৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি : গাইবান্ধায় জি এম কাদের

আগের সংবাদ

শারদীয় দুর্গোৎসব : শুভ চেতনা সঞ্চারিত হোক সবার মনে

পরের সংবাদ

‘আমার শ্বশুরবাড়ির দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল ঢাকার বিক্রমপুরে’

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের দুর্গাপূজার ধারা ধরে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জের চট্টোপাধ্যায় পরিবার। সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গাপূজা মানেই যেন বিশেষ কিছু। ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছে পূজার আদ্যোপান্ত শেয়ার করলেন তিনি। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপূজা কত বছরের পুরনো? এবার কত বছরে পা দিল এই বাড়ির পূজা?
সুদীপা : আমার শ্বশুরবাড়ির এই দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। আমার শ্বশুরমশাইরা যখন বিক্রমপুর থেকে কলকাতায় চলে আসেন, তখনকার কোনো নথি পাইনি। ঠিক কত বছরের পুরনো এই পূজা। তবে মা দুর্গার গলার একটা ময়ূর আছে, যেটার বয়স ১৪৩ বছর। সেই অনুযায়ী হিসাব করলে এ বছর আমাদের পূজা ১৫৩ বছরে পা দিল। কলকাতায় আমাদের বাড়িতে পূজাটা করছি ১২ বছর। জায়গা পরিবর্তন হলেও পূজা কিন্তু আবহমান।

আপনাদের বাড়ির প্রতিমার বিশেষত্ব কী? ঠাকুরের গহনায় কোনো বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে?
সুদীপা : আমাদের প্রতিমা টানা টানা চোখের সাবেকি আটবাংলার মূর্তি। আমাদের গৌরী মূর্তি হয়। মূর্তি তৈরির বিশেষত্ব হচ্ছে, আমার হাতের রক্ত দিতে হয়, তবেই মায়ের মুখের রং আসে। তারপর গর্জন তেল দেয়া হয়। এই অলৌকিক গল্পটা হলো, আমাদের মা দুর্গার কাঠামো পূজা হয় রথের দিন। একবার আমি রথের দিন মুম্বাইতে ছিলাম। তখন আমার স্বামী অগ্নিদেবের হিন্দি ছবির কাজ চলছিল। কলকাতা-মুম্বে সামলাতে হতো ওকে। এদিকে আমার তখন রথের দিন কাঠামো পূজার জন্য বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু আমার তখন বরকে ছেড়ে কলকাতায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না। আমি বরকে বললাম- ‘থেকে যাই না গো’। ওর তো কোনো ব্যাপার নয়, বলল ‘ঠিক আছে থেকে যাও।’ রথ পেরিয়ে পূজার সময় এলো। কলকাতা ফিরে এসেছি ততদিনে। সে বছর ঠাকুর যখন এলো, দেখলাম সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখতে প্রতিমা। মা যেন কিরকম রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মুখটা পুরো হলুদ। আমি মায়ের রাগী রূপ দেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। তখন আমি একটু রেগে গিয়েই মৃৎশিল্পীকে বললাম, এ রকম কেন মূর্তি বানিয়েছেন! তিনি বললেন ‘ঠিক আছে, আমি রাত্রে আসছি।’ রাত্রে তিনি আসার পর মাকে আবার রং করা হলো। তবু মায়ের মুখটা বিষাদপ্রতিমা লাগছিল। যেন রক্তশূন্য মুখখানা। তখন হঠাৎ প্রতিমা শিল্পী পশুপতি রুদ্রপাল, যিনি মোহনবাঁশী রুদ্রপালের ভাইপো। আমায় বললেন, ‘আপনি আমায় একটু রক্ত দিতে পারবেন?’ আমি তো অবাক! বললাম, ‘সে আবার কী?’ তারপর তার কথামতো সুচ আগুনে পুড়িয়ে আমার হাতে ফুটিয়ে একটু রক্ত দিলাম। আমার রক্ত মায়ের রঙে মিশতেই পলকের মধ্যে সত্যি মুখটা পাল্টে গেল। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। তারপর থেকে এটাই নিয়ম হয়ে গেছে আর কী! স্ত্রী-আচার তো এমনই হয়।

এবারের পূজার প্রস্তুতি কেমন চলছে?
এই বাড়ির পূজার বিশেষত্ব কী?
সুদীপা : শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। আমাদের বাড়ির পূজার বিশেষত্বের সঙ্গে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়ির পূজার মিল আছে। ত্রিধারা মতে, পূজা হয়। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত তিনটি মতের সম্মেলনে আরাধনা করা হয় মাকে। বোধন থেকে সপ্তমীর সকাল পর্যন্ত পূজা হয় বৈষ্ণব মতে। সপ্তমীতে শিব আসেন, তাই সেই সময় থেকে অষ্টমী পর্যন্ত পূজা হয় শৈব মতে। সন্ধিপূজার পর থেকে দশমী পর্যন্ত তন্ত্র মতে পূজা হয়। বলিদান ও সন্ধিপূজার পর থেকে মা দুর্গা আমিষ ভোগ খান। নিরামিষ মাংস থেকে শুরু করে সাত রকমের মাছ দেয়া হয় সেই ভোগে। নবমীতে মা খান পদ্মার ইলিশ আর দশমীতে গঙ্গার ইলিশ। দশমীতে মাকে গঙ্গায় ভাসান দেয়ার পর সরস্বতী পূজা পর্যন্ত আমরা আর ইলিশ মাছ খাই না।

পঞ্চমী থেকে দশমী, একা হাতে পূজা
সামলানোর চাবিকাঠি কী?
সুদীপা : একা হাতে পূজা সামলানোর চাবিকাঠি মায়ের হাতেই আছে, আমার হাতে নয়। ‘আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা, আমি যে পথ চিনি না’-এর মতোই নিজেকে মায়ের কাছে সমর্পণ করে দিই। পঞ্চমীতে মায়ের আমন্ত্রণ হয়। সপরিবারে মা বাড়ি আসেন। সব থেকে বড় কথা, আমাদের সিংহও বাপের বাড়ি ফেরে। আমাদের কাছে মায়ের মতোই সিংহ ভীষণ আদরের। মায়ের যা যা গহনা আছে, সিংহেরও সেই সেই গহনা আছে আমাদের। সোনা-রুপার মুকুট, মানতাসা সিংহকে পরানো হয় মায়ের মতোই। আমন্ত্রণের সময় মহিষাসুরকেও আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়া হয়। আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মায়ের মুখ-হাত-পা মুছিয়ে মাকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ভোগের আয়োজনে কী কী থাকে?
সুদীপা : সপ্তমী থেকে অন্নভোগ দেয়া হয় মাকে। একেকদিন একেক চালের ভোগ হয়। সপ্তমীতে গোবিন্দভোগ পান মা। ঢাকার পূজা যেহেতু, তাই ঢাকা থেকে চিনিগুড়া চাল আসে অষ্টমীতে, সঙ্গে ঢাকার ঘি দিয়ে মাখা পোলাও। সন্ধিপূজাতে দেয়া হয় রাধাতিলক চালের অন্নভোগ, নবমীতে তুলাইপাঞ্জি। আর সবশেষে দশমীতে বাঁশকাঠি সেদ্ধ চালের পান্তা। সঙ্গে কচুর শাক, শাপলার টক। প্রতিদিনই সকালে ফলাহার দেয়া হয় মাকে। মহাভোগে থাকে বড় একটা থালায় ভাত, ঘি, লুচি, সবজি ভাজা, সাত রকমের মাছের পদ, আনারসের চাটনি, পায়েস, মিষ্টি, পান।

সুদীপা ভোগে কোন পদটা রাঁধেন?
সুদীপা : এ বছর ইলিশ মাছটা আমায় করতে হবে। প্রতিবারই আমার মা রাঁধতেন। কিন্তু এবার তিনি অসুস্থ। নিরামিষ মাংসটা আমি রান্না করি। বাকি তো সবাইকে ভাগ করে দিতে হয়। সবাই মাকে নিজের হাতের রান্না খাওয়াতে চায়। আমাদের বাড়ির একটা নিয়ম মেয়েরা ভোগ রাঁধবে আর ছেলেরা পরিবেশন করবে। কিন্তু পায়েসের বেলা ঠিক উল্টো। ছেলেরা পায়েস রাঁধবে মেয়েরা নিবেদন করবে।

এ বছর সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের পূজার
সাজে কী চমক থাকছে?
সুদীপা : এ বছর আমার মায়ের ম্যাসিভ ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল এবং আমার স্বামী অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের একটা হালকা অ্যাটাক হয়ে গেছে। ল²ীপূজার পরেই অগ্নিদেবের বাইপাস সার্জারি হবে। তাই এ বছর মন খারাপ থাকায় সাজগোজ একটু কমই হবে। সাদামাটাভাবেই থাকব, গহনা যা আছে, অল্প কিছু পরব। সবাই এত উপহার দেন যে, নিজের জন্য আলাদা করে শাড়ি কেনা হয় না। তাঁতীরা আমায় শাড়ি উপহার দেন। অভিনেতা রাজেশ শর্মার মা আমাকে পূজার শাড়ি সিল্ক গাদোয়াল পাঠিয়েছেন। একটা বেনারসী হয়েছে, সেটা পরব একদিন। বাড়িতে পূজা থাকলে নিজে সাজার আর সময় থাকে না আমার।

মুনমুন সেন থেকে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কিংবা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো আপনাদের পূজার অতিথি ছিলেন। কোনো স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে?
সুদীপা : আমি আসলে মুনমুন সেনের খুব ফ্যান। তার সেন্স অব স্টাইল আমার খুব ভালো লাগে। মুনমুন সেন একবার আমাদের বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে নামছেন, আর আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠছি। আমাকে দেখে বললেন, ‘শোন, তোমার এই কানবালাটা ভীষণ সুন্দর। মা খুব বড় বড় দুল পছন্দ করতেন। তোমার দুলগুলো পরা দেখে আমার মা সুচিত্রা সেনের কথা খুব মনে পড়ে।’ এটা আমার কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি ছিল। জীবন এগিয়ে নিয়ে যেতে মুনদি আমায় অনেক সাজেশন দিয়েছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, তখন তিনি ক্রিকেট খেলছেন। তাই সবার মধ্যে আরো উৎসাহ, ভিড়ও প্রচণ্ড! আমার মনে আছে, তিনি আমাদের বাড়িতে বসে খুব আয়েস করে মায়ের ভোগ খেয়েছিলেন। আর বুম্বাদা তো আমাদের বড় দাদা। প্রতিবারই আসেন। ঋতুদির গোটা পরিবার আমাদের বাড়িতে আসেন। এক বছর হোম হয়ে যাওয়ার পর সবাইকে টিপ পরিয়ে দিয়েছেন পুরোহিত মশাই। ঋতুদি হঠাৎ বললেন, ‘একি যার বাড়ি তাকেই কেউ হোমের টিপ পরায়নি। তুই পর।’ এই বলে ঋতুদি নিজ হাতে আমাকে হোমের টিপ পরিয়ে দেন।

স্বামী-ছেলের পূজায় কী প্ল্যান?
সুদীপা : আমাদের বাড়ির তিনজন পুরুষ মানুষ। আমার বর অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়, আর আমার দুই ছেলে আকাশ চট্টোপাধ্যায় ও আদিদেব চট্টোপাধ্যায়। আমার স্বামী পূজায় বসেন। অগ্নিদেব হোস্টেলে পড়ার কারণে তার উপনয়ন হয়নি ছোটবেলায়। পরে বড় বয়সে উপনয়ন হয়, পৈতে নেয় শুধু দুর্গাপূজা করবে বলেই। আকাশ আর আদিদেবের কাজ হলো নতুন জামা পরে ঠিক সময়ে বাড়িতে ঠিক জায়গায় থাকা। আকাশ বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে থাকে। তবে আমি বলি বাড়িতেই মায়ের সামনে থাকো। আকাশের নতুন রেস্টুরেন্ট হয়েছে, সেসবেও ব্যস্ত। ছোট ছেলে আদি ঢাকিভাইদের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলে। আর নো পড়াশোনা। সিংহকে আদিদেব খুব ভালোবাসে।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়