দক্ষিণখানে ছুরিকাঘাতে শিশুকে হত্যা

আগের সংবাদ

কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে > বাস্তবায়নে এগিয়ে আ.লীগ > কথা রাখেনি বিএনপি > ছায়া সরকার হতে পারেনি জাপা

পরের সংবাদ

টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা, সীমাহীন দুর্ভোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২৩ , ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

খালেদ আহমদ, সিলেট থেকে : টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরের বেশির ভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী।
বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় নগর কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন সাধারণ মানুষ। এই জলাবদ্ধতার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উদাসীনতাকে দায়ী করছেন তারা। অনেকে বলছেন, ড্রেনেজ সিস্টেম যদি সঠিক সময় সংস্কার করে রাখা হতো, তাহলে এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না। বারবার এই ভোগান্তির পরও সিসিকের টনক না নড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকে সিলেট নগরীতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এদিন রাত থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি প্রবেশ করে। নগরীর ছড়া-খালগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। সুরমা নদীর পানিও বাড়তে থাকে। শনিবার সকালের মধ্যে তলিয়ে যায় নগরের বেশির ভাগ এলাকা। বিশেষ করে পানি প্রবেশ করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, শাহজালাল উপশহর, দরগাহমহল্লা, কালীঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দীঘিরপাড়, মাছুদীঘিরপাড়, বাদামবাগিছা, শাহপরাণ, কুয়ারপাড় উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। শনিবার সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিলেট নগরীর মেজরটিলা এলাকায় সিলেট-তামাবিল সড়কে মাছ ধরছিল কয়েকজন যুবক। এই এলাকার প্রতিটি গলিতে রয়েছে হাঁটু সমান পানি। এছাড়া নগরের উঁচু এলাকা টিলাগড়েরও অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়ে। আর নিচু এলাকার অনেক রাস্তায় কোমর পানি হয়ে যায়। নগরীর পাঠানটুলা ও মদিনা মার্কেট এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় শনিবার যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিন পানিতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলা তলিয়ে যায়। এতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। রোগীদের কোলে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে স্বজনরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সর্বশেষ পরিস্থিতি এমনই ছিল।
এদিকে শনিবার ভোরে নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। নিজের বাসায় হাঁটু সমান পানি দেখিয়ে বলেন, টানা বৃষ্টিতে তার বাসার সমস্ত মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ সময় তার বাসায় হাঁটু পানি দেখা যায়। বাসার সামনে দেখা যায় পানি থৈ থৈ করছে। নিজের বাসার করুণ অবস্থা দেখিয়ে লাইভে ওয়ার্ডবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, সিসিকের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদের ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
একইভাবে শনিবার সকাল ৬টায় লাইভে এসে নিজের এলাকার চিত্র তুলে ধরেন সিসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। একটি রিকশা নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে ঘুরে সার্বিক চিত্র দেখান তিনি। এ সময় নগরীর অভিজাত এলাকা হাউজিং এস্টেটের রাস্তায় কোমর সমান পানি দেখা যায়। যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। বাজার করতে যারা বের হন তাদের হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানি পেরিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতেই বাসায় পানি ঢুকেছে। জোয়ারের সময় পানির পরিমাণ বাড়ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনবার ঘরে পানি টুকলো।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অরূপ রাউৎ জানান, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সব ছাত্রাবাসের নিচতলা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। হাসপাতালের সামনের সড়কও পানির নিচে। হাঁটু পানি ভেঙেই ডিউটিতে এসেছেন চিকিৎসকরা।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। তিনি বলেন, ড্রেন-নালা পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এছাড়া সুরমা নদী খনন করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়