৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি : গাইবান্ধায় জি এম কাদের

আগের সংবাদ

শারদীয় দুর্গোৎসব : শুভ চেতনা সঞ্চারিত হোক সবার মনে

পরের সংবাদ

বেসরকারি পরিবহনে সেবার মান বাড়লেও কমেছে বিআরটিসির

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম. কে. রানা, বরিশাল থেকে : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেসরকারি পরিবহন সেক্টরে নিত্য নতুন ও উন্নত সেবা নিয়ে বিলাসবহুল বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। বেসরকারি পরিবহনগুলোতে যাত্রী সেবার মান বাড়লেও কমেছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির। জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিআরটিসি বাসগুলো। আর এ কারণে সরকারি এ পরিবহন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যাত্রী সংকটে এরই মধ্যে কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক রুটে ধীরে ধীরে কমে আসছে বাসের সংখ্যাও।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিআরটিসি বাস যাত্রী সেবা দিয়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ আয় করলেও বর্তমানে যাত্রী সংকটে ভুগছে বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপো। সঠিক পরিচালনার অভাবকে দায়ী করে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শুধু মুনাফা নয়, বিআরটিসির সুনাম ধরে রাখতে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
বিআরটিসি বাস ডিপো সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে বিআরটিসি বরিশাল ডিপোটি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক সরকার ডিপোটি বন্ধ করে দেয়। ১৯৮৭ সালে পুনরায় বাস ডিপো চালু হওয়ার পর থেকেই জোড়াতালি দিয়ে চলছে সরকারি এ সংস্থার বরিশাল শাখাটি। জানা গেছে, ডিপোতে বর্তমানে ৫৩টি বাস যাত্রী সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ভারী যন্ত্রাংশ মেরামতে রয়েছে ১টি। এছাড়া হালকা মেরামতে বাস রয়েছে আরো তিনটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসির এক কাউন্টার মাস্টার জানান, ডিপোর ৪৯টি বাস গড়ে প্রতিদিন রাস্তায় চলাচল করার কথা। কিন্তু বাস্তবে কোনোদিন ১২ এবং কোনোদিন ১৭টি বাস চলাচল করে। কারণ বাসগুলো চলাচলের অনুপযোগী। তাছাড়া চালক ও হেলপারদের ব্যবহার ভালো না। তারা যেখানে খুশি সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। প্রায় প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও রাস্তার মধ্যে গাড়ি অচল হয়ে যায়। তিনি জানান, ২৫ বছর ধরে কাউন্টার মাস্টারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত বিএনপি সরকারের সময় যে বাস আছে, সেই বাসই সংস্কার করে এখনো চলছে। বর্তমান সরকারের সময় কয়েকটি এসি বাস এলেও অধিকাংশ এসি-ই নষ্ট। অনেক গাড়ি ডিপোতে মেরামতের জন্য পড়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কাউন্টার মাস্টার জানান, বাসগুলো গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই যাত্রী নিয়ে যান্ত্রিক গোলযোগে বিভিন্ন রুটে দাঁড়িয়ে যায়। পথে বাস দাঁড়িয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে না পেরে তাদের কাছে এসে অভিযোগ করেন।
বিআরটিসি বরিশাল বাস ডিপোর ট্রাফিক ইনচার্জ মশিউর রহমান বলেন, বরিশাল থেকে পাথরঘাটা, কুয়াকাটা, আমুয়া, তালতলী, মঠবাড়িয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা রুটে চলাচল করছে বিআরটিসির বাস। যাত্রী সংকটের কারণে গত চার বছর ধরে বরগুনা এবং বেনাপোল রুটে বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। এছাড়া কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, বাউফল, বেতাগী, ভাণ্ডাারিয়া এবং বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে প্রতিদিন ১৭টি এসি বাস চলাচল করছে। তবে এসব বাসের অধিকাংশ এসি এখন সচল নেই বলে জানা গেছে।
ঢাকা থেকে বরিশালে আসা যাত্রী কাওছার হোসেন বলেন, সরকারি এই বাসে একজন যাত্রীর ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা নেই। সরাসরি রুটের টিকেট কেটে লোকাল বাসের মতো রাস্তা থেকেই যাত্রী নেয়। এক ঘণ্টার পরিবর্তে দুই-আড়াই ঘণ্টা লাগে গন্তব্যে পৌঁছতে। এসব কারণে অনেক যাত্রী এখন এই বাসে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এসি বাসের ভাড়াও নিচ্ছে দ্বিগুণ। বাসের ভেতরেও নেই পরিবেশ। নোংরা, ময়লা স্তূপ থাকে। তাছাড়া চালক ও সুপারভাইজারের ব্যবহারও ভালো না।
একই অভিযোগ করেছেন খুলনাগামী যাত্রী লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে ঢাকাগামী পরিবহন বাড়লেও বিআরটিসি বাসের সংখ্যা দেড় যুগ আগে যেমন ছিল, তেমনি রয়েছে। সরকারি হলেও লক্কড়ঝক্কড় বাস দিয়েই সেবা দেয়া হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত ভাড়াও নেয়া হচ্ছে।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিআরটিসি বাস যাত্রী সেবা দিয়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ আয় করেছে। এছাড়া প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৪৫ লাখ টাকা মুনাফা করছে বলে দাবি করেন হেড ক্যাশিয়ার (হিসাব ইনচার্জ) ফারুক আহম্মেদ।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সাবেক সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা বলেন, বেশি আয় আর মুনাফা দেখিয়ে সরকারি এই সংস্থাটি দায়ভার এড়াতে পারে না। স্বাধীনতার চার বছর বিআরটিসি বাস যাত্রী সেবায় ভালো ছিল। কিন্তু এরপর তারা তাদের সুনাম ধরে রাখতে পারেনি। সরকার যাত্রী সেবায় ভালো মানের বাস আনলেও তা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না কর্মকর্তারা।
বিআরটিসি বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার মো. জামশেদ আলী মোবাইফোনে বলেন, যাত্রী সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি, বিআরটিসি তার পুরনো সুনাম ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়