দুদকের মামলা : সাবেক বিমানবালা শোভার ৩ বছর কারাদণ্ড

আগের সংবাদ

ঐতিহাসিক সম্পর্কে পরমাণু শক্তির বন্ধন : বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ইউরেনিয়ামের চালান গ্রহণ করল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

নোবেল প্রত্যাখ্যান কিংবা পুরস্কার নিতে পারেননি যারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : অনেকের কাছে নোবেল হলো সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক। একজন লেখক, অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী এমনকি একজন রাজনীতিবিদও নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পদক বিজয়ী হয়েও অনেকের সেটা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই পুরস্কার স্বেচ্ছায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার অনেকে বাধ্য হয়েছেন। সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবরে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আয়োজিত হয় নোবেল পুরস্কার দেয়ার অনুষ্ঠান।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ১৮৯৫ সাল থেকে। ওই বছর জনহিতৈষী সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল এই পুরস্কারের প্রচলন করেন।
তবে পুরস্কার প্রদান শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে। শুরুতে শুধুমাত্র শান্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হলেও, ধাপে ধাপে বাকি পাঁচটি ক্যাটাগরি (চিকিৎসা শাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞান, রয়াসন, অর্থনীতি, সাহিত্য) এতে যুক্ত হয়।
সাধারণত যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা মানবতার জন্য ব্যতিক্রমী অবদান রাখেন তাদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এই পুরস্কারের প্রচলন ঘটে। নোবেলের যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বিভিন্ন বিভাগে ছয় শতাধিক পুরস্কার প্রদান করেছে। কিন্তু কিছু বিজয়ী ছিলেন যারা পুরস্কার গ্রহণ করতে চাননি বা বাধ্য হয়ে নিতে পারেননি।
জ্যঁ পল সার্ত্রে : ফরাসি লেখক জ্যঁ পল সার্ত্রে ছিলেন অস্তিত্ববাদের অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ। তাকে আধুনিক অস্তিত্ববাদের জনকও বলা হয়। সার্ত্রের অসাধারণ কাজের মধ্যে রয়েছে, ‘বিয়িং অ্যান্ড নাথিংনেস’ শীর্ষক বইটি। যেখানে তিনি তাত্ত্বিকভাবে অস্তিত্ববাদের ওপর তার থিসিস উপস্থাপন করেছেন। ইউরোপের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপর্যয় কেমন ছিল, সেটা গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তিনি তার ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘নজিয়া’-তে বেশ দক্ষতার সঙ্গে তার দার্শনিক দৃষ্টিকোণকে অতিক্রম করেছেন এবং অস্তিত্ববাদী সাম্যবাদের ধারণা তৈরি করেছেন। এতে তিনি ঈশ্বরবিহীন এক মহাবিশ্বে বিচরণ করা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন যারা নিজেদের স্বাধীনতার কাছে জিম্মি হয়ে আছে। আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৬৪ সালে, তাকে সাহিত্যে জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হলেও, তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। সার্ত্রে নোবেল পুরস্কারকে ‘বুর্জোয়া পুরস্কার’ অর্থাৎ পুঁজিপতিদের পুরস্কার বলে মনে করতেন।
লে দুত তাও : পাঁচ দশক আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার যৌথভাবে দেয় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং ভিয়েতনামের জেনারেল এবং কূটনীতিক লে দুক তাও-কে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তাতে এই দুই কর্মকর্তাই মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন।
চুক্তিতে ওই দুই দেশের কর্মকর্তা এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নোয়েন ভ্যান থিউ স্বাক্ষর করেছিলেন। সেখানে যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু লে দুত তাও পুরস্কারটি গ্রহণ করেননি। কারণ তার মতে ভিয়েতনামে তখনও শান্তি ফেরেনি।
বরিস পাস্তারনাক : প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৫৮ সালে মস্কোর ঔপন্যাসিক ও কবি বরিস পাস্তারনাককে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। সমসাময়িক গীতিকবিতা এবং মহান রাশিয়ান মহাকাব্য রচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তিনি প্রাথমিকভাবে এই সম্মানগ্রহণ করলেও ওই লেখক তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের চাপের মুখে পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হন।
হিটলারের নির্দেশে প্রত্যাখ্যান : সব জার্মান নাগরিকদের জন্য নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৯৩৭ সালে অ্যাডল্ফ হিটলার একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। এর আগের বছর জার্মান শান্তিকামী কার্ল ভন ওসিয়েৎস্কিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। একে পরে লজ্জাজনক ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেয় জার্মান সরকার। ধারণা করা হয় অতীতের ওই ‘লজ্জাজনক ঘটনার’ পুনরাবৃত্তি এড়াতেই নোবেল গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ওই ডিক্রি জারি করা হয়েছিল। নেচার ম্যাগাজিনে এমনটাই উল্লেখ করা হয়। ওসিয়েৎস্কি প্রকাশ্যে নাৎসিবাদ এবং হিটলারের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ১৯৩১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে একটি বন্দি শিবিরে আটকে রাখা হয়।
রিশার্ড কুন : রিশার্ড কুন ছিলেন একজন জার্মান জৈব রসায়নবিদ। হিটলারের জারি করা নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি নোবেল পুরস্কার প্রহণ করতে পারেননি। মি. কুন ক্যারোটিনয়েড এবং ভিটামিন নিয়ে কাজ করার জন্য ১৯৩৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। ‘তার ক্রোমাটোগ্রাফিক কৌশল ওই পদার্থটির বিশুদ্ধ উৎপাদন ও আলাদা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
অ্যাডলফ বুটেনান্ড : নোবেল পুরস্কার গ্রহণ না করার জন্য হিটলারের ডিক্রি জারির কারণে পুরস্কার নিতে পারেননি অ্যাডলফ বুটেনান্ড। জার্মান জৈব রসায়নবিদ অ্যাডলফ বুটেনান্ড যৌন হরমোন নিয়ে গবেষণার জন্য ১৯৩৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। ওই বছর ক্রোয়েশিয়ান বিজ্ঞানী লিওপোল্ড রুজিকার সঙ্গে যৌথভাবে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।
মূলত, ১৯৩০’র দশকে, বুটেনান্ড নারী ও পুরুষের মধ্যে থাকা বিভিন্ন হরমোন ম্যাপিংয়ে অবদান রেখেছিলেন।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, নারীদের যৌন হরমোন এস্ট্রোজেনের সংশ্লেষ নির্ধারণ করার পরে তিনি এর গঠন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত আরেক ধরনের হরমোন, এস্ট্রিওলকে সংজ্ঞায়িত করতে সক্ষম হন। এছাড়াও তিনি প্রথমবারের মতো একটি বিশুদ্ধ পুরুষ যৌন হরমোন তৈরি করতে এবং এর রাসায়নিক গঠন নির্ধারণ করতে সক্ষম হন, যাকে বলা হয়, ‘অ্যান্ড্রোস্টেরোন’।
গেরহার্ড ডোমাক : জার্মান প্যাথলজিস্ট ও ব্যাকটিরিওলজিস্ট গেরহার্ড ডোমাকক ছিলেন বঞ্চিতদের তালিকায় অন্যতম। তিনি ১৯৩৯ সালে মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। হিটলারের নিষেধাজ্ঞার কারণে মি. ডোমাক নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি।
রিশার্ড কুন, অ্যাডলফ বুটেনান্ড ও গেরহার্ড ডোমাক- এই তিন বিজ্ঞানী প্রথমে পুরস্কার গ্রহণ করতে না পারলেও পরবর্তীতে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ডিপ্লোমা সনদ ও মেডেল হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু তারা পুরস্কারের অর্থ পাননি।
বব ডিলানের নীরবতা : এদিকে ২০১৭ সালে প্রখ্যাত মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলানের নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক ধারা সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
কিন্তু পরে একাধিকবার নোবেল কমিটি তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি পুরস্কার সংগ্রহ করতে সুইজারল্যান্ডে যাননি। এমনকি নোবেল অর্থমূল্য নেয়ার জন্য যে বক্তৃতাটি দিতে হয়, সেটিও দেননি তিনি। তবে তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যানও করেননি। ফলে পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে বব ডিলানের নীরবতা বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।
তবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের তিন মাসেরও বেশি সময় পর তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়