আইজিপি : দুর্গোৎসব ঘিরে এখন পর্যন্ত কোনো শঙ্কা নেই

আগের সংবাদ

সতর্ক সরকার, প্রস্তুত দল : সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা আ.লীগের, প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ > ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর

পরের সংবাদ

ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তনের পর বেশ কয়েকটি মৌলিক সমস্যা নিয়ে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সেগুলোর অন্যতম একটি। এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষক বিশিষ্ট রাষ্ট্র চিন্তাবিদ, সমাজ ও অর্থনৈতিক সংস্কারক প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে। প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদানের পরই মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সময়ে শিক্ষামন্ত্রী পদে নিয়োগ প্রদান করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম ইউসুফ আলীকে এবং শিক্ষা সচিব পদে নিয়োগ প্রদান করেন আরেক শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এ আর মল্লিককে। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়। একটি হলো- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, অন্যটি হলো- মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ। এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে দেশে ৫৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে আলাদা আইন। সারাদেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও সে নিজে জানে না কীভাবে চলছে, কোন আইনে এগোচ্ছে বিদ্যাপীঠ। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই লেখাটির মধ্য দিয়ে পাঠকদের জানাতে চাই, কীভাবে সমন্বয় করে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। গত বছর এপিএএনএর এক বৈঠক শেষে করোনাকালে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি, নতুন নীতিমালা ও এপিএসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে বাউবির উপাচার্য, আন্তর্জাতিক গবেষক ও ভূ-তত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার স্যারের সঙ্গে আলাপ হয়। বুঝলাম, ৩০ বছরে ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে বাউবির স্ট্র্যাটেজি। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়েছে বহুদূর! রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য বহির্বিশ্বে বাউবির স্টাডি সেন্টার, শিক্ষাক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় দেশে দ্বিতীয় ও বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তম একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে ইউজিসির সঙ্গে বাউবির মূলত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ, কর্মকাণ্ড ও আইনি যোগসাজশ নিয়ে একটু আলোকপাত করতে চাই। আজকের এই লেখাটি মূলত বাউবিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই। কারণ, বাংলাদেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হলো আইন সংক্রান্ত। অর্থাৎ একটি মাত্র আইন দ্বারা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। পক্ষান্তরে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় নিজস্ব আইন দ্বারা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দুই ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এর একটি হলো- স্বায়ত্তশাসিত, অন্যটি হলো- সংবিধিবদ্ধ। যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত বা পুনর্গঠিত এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট আছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত। এর বাইরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংবিধিবদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গঠনততন্ত্র, প্রতিষ্ঠা, ধরন এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছয়ভাবে বিভক্ত। জেনারেল, বিশেষায়িত, কৃষি, প্রকৌশল, মেডিকেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। দূরশিক্ষণ হিসেবে বাউবি বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান। সব সময় ইন্টারনেট, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বাউবির কার্যক্রম চলছে দুর্বার গতিতে।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শুধু একাডেমিক বিষয়গুলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দেখভাল করে। অপরদিকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তথা হাসপাতাল পরিচালনার অংশটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখভাল করে থাকে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলরের সচিবালয় হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দেশের পাবলিক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজস্ব জনবল দিয়ে কিংবা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। এছাড়া কখনো কখনো দুর্নীতি দমন কমিশনও এ ধরনের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক : পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, একে ছাড়া অন্যে অচল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বার্ষিক বাজেট সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ করে তা অনুমোদন করিয়ে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে থাকে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নতুন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও সেন্টার খোলার অনুমোদন প্রদান করে থাকে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা ও আসবাবপত্র ক্রয়ের নিমিত্তে দেশি ও বিদেশি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে অর্থের সংস্থান করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ নিবিড় সম্পর্ক মূলত শিক্ষার সম্প্রসারণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সম্মানিত শিক্ষকগণের গবেষণাধর্মী পুস্তক এবং গবেষণামূলক জার্নাল প্রকাশের জন্য ‘ইউজিসি স্বর্ণ পদক’ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীগণের মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক’ প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি, প্রবিধি, সংবিধি এবং অর্গানোগ্রাম প্রণয়নে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা প্রদান করে থাকে। কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিরপেক্ষ তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে উপস্থাপন করে থাকে ইউজিসি।
দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ই-লাইব্রেরির সুবিধা প্রদান, অভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে ইউজিসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ এ কার্যক্রম বিস্তর এক কর্মযজ্ঞ। কারণ তিনটি ভিন্ন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি যদি স্থবির হয় তবে এর প্রভাব উচ্চশিক্ষা পরিবারের প্রতিটি সদস্য এমনকি শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ে। বাউবির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীদের প্রতি রইল শুভাশিষসহ প্রাণঢালা অভিনন্দন। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্য ভূমিকা পালন করুক, সেই প্রত্যাশা করছি। বাউবি এগিয়ে যাক আপন আলোয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

লেখক : ড. ফেরদৌস জামান
সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়