বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা : ড. বদিউল আলমের শ্যালক গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত উদ্বেগ কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

শিক্ষকরা কি প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেন?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একজন শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর হচ্ছেন একজন শিক্ষক। শিক্ষক ব্যতীত একজন শিক্ষার্থী কখনো সঠিকভাবে জ্ঞান লাভ করতে পারে না। শিক্ষকরাই পারেন একজন শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে মানুষের মতো করে গড়ে তুলতে। তাদের হাতেই তৈরি হয় একেকটি দেশের সম্পদ। তাই বলা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের দায়িত্ব অপরিসীম। একটি দেশের মূল উন্নয়নের কারিগর কিন্তু শিক্ষকরাই। কারণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ পাচ্ছে মেধাবী এবং জ্ঞানী জনসম্পদ।
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সাহায্য করা, দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধি করাসহ নানা বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা থাকতে হয় অসীম। একমাত্র শিক্ষকরাই পারে একটি জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। বলা যায় একটা জাতির মূল কাণ্ডারি শিক্ষক। তাদের হাতেই রয়েছে একটি জাতির সঠিক শিক্ষার ভার।
আজ আমাদের দেশে যত বড় বড় মন্ত্রী, পুলিশ, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক রয়েছে মনে রাখতে হবে তারাও একসময় শিক্ষার্থী ছিল, তাদেরও কেউ না কেউ শিক্ষক ছিলেন। সেই শিক্ষকদের সুপ্রচেষ্টায় আজ তারা দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করছে। তারা আজ দেশের সম্মানিত ব্যক্তি, এটা হয়তো সবাই জানে। তবে তাদের পেছনে যে শিক্ষকের একটা অবদান রয়েছে সেটা কেউ জানতে বা জানাতে চায় না। আড়ালেই থেকে যান আমাদের শিক্ষকরা। অথচ এসব শিক্ষককে অক্লান্ত পরিশ্রম, ভালোবাসা আর সঠিক পাঠদানের মাধ্যমেই আজ আমরা উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উঠে এসেছি। কিন্তু ক’জন সেটা মনে রাখি? যত উপরে আমরা উঠি, ততই যেন আমাদের শিক্ষকরা আমাদের নিচে নেমে যান।
অনেক সময় তো শিক্ষকের চেয়ে মানে, জ্ঞানে, অবস্থানে, অর্থে বড় হলে শিক্ষককে ছোট করতেও ভাবেন না অনেকে। ভুলে যায় এই মানুষটা একদিন অঙ্ক-ইংরেজি কিংবা বাংলা-বিজ্ঞান পড়িয়েছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর। এখন সেসব শিক্ষককেই তাদের ছাত্রদের সামনে নিচু হয়ে থাকতে হয়। এটা যেসব শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর আচরণ তা কিন্তু নয়। তবে দিন যত গড়াচ্ছে ততই এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনকার শিক্ষার্থীদের আত্ম-অহঙ্কারবোধ অনেক বেশি হয়ে ওঠে। তারা শিক্ষকদের আর শিক্ষক মনে করে না।
আমি এমনও শিক্ষার্থী দেখেছি, যে নিজের শিক্ষকের শরীরে আঘাত করতেও দুবার ভাবেনি। শিক্ষককে অপমান-অপদস্থ এমনকি হুমকি দেয়া শিক্ষার্থীরও অভাব নেই এখন। ক্লাসের পর স্যারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে কত শিক্ষার্থী ক্লাস ছেড়ে বাইরে ছেলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেটার তালিকা করলেও বেশ দীর্ঘ হবে। অথচ সব ক্ষেত্রেই আমাদের শিক্ষকরা বড় অসহায়। আমরা আমাদের শিক্ষকদের তাদের প্রাপ্য সম্মানটা তো দিচ্ছিই না, উল্টো ক্রমাগত অশ্রদ্ধা আর অসম্মান করে আসছি। গত কয়েক বছরে কত শিক্ষকের সঙ্গে লাঞ্ছনা, হেনস্তা আর মারধরের মতো ঘটনা ঘটেছে সেটা গুগলেই জানতে পারবেন। আর কত শিক্ষক জেলে গেছেন আর কত শিক্ষকের প্রাণ গেছে সেটাও জানতে পারবেন গুগলের মাধ্যমে। পত্রিকার পাতায় এসব ঘটনা কালো হরফে ছাপা হচ্ছে নিয়মিত।
আমি যদি একটা ঘটনা উল্লেখ করি তা হলে সবার মনে পড়বে অবশ্যই। সাভারের হাজী ইউনুছ আলী কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। এক শিক্ষার্থী তাকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। এটা নিয়ে সারাদেশে আন্দোলন, সমালোচনাসহ বেশ হইচই সৃষ্টি হয়েছে সে সময়। এমন ঘটনা আরো অনেক আছে। সেসব লিখে লেখা লম্বা করব না।
শুধু এটুকুই বলতে চাই আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের এমন দূরত্ব আর ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার কারণেই আমাদের প্রজন্ম কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো হচ্ছে না। ভালো তারাই করছে যারা শিক্ষকদের সম্মান করছে, শিক্ষকদের দোয়া নিচ্ছে।
একই সঙ্গে শিক্ষকদের নিরাপত্তাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের কাছে আহ্বান রইল। শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান যেমন তাদের দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের ওপর অত্যাচার, অন্যায়, লাঞ্ছনা বন্ধ করতে হবে। কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে এসব অপরাধীকে। তবেই শিক্ষকদের দিকে আঙুল তুলে তাকাতে পারবে না কেউ।

আজহার মাহমুদ : খুলশী, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়