বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা : ড. বদিউল আলমের শ্যালক গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত উদ্বেগ কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

এ রকমই চলবে- হাসিখুশি ও কানামাছি?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতির দৃশ্যমান ছবি পাওয়া যাবে। শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গুণ? না, মানবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। শিক্ষার কেন্দ্রে থাকেন শিক্ষক। উপযুক্ত শিক্ষক যে আমরা পাচ্ছি না সেটা বলাইবাহুল্য। শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ ও দলীয় পক্ষপাতিত্বের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগের নতুন এক পদ্ধতি চালু করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। পদ-প্রার্থীদের নাকি লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে ও সংগ্রহ করতে হবে পুলিশের সার্টিফিকেট। যার সরল অর্থ দাঁড়াবে মেধাবানদের শিক্ষক হতে নিরুৎসাহিতকরণ। মেধাবান ও পরীক্ষিতদের জন্য পুনরায় লিখিত পরীক্ষা অমর্যাদার ব্যাপার। আর পুলিশের রিপোর্ট তো ভীষণরকমের বিপজ্জনক। লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা কোনো কালেই ছিল না। গোয়েন্দা রিপোর্ট পাকিস্তান আমলে চালু ছিল এবং ওই ধরনের কার্যক্রম চালু থাকাটা ছিল অন্যতম কারণ। যেজন্য ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল এবং রাষ্ট্রটি ভেঙে আমরা বের হয়ে এসেছি। এখন চেষ্টা চলছে পুরনো ব্যবস্থাকে ফেরত আনার। এই পুলিশি কার্যক্রম দুর্নীতি ও উৎপীড়ন উভয়কেই প্রসারিত করে দেবে। আমরা আশা করব সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হবে, কিন্তু ভরসা করি না। কারণ প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তদবিপরীতে সংখ্যা বাড়ছে চাটুকারদের।
বিশ্ববিদ্যালয় তো পরে আসবে, শিক্ষার ভিত্তিটাই তো দুর্বল। প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, মাধ্যমিক শিক্ষা অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। শিক্ষকদের মান এবং ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত উন্নত না হলে শিক্ষার মান বাড়বে এরকম ভাববার কোনো কারণই নেই। নিয়োগ সুষ্ঠু নয়, নিয়োগের পরে প্রশিক্ষণ নেই। জবাবদিহিতা উঠে গেছে। প্রতিবেদন বলছে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ। বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ কোনো মতেই বাড়ানো যাচ্ছে না।
দুঃখের কাহিনি অন্তহীন। প্রশ্ন হলো, কারণ কী? আরো বড় প্রশ্ন, উদ্ধারের উপায় কী? দুঃখের কারণ ওই নন্দঘোষই, তা যতই সরল শোনাক না কেন কথাটা। নন্দঘোষের নাম পুঁজিবাদ। একসময় ছিল মানুষ যখন নিজেকে খুবই অসহায় ভাবত। দার্শনিক হবস অবস্থাটার বর্ণনা দিতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, মানুষের জীবন তখন ছিল ংড়ষরঃধৎু, ঢ়ড়ড়ৎ, হধংঃু, নৎঁঃরংয ও ংযড়ৎঃ. সেই অবস্থা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য সামাজিক চুক্তির দরকার হয়েছিল, যে-চুক্তির ভেতর থেকে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের উদ্ভব ঘটে। তারপর ইউরোপে রেনেসাঁ ঘটেছে। মানুষ ঈশ্বরকেন্দ্রিকতা ছেড়ে মনুষ্যকেন্দ্রিকতার জগতে চলে এসেছে, সৃষ্টি হয়েছে ইহজাগতিকতার ও ধর্মনিরপেক্ষতার। পথ পরিষ্কার হয়েছে পুঁজিবাদের বিকাশের জন্য। পুঁজিবাদ বিকশিত হলো। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতার জগৎটা অনেক বড় হয়ে গেল, উন্নত হলো জীবনযাত্রার মান। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিল বৈষম্য, পুঁজিবাদের যা অনিবার্য উপাদান। ফলে যে নৈরাজ্য ও বর্বরতা থেকে রাষ্ট্র মানুষকে মুক্ত করবে বলে ভাবা হয়েছিল, তেমনটা ঘটল না। পুঁজিবাদ নিজেই দেখা দিল মস্ত বড় বিপদ হিসেবে।
বিপজ্জনক পুঁজিবাদ দীর্ঘকাল পৃথিবীকে শাসন করেছে, কিন্তু তার অবস্থা এখন শোচনীয়। নানা ধরনের ছাড় দেয়া ও প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও নিজের রক্তাক্ত হিংস্রতাকে সে আর আড়াল করতে পারছে না। পতনকালে পুঁজিবাদ সব মানবিক সম্পর্ককে ভেঙে ফেলতে চাইছে, ইতোমধ্যেই সবকিছুকে পরিণত করেছে পণ্যে। তার অর্জনগুলোর অনেক কিছুই আর মানুষের উপকারে লাগে না, বরং অধিকাংশ মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুনাফার লোভ কাজ করছে চালিকা শক্তি হিসেবে। দেখা দিয়েছে চরম ভোগবাদিতা ও বিচ্ছিন্নতা। আমাদের মন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ যে বলেছিলেন বেপরোয়া গাড়ি চালানো, সেই বেপরোয়া প্রতিযোগিতা ও আইন না-মানাটাও পুঁজিবাদের চরিত্রের ভেতরেই রয়েছে। পুঁজিবাদের অধীনে চলাচলের, যোগাযোগের ও উন্নতির সব পথই রক্তাক্ত, কম আর বেশি।
পুঁজিবাদ খুব ঘটা করে সাজিয়ে গুছিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলে। প্রচার করে যে ভোটের ময়দানে সব মানুষ সমান এবং ক্ষমতাবান; কেননা পূর্ণবয়স্ক সব মানুষের ভোটাধিকার থাকে, ভোট দিয়ে তারা সরকার বদলাতে পারে। সর্বত্র না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সরকার বদলায়ও, কিন্তু তাতে শোষণ বদলায় না, অধিকসংখ্যক মানুষের ওপর অল্পকিছু মানুষের শাসনের অবসান ঘটে না। অন্যদিকে আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচনের অর্থ দাঁড়ায় জোরজুলুম, প্রতারণা, ছিনতাই। যারা জেতে তারা ওই শাসক শ্রেণিরই সদস্য- এ দলের কিংবা ও দলের।
ভারতে নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে নিকৃষ্টতম ধর্মীয় মৌলবাদীরা, ইতিহাসকে তারা ক্রমাগত পেছন দিক ঠেলছে এবং বহুজাতির দেশটিকে এক রাখতে চাচ্ছে ধর্মের সাহায্যে এবং সেই প্রক্রিয়াতে মানুষকে মধ্যযুগের অন্ধকারে ফেরত নিয়ে যাওয়ার ব্রত ধারণ করেছে, পোশাকে ও মনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অবশ্য ধর্ম আসে না, তবে বর্ণ ঠিকই চলে আসে। পুঁজিবাদ মানুষকে খুবই ব্যস্ত রাখে, বিশেষত ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নিয়ে।
ছোট ছোট গণ্ডির ভেতর আটকে রাখাটাকে নিরাপদ জ্ঞান করে। বড় জায়গাতে আসতে দিতে চায় না। এক সময়ে আধুনিকতা ছিল ব্যক্তির স্বতন্ত্রের দাবিদার, এখন উত্তর-আধুনিকতা সাধনা করছে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতার।
আমাদের ছেলেবেলায়, শিশুদের জন্য পাঠ্য একটি বই ছিল, নাম ‘হাসিখুশি’। তাতে একটি ছড়া থাকত, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পারি তারে ছোঁ। পুঁজিবাদ মানুষকে ওই দশাতে রাখতে আগ্রহী। মানুষ হাসিখুশি থাকুক, নিমগ্ন হোক স্থূল বিনোদনে, লিপ্ত থাকুক অর্থোপার্জনে, উত্তেজনা প্রকাশ করুক খেলার মাঠে, ছায়ার সঙ্গে কথোপকথন চালাক ঘরে বসে। লক্ষ্যটা হলো পুঁজিবাদের যে ব্যাধি পৃথিবীকে রুগ্ন করছে, সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে টেনে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে মানুষ যেন সচেতন না থাকে। মানুষ চিন্তা করুক, চিন্তা তো তাকে করতেই হবে, কিন্তু সে চিন্তা হোক কানামাছি খেলার মতো। সবাই মিলে উত্ত্যক্ত করতে চায় চোখবাঁধা কানামাছিটিকে, সে বেচারা হাতড়ে হাতড়ে যাকে ছুঁতে পারবে তাকেই অপরাধী ভাববে। দোষ চাপানো চলবে পারস্পরিক। খেলাচ্ছে যে দুর্বৃত্ত আড়ালে থেকে সে হাসবে। এই দুর্বৃত্তটির আচার-আচরণ স্বভাব-চরিত্র তখন ক্রমাগত ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠছে। বৃত্তের ভেতর ঘুরতে থাকার ওই অগ্রগমন অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুঁজিবাদবিরোধী বিশ্বব্যাপী লড়াইটা স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সফল হচ্ছে।
বাংলাদেশের মানুষ বিশেষভাবে হাসিখুশি অবস্থাতেই আছে। তাদের অধিকাংশ হাসিই অবশ্য দুঃখী মানুষের নিরুপায় হাসি। তবু দেখলে মনে হবে হাসছে। যেন আশায় আছে উন্নতি চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়বে। উন্নতির ভাগ সেও পাবে। যেন কর্তাদের উন্নতি তারই উন্নতি। দেশে গণমাধ্যম এখন দু’ভাবে নিয়ন্ত্রিত- একদিকে সরকারের দ্বারা, অন্যদিকে সরকার সমর্থক মালিকদের দ্বারা। ফলে হাসির অন্তরালের কান্নাটা অজানাই রয়ে যায়। এখানে পুঁজিবাদী গণতন্ত্রও কাজ করছে না, আগামীতেও যে করবে এমন আশা নিতান্তই ক্ষীণ। ওদিকে পুঁজিবাদী সম্পর্কগুলো হুলস্থূল করে খাড়াখাড়ি বেড়ে চলেছে। নানাভাবে তার পৃষ্ঠপোষকতা চলছে। গরিবের ভালোর জন্য ক্ষুদ্র ঋণের যে আয়োজন গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য এনজিও করছে সেখানে উন্নয়ন যেটা ঘটছে সেটা পুঁজিবাদী ঘরানারই; ক্ষুদ্র ঋণের কারখানা থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজিবাদীরাই বের হয়ে আসছে, যতটা পারছে। এটা মোটেই তাৎপর্যহীন নয় যে, পুরনো দিনের সমবায়ী উদ্যোগ-আয়োজনগুলো যা ছিল সেগুলো ইতোমধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, কারণ তারা অপুঁজিবাদী হওয়ার চেষ্টা করত। পুঁজিবাদ সর্বগ্রাসী এবং ভীষণ সন্ত্রাসী।
তাহলে কি এরকমই চলবে- হাসিখুশি ও কানামাছি? না, চলবে না। পরিবর্তন আসবেই, তবে সেটা কীভাবে আসবে, কী চরিত্র নেবে, নৈরাজ্যের জন্ম দেবে নাকি উন্নত মানবিক সম্পর্কের সেটা নির্ভর করছে পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনের ওপরই, যে-আন্দোলনকে ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করার ভরসা দেয়ার ক্ষমতা অন্য কারো নেই, আছে শুধু পুঁজিবাদবিরোধী এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকামী আন্দোলনেরই। সে-আন্দোলন দেশে দেশে সামাজিক বিপ্লব সংঘটিত করবে এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলবে, আশাটা এই রকমেরই। এর বাইরে সব আশাই দুরাশা মাত্র এবং হতাশার লালনভূমি ভিন্ন অন্যকিছু নয়। উদারনীতিতে কুলাবে না। উদারনীতি হচ্ছে পুঁজিবাদের ভদ্রবেশী সংরক্ষক; চেনা যায় না; যে জন্য আরো বিপজ্জনক। উদারনীতির প্রধান কাজ হলো ব্যক্তিমালিকানার নির্মমতাকে আড়াল করে রাখা।
পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশেও চলেছে। কিন্তু সফল হয়নি। সফল না হওয়ার প্রধান কারণ নেতৃত্বদানকারীদের শ্রেণিচরিত্র। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সমবয়স্ক, অথচ চীনের কমিউনিস্টরা বিপ্লব করেছেন, ভারতের কমিউনিস্টরা বিপ্লবের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেননি। ভারতের বামপন্থি বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ অসামান্য। নির্যাতন, কারাভোগ, পলাতক জীবনযাপন এবং প্রাণত্যাগ, সবকিছুতেই জাতীয়তাবাদীদের তারা যোজন যোজন পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন, কিন্তু পারেননি মুক্তিকামী মানুষকে সমাজতন্ত্র-অভিমুখে নিয়ে যেতে।
দুর্বলতা ছিল নেতৃত্বে। নেতৃত্ব মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই এসেছে। আসাটাই স্বাভাবিক। নেতারা তাদের শ্রেণিবেষ্টনী মানেননি, ভেঙে বের হয়ে গেছেন; কিন্তু মনোভাবের দিক থেকে শ্রেণিচ্যুত হতে পারেননি। দীর্ঘকাল ধরে পরাধীন ছিল যে দেশ তার মধ্যবিত্ত পরাশ্রয়ী হবে এটা অস্বাভাবিক নয়, বাম আন্দোলনের নেতৃত্বও ওই স্বাভাবিকতাকে পুরোপুরি পরিহার করতে পারেনি। নেতারা প্রথমে ছিলেন মস্কোর মুখাপেক্ষী। পরে বিভক্ত হয়ে গেছেন মস্কোপন্থি ও পিকিংপন্থিতে; পরাশ্রয়িতা শেষ হয়নি। নেতৃত্বের ভেতর ছিল পেটি বুর্জোয়া অস্থিরতা, যে জন্য কখনো সে উগ্র হয়েছে, কখনো নম্র। সামন্তবাদী গোষ্ঠীপ্রীতিও ছিল, ফলে উগ্ররা তো বটেই নম্ররাও ভাগ হয়েছে দলে উপদলে। অভাব ছিল জ্ঞানের- তাত্ত্বিক জ্ঞান ছিল সীমিত, বাস্তবিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান ছিল সংকীর্ণ এবং দুই ধরনের জ্ঞানের প্রয়োজনীয় ঐক্য রয়ে গেছে অনার্জিত। জ্ঞানের দুর্বলতার কারণে নেতৃত্ব এটা বুঝতে পারেনি যে, কৃষককে সঙ্গে নিতে না পারলে বিপ্লব সম্ভব হবে না। কৃষক বরং এগিয়ে গেছে, বাংলায় তারা তেভাগা আন্দোলন করেছে, তেলেঙ্গানাতে বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে; কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির এমন ক্ষমতা ছিল না যে আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে মূল দ্ব›দ্বটি কখন কেমন ছিল সেটি নিরূপণেও তারা ব্যর্থ হয়েছে, জ্ঞানের অভাবের কারণেই। এক হিসেবে সমাজতন্ত্রীরা কিন্তু বুর্জোয়াদের চেয়েও বড় বুর্জোয়া, হওয়ার কথা, কারণ এটা প্রত্যাশিত যে তারা বুর্জোয়াদের ইতিবাচক অর্জনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আরো এগিয়ে যাবে, সংবেদনশীলতা ও নৈতিকতায় বুর্জোয়াদের হারিয়ে দেবে, নতুন নতুন অর্জন সম্ভব করে তুলবে এবং বুর্জোয়াদের আধিপত্য ভেঙে ফেলে সমষ্টিগত সব অর্জনকে সর্বজনীন করে দেবে।
বামপন্থিরা সমাজ বিপ্লব চেয়েছেন, কিন্তু বিপ্লবের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা যে করতলগত করতে হবে এই সত্যটাকে গুরুত্ব দেননি। রাষ্ট্রক্ষমতা তাই চলে গেছে জাতীয়তাবাদীদের হাতেই- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা সাতচল্লিশে ঘটেছে একবার, একাত্তরে ঘটল পুনর্বার। এই জাতীয়তাবাদীরা সবাই পুঁজিবাদে দীক্ষিত- বিভিন্ন মাত্রায়। বামপন্থিদের একাংশ তাদের পেছনে পেছনে থেকে অভিযুক্ত হয়েছে লেজুড়বৃত্তির, আরেকাংশ রাষ্ট্রকে ভাঙবার প্রশ্নকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়ে ভুল লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণ করেছে। ওদিকে রাষ্ট্র বামপন্থিদের নাজেহাল করতে ছাড়েনি। হত্যা করেছে, জেলে পুরেছে, আবার নিজের বলয়ে টেনেও নিয়েছে- লাভের প্রলোভন দেখিয়ে। আপসকামিতা, অল্পেসন্তোষ, ব্যর্থতার বোধ, এসবও কাজ করেছে ভেতরে ভেতরে।
মানুষ এখন অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। গুমোট চলছে, হয়তো সেটা ঝড়ের পূর্বাভাস। পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ যদি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশার ভেতর দিয়ে প্রকাশের পথ না পায়, তা হলে অনিবার্যভাবেই সেটা দক্ষিণমুখো হবে এবং রূপ নেবে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের। এর লক্ষণ যে দেখা যাচ্ছে না এমন নয়। জঙ্গিবাদ প্রকাশ্য হয়েছে, জঙ্গিবাদের লালনভূমি ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সংস্কৃতিচর্চা সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে, ধর্মীয় ওয়াজ ও নানাবিধ ভোজ চলছে সমানে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়