র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু : কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া : নাশকতা মোকাবিলায় সতর্ক পাহারায় আ.লীগ, মহাসমাবেশের ঘোষণা দেবে বিএনপি

পরের সংবাদ

মেহেরপুরে পাটের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে পাটকাঠি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : মেহেরপুরে এবার পাটচাষিদের মাথায় হাত। অল্প বৃষ্টিতে একেতো ফলন কম, অন্যদিকে কাক্সিক্ষত দাম নেই পাটের। ফলে লাভের আশায় পাট চাষ করলেও অনেক চাষিই হতাশ হয়েছেন। তবে পাটের লোকসান অনেকখানি পূরণ করেছে পাটকাঠি।
জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। কবছর আগেও চাষিরা পাটকাঠি শুধু নিজের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখলেও এখন তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। বর্তমানে জেলায় পাটকাঠি প্রতি মণ (৪০ কেজি) ৩০০ টাকা এবং প্রতি ভ্যান ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে মেহেরপুরে পাট ধোয়ার পর পাটকাঠি শুকানোর কাজ চলছে। গ্রামীণ সড়কের পাশে মাইলের পর মাইলজুড়ে পাটকাঠি শুকানো চলছে। যা সবার দৃষ্টি কাড়ছে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মেহেরপুরে এবার ২২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে বেশি। তবে আঁশের দাম না পেলেও পাটকাঠির দামে পুষিয়ে যাচ্ছে বলে জানান অনেক চাষি।
সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পাটকাঠি কোথাও আবার পাটখড়ি নামেও পরিচিত। আগে জ্বালানির বাইরে পাটকাঠির তেমন ব্যবহার ছিল না। কিছু ভালোমানের পাটকাঠি পানের বরজে আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন আর এটি মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না। বাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় পাটের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়। পাটকাঠি দিয়ে বোর্ড, ফোম, বেড়া, বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। ফলে এর চাহিদা বাড়ছে।
আরেক পাটচাষি বাবলু বিশ্বাস জানান, কয়েক বছর আগেও পাটখড়ির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন। পাটে লোকসান হলেও পাটকাঠিতে পুষিয়ে যাচ্ছে। শুধু পাট বিক্রি করেই নয়, এবার পাটখড়িও আমাদের এলাকায় কৃষকের আশা জাগিয়েছে।
উজলপুর গ্রামের সাবিররুল বলেন, পাটকাঠি একসময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এই পাটকাঠি পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বাইরের জেলা থেকেও ফড়িয়ারা পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
পিরোজপুর জেলা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমান জানান, সাত বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন। এখন জেলায় প্রায় এক ডজন কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তিনি এসেছেন মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে পাটকাটি কিনতে।
সাতক্ষীরা জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ী সামসুর রহমান জানান, আগের মতো আর কম দামে পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। আলমডাঙ্গা থেকে আসা ব্যবসায়ী কাবিদুল জানান, আলমডাঙ্গায় প্রচুর পান চাষ হয়। বরজে পাটকাঠির বেড়া দিলে ভালো হয়। তাই পাইকারি দামে পাটকাঠি কিনতে এসেছি। ৫৫০ টাকা করে ১০ মন কেনা হয়েছে। আরো খুঁজছি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, পাটকাঠির বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। এটি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্যও বলা যায়। এখনো মেহেরপুর থেকে রপ্তানি শুরু হয়নি, তবে সম্ভাবনা রয়েছে। মেহেরপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, জেলায় এবার মোট ২২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের রং না আসায় এবং বড় কিছু মিল বন্ধ থাকার কারণে পাটের বাজারে দাম কম। এতে কৃষকরাও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে এই পাটকাঠি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়