নব্বইয়ের ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির মৃত্যু

আগের সংবাদ

সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের

পরের সংবাদ

জায়গাটা ফিলিস্তিনিদের দখলদার ইসরায়েল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এই কথাটায় বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা সবাই একসঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, কেউ কেউ করেন না। কারণ তারা ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতায় যাওয়ার যে তরিকা, সেখানে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। মানুষ, মানবিকতা ও মানুষের অধিকার- এ বিষয়গুলো তারা ফ্রন্টলাইনে রাখেন নিজেদের চেহারার বিকৃতি ঢেকে রাখার জন্য। তারা যে মানবিক মানুষ নন, তারা যে ইতরতর প্রাণী, সেটা প্রমাণের জন্য যুক্তির ঘাটতি হবে না। কারণ প্রতিদিনই মানুষের নিকৃষ্ট ও ইতরতর কাজের উপাত্ত আমরা দেখে অভ্যস্ত হয়েছি।
কথাগুলো বললাম সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত সেখানকার সশস্ত্র দল হামাসের আক্রমণের পর। গাজায় হামাস যে তলে তলে নিজেদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এতটাই সংগঠিত হয়েছে, সেটা খোদ দখলদার ইসরায়েলও বুঝতে পারেনি। তারা হতবাক হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর জেরেই ক্ষমতা হারাতে পারেন বলে বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দিন দশেক ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জুজুবুড়ির ভয়ের কথা বলে আসছেন। অসংখ্যবার তিনি ইরানে হামলার হুমকি দিয়েছেন। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি বলেন, তেহরানকে অবশ্যই ‘বিশ্বাসযোগ্য পারমাণবিক হুমকির’ মুখোমুখি হতে হবে। অবশ্য তার কার্যালয় পরে সংশোধন করে বলে, ‘বিশ্বাসযোগ্য সামরিক হুমকি’।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্ভবত তার সেই হুমকির বাস্তবরূপ দেখতে পাচ্ছেন। দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার ভয়াবহ সেই দৃশ্যপট আরো বড় সংঘাতে জড়ানোর জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাচ্ছে।
বোঝা যায়, দখলদার ইসরায়েল উসকে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি। কেন তারা এমনটা করছে, তার একটি বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারি আমরা। গত দুই বছরের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেই বেরিয়ে আসবে তার আসল কারণ। আমেরিকার হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিকভাবে বলীয়ান দেশগুলো। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে চীন এবং রাশিয়ার। সেখানে আমেরিকার হয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করছে ইসরায়েল। সেই কাজে শিখণ্ডি ইসরায়েল ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নির্মম হামলা চালিয়ে যে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তারই সামরিক জবাব হামাসের আক্রমণ। ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সামরিক হত্যাযজ্ঞের বিপরীতে ইট আর পাটকেলের প্রতিবাদ করে এসেছে। কিন্তু তারা দেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গুলির বিপরীতে পাথরের টুকরো কোনো প্রতিরোধ তৈরি করতে পারেনি। তাই হামাস হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে অস্ত্র। তাদের মাতৃভূমি দখলদারমুক্ত করতে হবে- এটাই একমাত্র পথ।
এটা বোঝা যায় ফিলিস্তিনি মানুষের স্বাধীনতার প্রধান অন্তরায় দখলদার ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক মুরব্বি হচ্ছে আমেরিকা ও তার সামরিক অ্যালি ইউরোপিয়ান দেশগুলো, যারা ইসরায়েলের পতনের হোতা। আবার আমেরিকা ও ব্রিটেনের ছায়াসঙ্গী হয়ে এতকাল কাটিয়েছে সৌদি আরব ও ওই এলাকার তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো। তারা প্রযুক্তির সহায়তার বিনিময়ে নিজেদের দেশের সম্পদ শুষে নিতে বাটোয়ারা গেছে। তাছাড়া তাদের জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তেমন কোনো সুসম্পর্ক নেই বা ছিল না। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। সেটা প্রথম জানান দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ সালমান। গোটা বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ভেতর দিয়ে নিজেদের স্বকীয় চিন্তার স্বাধীনতার পতাকা তুলেছে তারা। এখন সৌদি আরবের পাশে কেবল আমেরিকা নয়, এসেছে চীন ও রাশিয়া। ফলে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ছকটি অতি ধীরে হলেও পাল্টে যাচ্ছে। এর সূচনা অনেক আগে থেকে হলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ভেতর দিয়ে তার একটি রূপ আমরা দেখে চলেছি। স্যাংশন ও অর্থ ব্যবস্থার ডলারের আধিপত্য রুখে দেয়ার জন্য রাশিয়া ও চীন নতুন চিন্তার সূচনা করে। ব্রিকস গড়ে তুলে তার অর্থনৈতিক পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুন বিন্যাস দিতে চাইছে তারা, পণ্যের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের প্রয়োজনকে বাদ দিয়ে নিজেদের অর্থে সম্পন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়ার রুবল ও চীনের ইউয়ানকে নতুন অর্থ ব্যবস্থায় ব্যবহার করে ডলারের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য কমানোর লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিনি চাপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা। আর সেই প্রয়াসে যোগ দিয়েছে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সেই দলে আছে ভারতও। চীনের সঙ্গে সামরিক ও ভূমি-সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ থাকলেও যখন ব্রিকসের সদস্য হিসেবে তারা এক টেবিলে অভিন্ন স্বার্থ কায়েমের আলোচনায় বসছে, তখন একে নতুন ডাইমেনশন হিসেবে বর্ণনা করা যায়। পৃথিবীর বড় অর্থনীতির দেশ চীন, রাশিয়া ও ভারতসহ গোটা বিশ্বের ধনিরা যদি ব্রিকসে জড়ো হয়, তাহলে মার্কিনি ডলারের দুর্দিন যে শুরু হয়েছে তা বোঝা যায়। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কিনে মার্কিনি মোড়লিপনাকে থোড়াই কেয়ার করেছে। ফসকে যেতে থাকা সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র তার শিখণ্ডি ইসরায়েলকে কাজে লাগাচ্ছে। নেতানিয়াহু সেই কারণেই জাতিসংঘের মতো বড় ও আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে পারমাণবিক বা সামরিক হুমকির কথা উচ্চারণ করেছে। সেই সঙ্গে ইরানকে খর্ব করার জন্য তার ওপর পারমাণবিক শক্তিপ্রয়োগের হুমকিও দিয়েছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের ওপর সামরিক বলপ্রয়োগের পথ খোলাসা করা। ইরান এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জানে ইরানকে শায়েস্তা করতে হলে সবার আগে পাকিস্তানকে নিজের দখলে নিতে হবে। আর সেটা করতে হলে ইমরান খানকে সরাতে হবে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অ্যালাইনমেন্ট পুঁজিবাদীদের সঙ্গে। তাদের দিয়ে ইমরানকে সরিয়ে শাহবাজের মতো একটি শিখণ্ডি বসানোর প্রয়োজন ছিল। ইমরান চেয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উঁচুস্তরে নিয়ে যেতে। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঐতিহাসিকভাবেই সম্পর্ক আছে। ট্রায়াঙ্গেলটিকে মারাত্মক মনে করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান, রাশিয়া আর পাকিস্তান যদি রাজনৈতিক ও সামরিক অ্যালাইনমেন্টে আসে তাহলে ভারত তেমন সুবিধা করতে পারবে না। আর ভারতেরও তো চিন্তা আছে যুক্তরাষ্ট্র যে দেশের বন্ধু, তার শত্রæর অভাব হবে না।
হামাস ইরানি সরকারের রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা পায়, এটা ওপেন সিক্রেট। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তেহরানকে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য পারমাণবিক হুমকির মুখোমুখি হতে হবে। তার এই বক্তব্য পরে যতই সংশোধন করা হোক না কেন, মনের ভেতরে তোলপাড় করতে থাকা কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে গেছে, যা মার্কিনি প্রশাসন চায়। সাধারণ পরিষদে মানুষ হত্যার এই হুমকিকে কেন পরিষদ নেতা আমলে নেয়নি এবং এই হুমকি যে বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করছে, সেটা জোরেশোরে উত্থাপন করেনি? কারণ তারাও কি মার্কিনি দালাল হিসেবে জাতিসংঘের মসনদে বসেছেন? যুক্তরাষ্ট্র চায় বিশ্বকে একটি সামরিক ভীতির নিচে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে। শিখণ্ডি ইসরায়েল তার সামরিক মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। আমেরিকান অ্যাক্টিবিস্ট, ভাষাবিজ্ঞানী ও চিন্তক ইহুদি নোয়াম চমস্কি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সন্ত্রাস উৎপাদন করে এবং তারা লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য তা ব্যবহার করে। দেশটি রাষ্ট্রনৈতিকভাবে সন্ত্রাসী। তিনি একবার অন্তত ইসরায়েলে যাওয়ার নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ ইসরায়েল মানবতাবিরোধী দখলদার ভূখণ্ড।
হামাস কেন ভেতর থেকে সশস্ত্র হয়ে উঠেছে এবং আক্রমণ করেছে, তার বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা এটা হতে পারে যে পাল্টে যেতে থাকা রাজনৈতিক বিশ্ব পরিস্থিতির লাগান টেনে ধরার সর্বশেষ চেষ্টা।
আবার পারমাণবিক না হোক প্রচলিত অস্ত্রের যুদ্ধ লাগিয়ে অস্ত্র উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের অস্ত্রগুলোর সর্বাত্মক ব্যবহার সুনিশ্চিত করতেই হাজার হাজার মানুষ হত্যার এই পরিকল্পনা বা প্রকল্প বলেও আমার ধারণা ও বিশ্বাস। পারমাণবিক যুদ্ধ কেবল পৃথিবীই ধ্বংস হবে না, এই গ্রহটির অস্তিত্বও বিলীন হবে। এটা বাইডেন যেমন জানেন, তেমনি ইব্রাহিম রাইসিও। জানেন পুতিন বা শি জিনপিং। অতএব পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে না। যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়ে বিশ্বকে একটি অনিশ্চিত অনিরাপদ পরিণতির শিকার হতে হবে বলে ভয় ও শঙ্কার মধ্যে ঠেলে দেয়ার এই মানবতাবিরোধী খেলাই আমরা দেখছি। এই সামরিক খেলা যে কোনো মুহূর্তে আগ্নেয়গিরির মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে, যা উদগীরণ করবে সেই রক্তাক্ত লাভা, যার ভয়ে আমরা আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের চূড়ায় এখন গাজার বসতিরা। তারা ধর্ম পরিচয়ে কি, তারও আগে আমাদের ভাবতে হবে যে ওই মানুষ হত্যার যজ্ঞে মানবতা রক্ষার কোনো উপাদান নেই। নিজেদের আগ্রাসী ভাবনার তাল রেখে বাইডেন প্রশাসন ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে একটি অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছে এর মধ্যেই। অর্থাৎ বাইডেন প্রশাসন মানবতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জায়নিস্টদের পক্ষ নিয়েছে। একইভাবে আমরা দেখলাম ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ক্ষমতাসীন দল পক্ষ নিয়েছে ইসরায়েলের আর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রেজ্যুলেশনে সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অর্থাৎ ভারতের সরকারি দল ও বিরোধী দল জায়নবাদিদের পক্ষে। এখানেই এসে ধর্ম ও সংস্কৃতি তার হিংস্র দাঁত বের করেছে। প্রতিপক্ষ যে ফিলিস্তিনি মুসলমান- এটাই মূল কারণ। ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে যে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি শিখণ্ডি স্থাপন করেছে ইসরায়েল নামে, সেই সামাজিক ও রাজনৈতিক-সামরিক অপরাধের বিচার কি আমরা করতে পারব?
মার খেতে খেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কী করতে হয়, প্রতিবাদী যোদ্ধারা সেটা জানে। ঘরে আবদ্ধ বেড়াল শেষাবধি প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হামাস সেই কাজটিই করেছে। মানুষ হত্যার এই ইসরায়েলি প্রকল্পে কেন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগী হলো? কারণ ওই দেশটি হচ্ছে ইসরায়েলের অন্যতম জন্মদাতা। ফলে সে ওই শিখণ্ডি বাঁচাতে অস্ত্র ও অর্থ দেবে, এটাই স্বাভাবিক। ইরান হামাসের পেছনে আছে এটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু ইসরায়েলের পেছনে অস্ত্র-অর্থদাতা যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা, সেটা ঐতিহাসিক সত্য।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানি মেয়ে মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, তিনি যুদ্ধের ভেতর নারী ও শিশুদের মানবেতর দুরবস্থা দেখেছেন। সেই অবর্ণাতীত বেদনার কথাই উঠে এসেছে তার টুইটার বার্তায়। আমরা জানি, এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই তার। যদি ১০০ নোবেল লরিয়েটও ফিলিস্তিনি হত্যার এই নবতর সংস্করণে লাভ হবে অস্ত্র উৎপাদকদের। এর বাইরে নিহত মানুষের স্তূপ আর আহত মানুষের আর্ত-হাহাকার আমাদের মর্মদাহী মানুষে পরিণত করেছে।
ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না। নেতানিয়াহুর জন্যও তেমনি একটি আঘাত অপেক্ষা করছে বলে মনে করা যায়।
ইতিহাসের নজির হিসেবে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর গোল্ডা মেয়ার, ১৯৮২ সালে প্রথম লেবানন যুদ্ধের পর মেনাখেম বেগিন এবং ২০০৬ সালের দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের পর এহুদ ওলমার্টের সরকারের পতনের কথা বলেছেন অমিত সেগাল।
উপাদানগুলো টেনে অমিত সেগাল বলেন, এখন নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রে ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করছে। এই অমিত সেগাল হচ্ছেন সিএনএনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সেগালের দৃষ্টি অনুসরণ করে আমি বলতে পারি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পতনের প্রথম ধাপটি এর মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তার সরকার একটি জাতীয় সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধি সেই জাতীয় সরকারের মধ্যে এসেছে। যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, তাহলে তার ক্ষমতার মসনদে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর মধ্যেই বলা হয়েছে তিনি পরাজিত হয়েছেন ফিলিস্তিনিদের হাতে। তারা জানতে ও বুঝতেও পারেননি যে হামাস শক্তি অর্জন করে ফেলেছে এবং শক্তিশালী হামলাও করে চলেছে। তার মানে ইসরায়েলি ইনটেলিজেন্স মোসাদ একটি অথর্ব ও মিথিক্যাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের পথ ধরেই নতুন ইতিহাস রচিত হয়। এবার কি তার ব্যতিক্রম হবে? না কি পুনরাবৃত্তি হবে? নাকি রচিত হবে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সনদ, নতুন ইতিহাস, যার অপেক্ষা করছে ওই সংগ্রাম ও নিগৃহীত জাতি?

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়