ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ১৩ জনের মৃত্যু আক্রান্ত ২৪২৫

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের নতুন কর্মসূচি : রাজপথ পাহারা দেয়া, দল চাঙ্গা রাখার লক্ষ্য

পরের সংবাদ

শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমি লজ্জিত!

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার যে চিত্র দেখলাম তারপর থেকে নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে! চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি জে) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে এক পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের এমন অবনতি পুরো জাতি ভোগের দ্বারপ্রান্তে এখন। কার বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবে? শিক্ষকরা কি ছাত্রদের এমন আচরণে আন্দোলনে যাবে নাকি সব শিক্ষার্থী শিক্ষকদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা চাইবে?
কী এক আশ্চর্য রকম লজ্জা! তবে যাই হোক সন্তানদের এমন আচরণ ও শিক্ষকের এভাবে বাধ্যতামূলকভাবে মেনে নেয়ার পরবর্তী ফল যে কতটা কঠিন ভবিষ্যৎ জানান দিচ্ছে তা কিন্তু স্পষ্ট। আমি লজ্জিত। যে বাচ্চারা কিশোর-কিশোরী হয়ে উঠছে তাদের শাসন করার পদ্ধতিগত পরিবর্তন না করে পুরো পরিবর্তন কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তা এখন ভাবার প্রয়োজন।
কোনো কাউন্সিলর নেই, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশকে প্রসারিত করা, যন্ত্রণাকে কমানোর কোনো মন্ত্রও নেই, তবে তারা তাদের এই দুরন্ত বয়সকে বাঁধবে কী করে?
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। কিন্তু কোন মিছিলে যাবে এই তারুণ্য, তা ঠিক করার মন্ত্র কে শেখাবে, কীভাবে শেখাবে। জীবন শৃঙ্খল নাকি মুক্ত, জীবন কোথায় অর্থবহ, কোথায় নিরর্থক এগিয়ে যাওয়া, কোথায় শাসনের সৌন্দর্য আর কোথায় তীব্র ভাবাবেগে রাগের বহিঃপ্রকাশ- এ কথাগুলো এখন অনেকটাই অনর্থক!
আমরা কোন পথে যাচ্ছি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে? রবীন্দ্রনাথের একটি কথা পড়লে আপনার শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা আরেকটু প্রসারিত হবে।
‘শিক্ষার সবার চেয়ে বড় অঙ্কটা বুঝাইয়া দেওয়া নহে, মনের মধ্যে ঘা দেওয়া।
* জীবনস্মৃতি। পিতৃদেব।’
কিন্তু উল্টো চিত্রে দেখা গেল শিক্ষার্থীর ঘা নিয়ে শিক্ষকের প্রচণ্ডরকম আক্ষেপের যন্ত্রণা! এগুলো দেখে দেখে কি আমাদের অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে? আমরা কি তবে খুব সহনীয়তার নামে সব মেনে নিচ্ছি? আর না নিতে চেয়েই বা করণীয় কী? মুক্তি মিলবে কীভাবে এত অনৈতিক আচরণ থেকে!
সেই বরীন্দ্রনাথের আরেকটি উক্তিই দেখুন :
যে শিক্ষা স্বজাতির নানা লোকের নানা চেষ্টার দ্বারা নানাভাবে চালিত হইতেছে তাহাকেই জাতীয় বলিতে পারি। স্বজাতীয়ের শাসনেই হউক আর বিজাতীয়ের শাসনে হউক, যখন কোনো একটা বিশেষ শিক্ষাবিধি সমস্ত দেশকে একটা কোনো ধ্রæব আদর্শে বাঁধিয়া ফেলিতে চায় তখন তাহা জাতীয় বলিতে পারি না- তাহা সাম্প্রদায়িক, অতএব জাতির পক্ষে তাহা সাংঘাতিক।
* পথের সঞ্জয়। শিক্ষাবিধি
কত বছর আগের কথাগুলো কীভাবে আমাদের কথা হয়ে টিকে থাকে তা যেন বারবার প্রমাণ করে আছেন এই রবিঠাকুর।
স্কুলজীবনের প্রস্তুতির জন্য তৈরি হওয়া উচিত নয়। স্কুলই জীবন হওয়া উচিত। এলবার্ট হার্বাডের এই কথায় যদি আমরা স্কুলকেই জীবন হিসেবে নিই- তবে এই স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রের জীবনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে।
সোজা একটি কথা বলতে চাই, তা হলো সব কিছু সহজে মেনে নিলে তার স্বীকৃতি দেয়া হয়ে যায়। এমন আচরণকে মেনে নেয়া যায় না। ধরে নিলাম শিক্ষকের অনেক দোষ ছিল। তাই বলে এমনটা হবে?
শিক্ষার্থীর ওপরে দোষ দেয়া হবে সবার আগে এমনটা নয়। এ পর্যায়ে যাওয়ার আগে ইতিহাসে যদি অনেক ব্যত্যয় থাকে দুজনের আচরণে তবুও এ সময়টি আসার আগেই তা নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল।
শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ যাতে অভ্যাসে পরিণত না হয়, যাতে স্কুলজীবনকে আমরা নিজেদের জীবনের অংশ ভাবতে পারি এবং যাতে করে বিদ্যার জ্ঞান ছড়িয়ে মানুষকে শ্রদ্ধাবোধের চাদরে বাঁধতে পারি সেজন্যই অধিকতর তদন্তের চেয়ে এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃষ্টান্ত।
কিশোর অপরাধের দোহাই সব কিছুতে দেয়া মানে হচ্ছে আরেকজন বড় অপরাধী তৈরির পথে আমাদের এগিয়ে যাওয়া।
আমরা অপরাধী বাড়াতে চাই না। শিক্ষার্থীর এখানে দোষ থাকলে তার শাস্তির একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। আশা করি এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভাববে।

সাঈদ চৌধুরী : লেখক, গাজীপুর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়