ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের প্রতিবেদন পেছাল

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে ফের অশনি সংকেত : মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানো অর্ধেকে নেমে এসেছে, গাজা পরিস্থিতি নতুন ধাক্কা হয়ে এসেছে

পরের সংবাদ

ফিলিস্তিনিরা মৌলিক অধিকার ফিরে পাক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনের সরকারি নাম হলো স্টেট অব ফিলিস্তিন। বর্তমান ফিলিস্তিন মূলত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর এই দুই ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত। গাজা উপত্যকার পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে মিসর এবং উত্তর ও পূর্বদিকে ইসরায়েল অবস্থিত। পশ্চিম তীরের পূর্বে জর্ডান এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ইসরায়েল। ইতিহাস, সংস্কৃতিনির্ভর দেশ ফিলিস্তিন। বিভিন্ন কারণে এই দেশটি মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র ভূমি বলে বিবেচিত। বর্তমানে এ অঞ্চলের বড় অংশ ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। বলে তাদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে? জানা যায়, এখানে সর্বপ্রথম কেনানের একদল মুসলমান বসবাস শুরু করে। তাদের উত্তরসূরিদের নিয়ে গঠিত হয় আজকের ফিলিস্তিন। এককালে এ ভূখণ্ড ছিল অটোমানদের দখলে। আরব মুসলমানদের সংখ্যা ছিল বেশি। উনিশ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে চেনিনবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠে। ইহুদিদের চোখ পড়ে এই ভূখণ্ডের ওপর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইহুদিরা এখানে বাসা বাঁধতে শুরু করে; উদ্দেশ্য ছিল এই দেশটি কি করে দখল করা যায়, তার সুযোগ খোঁজা। জানা যায়, সর্বপ্রথম পোল্যান্ড থেকে কিছু ইহুদি ফিলিস্তিনের কিটবুজ অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সেখানে শুরু হয় ইহুদি আগমনের ইতিহাস। তারা ধীরে ধীরে বিশ্বের সব ইহুদিকে এখানে আসার আমন্ত্রণ করে এবং জায়গা ক্রয় করা শুরু করে। ১৯১৬ সালে ইহুদিদের ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট সংস্থাটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এবং পৃথক ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। ১৯১৮ সালে মোট জনসংখ্যার এক-দশমাংশ ছিল ইহুদি, যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। পরবর্তী সময়ে ১৯২৩ সালে তা ৩৫ হাজারে উন্নীত হয়, ১৯৩১ সালে তা ৮১ হাজারে উন্নীত হয়, যা ১৯৪১ সালে ২ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়। যখন মুসলিমরা দেখল, তারা এই ভূমিতে জায়গা ক্রয়ের সুবাদে একটি ইহুদি অঞ্চলের সূচনা করতে যাচ্ছে, তখন মুসলমানদের টনক নড়ে। অটোমানদের পরাজিত হওয়ার পর এই অঞ্চল চলে যায় ব্রিটিশের অধীনে। ১৯৩৩ সালে এডলফ হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় এলে ইউরোপে ইহুদিদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সেখানকার ইহুদিরাও ফিলিস্তিনে আসতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় ৬ লাখ ইহুদিকে এখানে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া হয় বিভিন্ন চাপে, তখন থেকে বাড়তে থাকে ইহুদি আধিপত্য। আর এখান থেকে বেড়ে যায় ফিলিস্তিন নিয়ে আরব-ইহুদি বৈরিতা। এরই মধ্যে ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ব্রিটিশ সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘে এক ভোট অনুষ্ঠিত হয়, এতে ৩৩টি দেশ ভোট দেয় ইহুদিদের পক্ষে, ১০টি দেশ বিরত ছিল আর ১টি দেশ ছিল অনুপস্থিত। এতে আরবরা এর চরম বিরোধিতা করে। কিন্তু ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করে পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয় ভোটপ্রধান দেশগুলো। ইহুদিরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় এতে ১৭ হাজার মুসলিম নিহত হন। এরপর জাতিসংঘ এটি স্থগিত করে। আরবদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের মেনডেট ছেড়ে দেয়, ওই দিনই কৌশলী ইহুদি নেতারা আনুষ্ঠানিক ইসরায়েলের ঘোষণা দেন। আর এরপর থেকেই আরবদের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বেঁধে যায়। যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। উপরন্তু জাতিসংঘের প্রস্তাবিত একটা বড় অংশ দখল করে ইসরায়েল। সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়। পরবর্তী সময়ে আরো কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হলেও ফিলিস্তিনিরা হারায় নতুন নতুন অঞ্চল। হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত তাজাপ্রাণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই রক্ষা পাচ্ছে না তাদের হামলা থেকে। মরছে শিশু, ধ্বংস করা হচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়ার অফিস ও মূল্যবান ভবন, মা হারাচ্ছেন সন্তান কিংবা স্বামী, ইজ্জত হারাচ্ছে নারী, এ যেন এক মরণ খেলা চলছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যারা মানবতার কথা বলেন- এ রকম অনেক ভদ্র লোক সমর্থন করছেন এই তাণ্ডব। না হলে এটা কি এতদিন চলত? তাই সময় এসেছে বিশ্ব বিধাতার ডাকে কিংবা তার মানবতার ধর্ম প্রতিষ্ঠার কাজে সাড়া দেয়ার। জয় ইনশাআল্লাহ হবেই এই সহিষ্ণু আর ক্ষহিষ্ণু ফিলিস্তিন জাতির। কারণ যখনই একটি জাতির ওপর চরম নির্যাতন শুরু হয়, তখনই মহান প্রভুর নির্দেশে আসে একদল ইয়াসির আরাফাতরা। এরা কখনো মরে না। কারণ তারা যে আদর্শ তৈরি করেন, তা চলমান থাকে। আর একদিন এই বিপ্লব এনে দেয় মুক্তি। এদিন বেশি দূরে নয়। যুগে যুগে মুসলিমদের এভাবে শক্তি আর অর্থ কম ছিল তবুও ইমানি মনোবলে তারা জয়ী হয়েছেন। কারণ মহান আল্লাহ এদের সহায় হয়েছেন। না হয় এই জাতিসংঘ যে দ্বিখণ্ডিত রাষ্ট্র করে দিয়েছিল এবং শর্ত দিয়েছিল তার বাস্তবতার প্রয়োজনে তাদের দিয়েই একটি মুসলিম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমস্যার সমাধান করে দেবেন আমার বিশ্বাস। বর্তমানে ৬০২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দেশটির জনসংখ্যা ৫০ লাখ ৫১ হাজার। এ দেশের সরকারি ভাষা আরবি। দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ মুসলিম। বাকি অন্যরা ৬ খ্রিস্টান, ১ দ্রজ। পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের ঘোষিত রাজধানী। বর্তমানে এটি ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। আর পশ্চিম জেরুজালেম ইসরায়েলের অংশ। জেরুজালেমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাস। বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানের একটি হলো এই জেরুজালেম শহর। মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টানদের কাছে এর গুরুত্ব খুবই বেশি। যেমন- টেম্পল মাউনট, পশ্চিম প্রাচীর, আল আকসা মসজিদ এবং ডুম অব দ্য রক এখানে অবস্থিত। যদিও পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী, তবুও বর্তমানে রাজধানীর মূল কাজ করে থাকে রামাল্লা শহর। খ্রিস্টানদের কাছে এই জেরুজালেম গুরুত্ব এ কারণে, এখানে শিশু অবস্থায় এসেছেন যিশুখ্রিস্ট এবং প্রাপ্ত বয়সে ধর্ম প্রচার করেছেন এবং জীবনের শেষে এখানে ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছেন এবং একইভাবে এখানে ঈশ্বরের দ্বারা পুনরুত্থিত হবেন বলে বর্ণিত আছে। আবার ইহুদিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে তাদের ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মুজেছের পূর্ণ ভূমি এই জেরুজালেম। ইহুদিদের প্রথম মন্দিরও এই জেরুজালেমে অবস্থিত ছিল, যার অবস্থান হলো টেম্পল মাউনট। আর মুসলমানের প্রথম কিবলা হলো এই মসজিদ এবং ইসলামি বিশ্বাস মতে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজের আগে এখানে থেমেছিলেন এবং বায়তুল মুকাদ্দছে নামাজ পড়েছিলেন, যা খুবই মর্যাদাকর মুসলিমদের কাছে। এই মসজিদ হযরত ইয়াকুব নবী নির্মাণ করেন, পরবর্তী সময়ে সুলায়মান নবী জিন দিয়ে সাগর থেকে পাথর উত্তোলন করে এই মসজিদ পূর্ণ নির্মাণ করেন। এছাড়া এই মসজিদের ভেতরে হজরে আসওয়াদ নামক পাথরের পরবর্তী মর্যাদার ও একটি পাথর রয়েছে। ডেড সি বা মিত সাগরটি এই ফিলিস্তিন এবং জর্ডানের মধ্যবর্তীতে অবস্থিত। দেশের প্রায় ৯৬ ভাগ শিক্ষিত। পর্যটন হলো তাদের প্রধান অর্থনীতির বিশাল অংশ। উল্লেখ্য, ‘আল কুদস’ (জেরুজালেম) ফিলিস্তিনের সরকারি রাজধানী হলেও এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে। তাই এটি মানুষের ইচ্ছা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তাই তারা পূর্ব জেরুজালেম নামে অভিহিত করে থাকেন, জেরুজালেমের পূর্বের সব জেলা, শহরের উত্তর ও দক্ষিণের বেশির ভাগ জেলা এবং পুরাতন জেরুজালেম শহর। বর্তমানে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ দুটি পৃথক দলের মধ্যে বিভক্ত। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, যা পশ্চিম তীরে বিক্ষিপ্ত অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, জেরুজালেমের উত্তরে রামাল্লা শহরে এর প্রশাসনিক অফিস। তবে জেরুজালেম তাদের ভবিষ্যতের রাজধানী বলে দাবি করার পক্ষে সবাই। বর্তমানে যুদ্ধ চলছে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মধ্যে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের শুরু। হামাসের এই হামলার পরপরই পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। এখনো এ যুদ্ধ চলছে, ফিলিস্তিনিরা আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। এদিকে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য। এদিকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় ইরান দেশটির বিরুদ্ধে ‘প্রাক-প্রতিরোধমূলক হামলার’ হুমকি দিয়েছে। তেহরান আগেও একাধিকবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকা গাজায় স্থল আগ্রাসন হলে নানা পক্ষ থেকে প্রতিরোধ সৃষ্টি হবে। এতে এ অঞ্চলে সংঘাত তীব্রতর হতে পারে। এ এলাকায় পানি, খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ সব শেষ হয়ে গেছে। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, গাজা জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। কারণ ফিলিস্তিনি ছিটমহলে ‘পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে’। জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, গাজার ৩৫টি হাসপাতালে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারের পক্ষে জাতিসংঘে ভোট দিন দিন বাড়ছে। ফিলিস্তিনিরা এই যুদ্ধে বিজয়ের জন্য সব দাম দিতে প্রস্তুত, এটা বলা যেতে পারে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আশা করে ফিলিস্তিনিরা মৌলিক অধিকার ফিরে পাক এবং দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হোক।

আজিজুল আম্বিয়া : কলাম লেখক ও গবেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়