ব মীমাংসা করতে পারছে না। সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। মৃত্যুর খাতায় যুক্ত হচ্ছে বহু অসহায় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক কিছুই বদলে গেছে। বিশেষ করে আরব এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে অনেক যুদ্ধের পর বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোর চেহারাই পাল্টে গেছে। ইসরায়েল যেহেতু অধিকৃত অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণে, তাই তারা এর ভিত্তিতেই দর কষাকষি করতে চায়। কিন্তু হামাস দাবি করছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগে যে সীমানা ছিল, সেই সীমানার ভিত্তিতেই তাদের রাষ্ট্র হবে। আর পশ্চিম তীরে ইসরায়েল যে অবৈধ বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে, সেটা নিয়ে নীরব লড়াই তো চলছেই। পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস- উভয়েই চায় পূর্ব জেরুজালেম হবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী। যদিও ইসরায়েল ১৯৬৭ সাল থেকে এটি দখল করে রেখেছে।
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। ব্রিটেনের উদ্যোগেই ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর বেলফোর ঘোষণা এবং পরবর্তী সময়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায়ই ১৯৪৮ সালে মূলত ইহুদিবাদী ইসরায়েলের জন্ম। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ইসরায়েলের খুবই ক্ষমতাধর একটি শক্তিশালী লবি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার, ব্যবসা বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও মিডিয়া সাম্রাজ্য ইহুদি বলয়ের দখলে এবং এ কারণে সেখানে জনমতও ইসরায়েলের পক্ষে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের পক্ষে ইসরায়েলেও ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়া শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে। শুধু তাই নয়, এই দুই দেশ ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য পায়। এই সাহায্যের একটা বড় অংশই খরচ হয় ইসরায়েলের জন্য সামরিক অস্ত্র কেনা এবং মুক্তিকামী ফিলিস্তিনির দমন ও পীড়নের জন্য। তাছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্সের রয়েছে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সুসম্পর্ক। তবে সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে এবং হামাসের আকস্মিক হামলার ঘটনায় দুটি দেশই স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটা আসলে কথার ফুলঝুরি, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মোট কথা ফিলিস্তিনের পক্ষে খোলাখুলি সমর্থন জোগানোর মতো একটিও বৃহৎ শক্তি নেই। এ জন্য জাতিসংঘকে অনেকেই কাগুজে বাঘ বলে অভিহিত করে থাকেন। কারণ জাতিসংঘের অনেক কার্যাবলি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পঞ্চভূত বা পাঁচটি স্থায়ী সদস্যদের ভেটো পাওয়ারের কাছে অসহায় ও সীমাবদ্ধ। পাঁচটি স্থায়ী সদস্যদের স্বার্থের বাইরে জাতিসংঘ কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। প্রতিটি স্থায়ী সদস্য পারমাণবিক শক্তির অধিকারী এবং তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বিশ্বে অনেক কিছু সংগঠিত হয়। তাদের অঙ্গুলি নির্দেশে বিশ্বের কূটনীতি ও রাজনীতি আবর্তিত হয়। জাতিসংঘ মূলত বৃহৎ শক্তিধর দেশের চাঁদায় পরিচালিত এবং কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চাঁদাদানকারী দেশগুলোও মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ অধিকাংশ সময় বৃহৎ পাঁচ স্থায়ী সদস্যদের কাছে জিম্মি। মূলত পরাশক্তি দেশগুলোর একচ্ছত্র ইসরায়েল সমর্থন অনেকাংশেই এই সংকটকে টিকিয়ে রেখেছে এবং পরাশক্তিগুলোর বিরোধিতার কারণেই আজো স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি, তাদের কাছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র অনেকটা পুতুল নিয়ে খেলা করার মতো, জাতিসংঘের মূল ব্যর্থতাও এখানেই নিহিত।

মো. জিল্লুর রহমান : গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়