পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

আগের সংবাদ

পদ্মার বুকে স্বপ্নের পারাপার : প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিল ট্রেন > উদ্বোধন করে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা গেলেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

গাইবান্ধায় ১১ কি.মি সড়কে ৫০ বাঁক, এক বছরে ৩০ দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা থেকে : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র ১১ কিলোমিটার। এ সামান্য সড়কেই অন্তত ৫০টি বাঁক। এগুলোর বেশির ভাগই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বাঁকে যানবাহন অতিক্রম করার সময় ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই রিকশা-অটোরিকশা উল্টে যাচ্ছে। বিগত এক বছরে এসব বাঁকে অন্তত ৩০টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনা রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
বোনারপাড়া-মহিমাগঞ্জ সড়ক দিয়ে চারটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ছয় লক্ষাধিক মানুষ গোবিন্দগঞ্জ হয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং গাইবান্ধা জেলা শহরে যাতায়াত করেন। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি, ভরতখালি, পদুমশহর, বোনারপাড়া, কচুয়া, কামালেরপাড়া, সাঘাটা সদর, মুক্তিনগর ও পার্শ্ববর্তী ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি, উড়িয়া, কঞ্চিপাড়া এবং সদর উপজেলার বাদিয়াখালি, বোয়ালি। অপরদিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা, মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর ইউনিয়নের অন্তত আড়াই লাখ মানুষ সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজার হয়ে গাইবান্ধা জেলা শহরে যাতায়াত করেন। এ কারণে সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মহিমাগঞ্জ-বোনারপাড়া সড়কটি দুটি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সীমানায় পড়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজার থেকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ বটতলা পর্যন্ত অন্তত ৫০টি বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের মহিমাগঞ্জ মহিলা কলেজ মোড়, বোচাদহ সুইচগেট, চন্দনপার্ট রেলগেট, সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের আক কচুয়া, হিন্দুপাড়া, ভোলার বাজার, কচুয়া উচ্চবিদ্যালয় মোড়, মানিকগঞ্জ বাজার, অনন্তপুর মোড়, ডাকাতের মোড়, কাদের আলীর মোড়, একই উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের বাটি, বোনারপাড়া রেলগেট, বাঁকড়া মসজিদ, চার মাথা এবং উপজেলা পরিষদ মোড়। প্রতিটি এলাকায় তিন থেকে চারটি করে বাঁক রয়েছে। বিগত এক বছরে এসব বাঁকে কি পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে কোনো দপ্তরে নেই সেই তথ্য। তবে স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে সিএনজি, অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন উল্টে অন্তত ৩০টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।
এসব বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। মহিমাগঞ্জ গ্রামের পিকআপ চালক লিটন মিয়া বলেন, গোটা সড়কে একই গতিবেগে পিকআপ ভ্যান চালানো সম্ভব হয় না। কারণ কিছু পথ অতিক্রম করতেই বাঁক এসে যায়। তখন ধীরগতিতে চালানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বিশেষ করে যখন বাঁক আসে, তখন বিপরীত দিক থেকে যানবাহন আসছে কিনা বোঝা যায় না। ফলে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা বাঁকেই ঘটছে। বাক অতিক্রম করতে গিয়েই খাদে পড়ে দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে যানবাহন।
একই গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক শাহিনুর রহমান (৪৫) বলেন, এসব বাঁকে গতিরোধক নেই। নেই কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ফলে উভয়দিক থেকে দ্রুত গতিতে যানবাহন বাঁক ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে। বিষয়টি এলজিইডি বিভাগকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ আনোয়ার বলেন, সড়ক দুঘর্টনাসহ যেকোনো দুঘর্টনা ঘটলেই প্রথমে দমকল বাহিনীকে উদ্ধার অভিযান শুরু করতে হয়। ফলে সড়কে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখেছি, সড়কের বাঁক এলাকায় দুপাশের ফুটপাত বেদখল হয়েছে। ফলে বাকের জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়েছে। এসব কারণে বাঁকের স্থানে দুটি যানবাহন অতিক্রম করার সময় বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া সড়কের বাঁকের আগেপরে যানবাহন উল্টে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চালক ও তাদের সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সড়কের বাঁফিস্ট করা) করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্টের ব্যবস্থা করলে দুর্ঘটনা কমবে।
মহিমাগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী মনজুর হাবিব বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এই সড়কে জেলা শহরে যাতায়াত করি। সড়কে ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখেছি, বাঁকগুলোতে দুটি যানবাহন অতিক্রম করার সময় বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগার কথা ১৫-১৮ মিনিট। বাঁকের কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এতে বিরক্ত লাগে। তিনি বলেন, সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সাবধানে অতিক্রম করার জন্য পরিবহন চালকদের পরামর্শ দেয়া দরকার।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, সড়কটিতে যেসব যানবাহন চলাচল করে, সেসব যানবাহনের চালকদেরকে বাঁকের স্থানে সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সাঘাটা থানার ওসি রাকিব হোসেন বলেন, ওই সড়কে বাঁকের কারণে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে এ পর্যন্ত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। বাঁকের স্থানে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন করতে এলজিইডি বিভাগকে বলা হবে। গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, মহিমাগঞ্জ-বোনারপাড়া সড়কে আগে থেকেই বাঁক ছিল। গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সড়কটি পাকা করা হয়েছে। তবে সড়কে বাঁকের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু বাঁক সোজা করতে জটিলতা রয়েছে। কারণ সড়ক সোজা করতে গেলে জমি অধিগ্রহন করতে হবে। অধিগ্রহণের জন্য মালিকরা জমি দিতে চান না। জমি দিলেও এজন্য আলাদা প্রকল্প করতে হবে। এতে অনেক টাকার প্রয়োজন। বিষয়টিতে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের দরকার। তিনি বলেন, অনেক বাঁকের আগে সতর্কতামূলক চিহ্ন বা বিলবোর্ড দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোতেও দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়