পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব : সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

আগের সংবাদ

পদ্মার বুকে স্বপ্নের পারাপার : প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিল ট্রেন > উদ্বোধন করে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা গেলেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও দখল-দূষণ : মৃতপ্রায় চলনবিলের নদী-নালা খাল-বিল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : বেড়িবাঁধ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, দখল দূষণ আর পলির স্তর জমে এখন মৃতপ্রায় চলনবিল। নদী-নালা খাল-বিল মরে বর্ষায় মাছশূন্য এবং শুষ্ক মৌসুমে খরার কারণে চৌচির মাঠ- এই হলো এশিয়ার সবচেয়ে বড় চলনবিলের হাল। ‘দখল দূষণ আর নয়, ফিরিয়ে দাও নদীর অধিকার’ এই প্রতিপাদ্যে গতকাল সোমবার গুরুদাসপুর উপজেলা মিলনায়তনে নাটোর জেলার সহযোগী সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) আয়োজনে নদনদী রক্ষাবিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তাদের বক্তব্যে এই চিত্র উঠে আসে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায়, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলাল শেখ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা আখতার লিপি, বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কৃষি আফিসার হারুনর রশিদ. পানাসির প্রকৌশলী সাইদুর রহমান। বক্তারা বলেন, চলনবিলে ভরা বর্ষাতেও পানি নেই। নেই বৃষ্টিও। বেড়িবাঁধ, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, দখল দূষণ আর পলির স্তর জমে মৃতপ্রায়। চলনবিলে আর দেখা যায় না আগের মতো ঢেউ আর ¯্রােত। নদী-নালা খাল বিল মরে বর্ষায় মাছশূন্য আর শুষ্ক মৌসুমে খরার কারণে চৌচির মাঠ। এমন করুণ অবস্থা এখন এশিয়ার সবচেয়ে বড় চলনবিলের। বর্ষায় পানি এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চলনবিল এলাকার মাঠ-ঘাট-নদীনালা শুকিয়ে যায় দ্রুত। ফলে ফসলের ফলনও কমে গেছে অনেক।
১৯৬৭ সালে প্রকাশিত ‘চলন বিলের ইতিকথা’ বইয়ে লেখক এম এ হামিদের বর্ণনা ধরে এখন চলনবিলে গেলে হতাশ হতে হয়। দখল-দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে দেশের বৃহত্তম বিল। পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে বিলের বিভিন্ন খাল। নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে বিলুপ্ত হতে বসেছে বিলের জীববৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি আবাদও।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, চলনবিলকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক প্রতিশ্রæতি রক্ষায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে নওগাঁর আত্রাই থেকে সিরাজগঞ্জের বড়াল নদী থেকে যতগুলো শাখা নদীর মুখে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো খুলে দিতে হবে। প্রকৃতির উপযোগী রাস্তা, স্থাপনা ও সেতু নির্মাণ করতে হবে।
বিল এলাকার বাসিন্দারা বলেন, চলনবিলে একসময় সারা বছর পানি থাকত। উঁচু জমিতে ফসল আবাদ, নদী-খালে মাছ শিকার চলত। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই বৃহৎ এই বিল এখন পানিশূন্য। এতে একদিকে মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি আবাদ। চাটমোহরের বোথর মাঠের নলকূপের মালিক আবদুস সালাম বলেন, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে ভূগর্ভে ২৭ থেকে ২৮ ফুট গভীরে পানি মিলত। এখন একশ ফুট গভীরেও পানি মিলছে না। ফলে মাটি খুঁড়ে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি তুলতে হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায় বলেন, বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, সংযুক্ত নালা ও খাল ভরাট, চাষ করা মাছ উৎপাদন ও জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ এবং অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের কারণেই প্রাকৃতিক মাছ কমছে। প্রাকৃতিক মাছ রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বিলের নালা-খালগুলো পুনর্খননসহ বিরূপ কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং মৎস্য আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

চলনবিল নদী রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিল রক্ষায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। পরিকল্পনা, ভূমি, কৃষি, পানিসম্পদ, নৌ, স্থানীয় সরকার, মৎস্য ও পরিবেশ- সব মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ-কালভার্ট ও স্লুইসগেট অপসারণ করতে হবে। বাণিজ্যিক পুকুর খনন বন্ধ করতে হবে। তবেই চলনবিল প্রাণ ফিরে পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়