নব্বইয়ের ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির মৃত্যু

আগের সংবাদ

সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের

পরের সংবাদ

নৈতিক শিক্ষা বিবর্জিত সৃজনশীল শিক্ষা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের সমাজে শিক্ষকরা শিক্ষকতা পেশায় কতটুকু আদর্শিক হতে পারছেন তা বহুবিচিত্র ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে কখনো কখনো একটি জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা হয়ে দেখা দেয়, যা এই স্বল্প পরিসরে সবিস্তারে বিবৃত করা সম্ভব নয়। গত ৮ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে কর্তব্যরত এক শিক্ষক দশম শ্রেণির এক ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রটি শিক্ষককে কক্ষের সব ছাত্রের সামনে চড়-থাপ্পড় মারে, যার ভিডিও রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পরের দিন ৯ অক্টোবর পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আরজ বেগি এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্র নির্বাচনী পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করায় প্রধান শিক্ষক তাকে অশ্রাব্য ভাষায় অপমান পূর্বক চড়-থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত করেন। পরে ছাত্রটি অভিমানে আত্মহত্যা করে। উল্লেখ্য, ছাত্রটি ওই বিদ্যালয়েরই সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃত গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তীর ছেলে। আর্থিক অনটনের কারণে সে ফি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক মর্মে সাধারণ মানুষের মনে দাগ কেটেছে। ঘটনা দুটির বৈশ্লষণিক ব্যবচ্ছেদ (ধহধষুঃরপধষ ফরংংবপঃরড়হ) করলে- ১ম ঘটনায় ছাত্রের এবং ২য় ঘটনায় শিক্ষকের নৈতিক দৈন্যতার হিংসাত্মক চিত্র ভয়াবহ রূপে ফুটে উঠেছে! বলাবাহুল্য, এ জাতীয় ঘটনা আমাদের শিক্ষা সমাজে নতুন কিছু নয়। প্রশ্ন জাগে, দিন দিন শিক্ষা সমাজ কেন এমন অসহিষ্ণু ও হিংসাত্মক হয়ে উঠছে? তবে কি শিক্ষা প্রণয়ন ও প্রয়োগের মধ্যেই কোনো গলদ লুকিয়ে আছে? এগুলো এখন সময়োচিত জিজ্ঞাসা। ২০০০ সালের আগের দশকগুলোতে শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন ঘটতে দেখা যায়নি। তখন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধা-ভক্তির শিষ্টাচার কাজ করত। কোনো কারণে শিক্ষকের আশীর্বাদ ও স্নেহচ্যুতি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সতর্ক থাকত। পাশাপাশি শিক্ষকরাও নিজেদের শ্রদ্ধাশীল ও আদর্শিক অবস্থানকে সযতেœ লালন করত। কোনো কারণে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর ওপর শাসন-অনুশাসন চালালেও পরে ওই শিক্ষকের পিতৃ-মাতৃতুল্য স্নেহের আবেশে শিক্ষার্থীর মননে পরিশুদ্ধ বোধের চেতনা জাগত। শিক্ষকদের আদর্শিক ব্যক্তিত্ব এত প্রখর ছিল যে, পাড়ার উচ্ছৃঙ্খল যুবক বা সন্ত্রাসীরাও রাস্তাঘাটে শিক্ষকদের দেখলে অনেক সময় লুকিয়ে যেত অথবা শ্রদ্ধাবনত হয়ে সম্মান জানাত। কোথায় গেল সেই দিনগুলো? তবে এখন আমরা কী শিখছি, কী শেখাচ্ছি?
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শিশু উপযোগী হয়ে ওঠেনি। অধিকাংশেরও বেশি শিক্ষক শিশুবান্ধব শিক্ষাদানে পারদর্শী নন। উল্লেখ্য, প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে শিশুদের পড়াশোনায় শিক্ষকরা যতটা যতœশীল তার ধারে-কাছেও সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা নেই। অথচ শহরকেন্দ্রিক অনেক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা মাত্র ১৫০০-২০০০ টাকা মাসিক বেতনেও শিক্ষা দান করছেন। আর মফস্বল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের অবস্থাতো খুবই করুণ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এ দুটি বয়সি শিক্ষার্থীদের কোমল মননে যত সহজে শিক্ষা ও দীক্ষার বীজ বপন করা যায় তা অন্যতে এত সহজে যায় না। মূলত পাঠ, অনুধাবন, আত্মস্থকরণ ও প্রয়োগ- প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এই চার মূলকৌশলকে আয়ত্ত করে শিক্ষার্থীদের চিন্তার প্রসারতা বাড়াতে সৃজনশীল পদ্ধতির অবতারণা করা হয়। ২০০৮ সাল থেকে তা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়ে ২০১০ সাল থেকে তা পূর্ণরূপে চালু হয়। উন্নত বিশ্বের সফলতা অনুকরণে এ পদ্ধতি চালু হলেও বাংলাদেশে এর সফলতা এখনো যথেষ্ট লক্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। কেননা সৃজনশীল পদ্ধতি চর্চার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক ধারণার বাইরে যে তাত্ত্বিক ও তাথ্যিক সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তা অধিকাংশ শিক্ষকের মধ্যে নেই। প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠাগার সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যপুস্তকের বাইরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সুচিন্তার প্রসারতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ সব পাঠাগারের প্রচলন করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য ৯৯ শতাংশ ছাত্র ও শিক্ষক লাইব্রেরি ওয়ার্ক করেন না। এটি হলফ করে বলা যায় যে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৯৯ শতাংশ পাঠাগারই অকার্যকর থাকে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা চর্চার বেহাল দশার কথা তো এখন মুখরোচক গল্পে পরিণত হয়ে গেছে। আজকের শিক্ষার্থী আগামীতে শিক্ষক। শিক্ষানীতি বা শিক্ষাক্রমের পরিমার্জন যে আঙ্গিকেই হোক না কেন, নৈতিকতাপুষ্ট সৃজনশীল শিক্ষার এই নীতিবোধ যেন শিক্ষার্থীর জীবনে আমরণ অটুট থাকে। তবেই দূর হবে সব আঁধার। সার্থকতা পাবে শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক।

কাজী মাসুদুর রহমান, প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়