গভর্নরের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক : ভবিষ্যদ্বাণী মডেলে নিরসন হবে অর্থনৈতিক সংকট

আগের সংবাদ

ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশা : নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বা পরিচয় জানায়নি > আ.লীগ-বিএনপি চাপাচ্ছে একে অন্যের ঘাড়ে

পরের সংবাদ

‘বয়স বেড়েছে, তবে মানুষটা একই আছে’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৮২, মুক্তি পেয়েছিল কিংবদন্তি পরিচালক মৃণাল সেনের ছবি ‘খারিজ’। ছবিতে মৃত্যু হয়েছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক পরিচারকের।
সেই মৃত্যুর পর থেকে কেটে গেছে বহু বছর। তবে উত্তর কলকাতার সেন পরিবার এখনো বিবেক দংশন থেকে মুক্ত হতে পারেনি। সেই তিক্ত স্মৃতি বুকে নিয়েই আসছে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘পালান’। পরিচালক মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই ‘খারিজ’-এর চরিত্রগুলোকে আরো একবার পর্দায় ফিরিয়ে আনছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। আর সেই ‘খারিজ’ থেকে ‘পালান’-এ ফিরে আসা নিয়েই ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্কর।
তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য-

‘খারিজ’-এর চরিত্রগুলোই তো ‘পালান’-এ আবারো ফিরছে?
মমতা শঙ্কর : হ্যাঁ, এক্কেবারেই তাই। ‘খারিজ’-এর সেই মমতা সেন মানে আমি, সেই চরিত্র হয়েই আবারো এখানে আছি। এছাড়া অঞ্জন সেন, শ্রীলা সেই চরিত্রগুলোও ফিরছে।

‘খারিজ’ থেকে ‘পালান’- মমতা সেন কতটা বদলেছেন?
মমতা শঙ্কর : বয়স বেড়েছে, অভিজ্ঞতাও বেড়েছে; তবে মানুষটা একই আছে।

‘খারিজ’-এ একটা মৃত্যু হয়েছিল, ‘পালান’-এর ট্রেলারেও একটা মৃত্যু দেখা যাচ্ছে…
মমতা শঙ্কর : গল্পটা তো বলা যাবে না, ঘটনাক্রম দেখার জন্য ছবিটি দেখতে হবে। তবে ‘খারিজ’-এ একটা অন্যায় হয়েছিল, আমাদের তরফে একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। আর এখন দেখা যাবে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই কীভাবে সাম্প্রতিক ঘটনায় রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। এটুকুই বলতে পারি।

‘পালান’-এর শুটিংয়ের সময় ‘খারিজ’-এ মৃণাল সেনের সঙ্গে কাজের স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে ফিরে আসছিল?
মমতা শঙ্কর : সে তো অনেক স্মৃতি আছে, বলতে শুরু হলে শেষ হবে না। খারিজের আগে ‘এক দিন প্রতিদিন’-এ শ্রীলার চরিত্রটিতে আমার কাজ করার কথা ছিল। তখন আমার বড় ছেলের মাত্র ১৭ দিন বয়স। আমি নার্সিংহোম থেকে সবে ফিরেছি। ১৪ দিনের শিশুকে ছেড়ে অতক্ষণ বাইরে থাকাটা খুব মুশকিল। এদিকে মৃণাল দা যখন আমায় কাজের কথা বললেন, তাকে না বলাটা আমার পক্ষে খুব মুশকিল ছিল। তখন বললাম, মৃণাল দা কোনো ছোট চরিত্র থাকলে সেটা আমায় দিন। বললেন, একটা চরিত্র আছে, ছবিটা তাকে নিয়েই, তবে চরিত্রটা ছোট। তখন আমি বললাম, তাহলে ওটাই আমি করব। আর তারপর যখন ‘খারিজ’ করলাম, মৃণাল দা আমায় বললেন, ‘তুমি এখন অনেক বেশি মন দিয়ে কাজ করছ। কারণ, ‘একদিন প্রতিদিন’-এর সময় তো আমি মন দিয়ে কাজই করতে পারিনি। সারাক্ষণই মনে হতো কখন বাড়ি যাব! তখন এক-দুই দিনেই শুটিং শেষ করতে হয়েছিল। তখন কিছুতেই অভিনয়ে মন দিতে পারছিলাম না।
আরো একটা কথা খুব মনে পড়ছে। ‘খারিজ’ দৃশ্যে ছিল, ছেলেটি মারা গিয়েছিল, পালানের বাবা এসেছিল মাইনে নিতে। আর আমি প্রশ্ন করছিলাম, ‘পালান’-এর বাবাকে আমি কী বলব? সেটা বলে আমি কেঁদে ফেলি, আর আমি সত্যিই কেঁদে ফেলেছিলাম। কান্না থামছিল না। মৃণাল দা তখন আমায় এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন, ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। আমি সত্যিই কান্না থামাতে পারছিলাম না। মৃণাল দার থেকে সেই প্রশংসা আমার কাছে একটা বড় প্রাপ্তি ছিল।

সে সময় পরিচালক মৃণাল সেন এবং তার স্ত্রী গীতা সেন দুজনের সঙ্গেই তো আপনার কাছের সম্পর্ক ছিল?
মমতা শঙ্কর : মৃণাল দা একদিকে আমার বাবার মতো, দাদার মতো, আবার বন্ধুর মতো। বৌদি এবং মৃণাল দা দুজনের সঙ্গে ভীষণ সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল। মৃণাল দার সঙ্গে শুটিংয়ের সময় খুব মজা করে কাজ করতাম, শট দেয়ার সময় মৃণাল দা একরকম মানুষ, আবার শট দেয়া হয়ে গেল মৃণাল দা পুরো অন্য মানুষ। তিনি আমাদের সঙ্গে মজা করতেন, আড্ডা দিতেন, অনেক গল্প করতেন; কত কিছু শিখেছি।

মৃণাল সেনের হাত ধরেই তো আপনার অভিনয় জীবনের শুরু ‘মৃগয়া’, যেটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল?
মমতা শঙ্কর : সেটা তো আমার কাছে একটা বিরাট মুহূর্ত। আমার জীবনের প্রথম ছবি। আর সেই ছবিটা না হলে হয়তো আপনারা আমায় অভিনেত্রী হিসেবে ডাকতেন না। মৃণাল দা মাকে (অমলাশঙ্কর) সব সময় বলতেন, কেন আপনার মেয়ে অভিনয় করছে না? মা বলেছিলেন, ও স্কুলটা শেষ করুক, পড়াশোনাটা শেষ করে না হয় করবে। মৃণাল দা বলেছিলেন, তুমি কখনো অভিনয় করতে চাইলে আমায় প্রথম খবর দেবে। আমিও তাকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম। মাও মৃণাল দাকে বলেছিলেন, ও ছবি করলে আপনার ছবিতেই প্রথম কাজ করবে। তখন আমার কত বয়স হবে ১৯ বছর।

‘খারিজ’-এর পর আবারও ‘পালান’-এ অঞ্জন দত্ত, শ্রীলা মজুমদারের সঙ্গে কাজ করছেন, কী মনে হচ্ছিল?
মমতা শঙ্কর : এত বছর পর বলতে শ্রীলার সঙ্গে এর মাঝে একটা আমার কাজ হয়েছে। আর অঞ্জনের সঙ্গে তো আমি মাঝেও বেশকিছু কাজ করেছি। তবে তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। পুরনো সঙ্গী তো সবাই। আমাদের আন্ডাস্ট্যান্ডিংটা ভীষণ ভালো।

সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন; এখন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও আরো অনেকের সঙ্গেই কাজ করছেন, পার্থক্য কী মনে হয়?
মমতা শঙ্কর : পার্থক্য একটাই, মৃণাল দা, সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালকরা বছরে একটা সিনেমা বানাতেন। আর এখনকার পরিচালকরা বছরে অনেক কাজ একসঙ্গে করেন। এটাই তফাৎ। তবে কৌশিকের মতো যারা ভালো ছবি বানান, তারা কাজটা ভালোভাবেই করেন, মন দিয়েই করেন। তাই অসুবিধা হয় না। তবে টেকনিক্যালি অনেক কিছু বদলেছে। আগে অনেক অসুবিধা করে কাজ করতে হতো। এখন সবকিছুতেই অনেক সুবিধা, সময় বাঁচে। তখন একটার বেশি ২-৩টি টেক দিতে হলে নিজেরই অস্বস্তি হতো। এদিকে আমি আবার একটু খুঁতখুঁতে, ঠিকঠাক না হলে খুশি হতে পারি না। এখন সেটা ভাবতে হয় না। তবে এখন সময়টা খুব প্রয়োজনীয়। তাড়াতাড়ি কাজ তুলতে হয়। তখন আমার মনে হয়, কাজটিতে আরেকটু সময় দিলে আরো ভালো হতো।

নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়?
মমতা শঙ্কর : কোনো অসুবিধা হয় না। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। আমি বরং মুগ্ধ হয়ে নতুনদের কাজ দেখি। নতুনরা এত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে, আমি হয়তো এত বছর পরও সেটা পারি না।

অভিনয় ছাড়াও নৃত্যশিল্পী হিসেবে আপনার আরেকটা পরিচয়, কোনটা হৃদয়ের বেশি কাছের?
মমতা শঙ্কর : আমার দুই ছেলে রাতুন আর ঋজুলের মধ্যে যেমন আমি পার্থক্য করতে পারব না। এই দুটিতেও পারব না।

বাংলায় রবীন্দ্রনাথের পর আপনার বাবা উদয় শঙ্কর শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটা স্তম্ভ। তবে এখন আর ছেলেদের সেভাবে শাস্ত্রীয় নৃত্যে আগ্রহী হতে দেখা যায় না, আপনি কী মনে করেন?
মমতা শঙ্কর: না, না, তা কেন! আসেন তো। যারা আসার তারা ঠিকই আসেন, শাস্ত্রীয় নৃত্য শেখেন। এটা আমি ঠিক মানতে পারলাম না। তবে হ্যাঁ, অন্যান্য নাচের তুলনায় হয়তো সেটা কম। তবে ছেলেরা শাস্ত্রীয় নৃত্যে এখনো আগ্রহী। যারা করার, তারা ঠিকই করেন।

নৃত্যশিল্পী হিসেবে আপনাকে কোরিওগ্রাফিতে সেভাবে কেন দেখা যায় না?
মমতা শঙ্কর : হ্যাঁ আমি করেছি। দেবদাস-এ যেমন করার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওভাবে করা হয়ে ওঠেনি। ডেট ক্ল্যাস করে গেল বলে। তবে আমার নাচ ভিডিও করে তুলে নিয়ে গিয়েই সেই নাচ করিয়েছিলেন সঞ্জয়লীলা বনশালি। আমার অনেক মুভমেন্ট নেয়া হয়েছিল। এছাড়া ‘আবহমান’, ‘বিজয়ার পরে’ ছবিতেও কোরিওগ্রাফি করেছি। যেগুলোতে আমায় বলা হয়, করি।

কখনো ছবি পরিচালনাতে আসার ইচ্ছা হয়নি?
মমতা শঙ্কর : খুবই ইচ্ছা করে, তবে এখনো অতটা সাহস হয়নি। মনে হয় কেউ ছবি করে আমায় ঠিক-ভুল জিজ্ঞেস করলে হয়তো আমি বলতে পারব, তবে পুরোপুরি পরিচালনায় সাহস ঠিক পাই না।

অভিনয় দুনিয়া থেকে শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে অনেকে রাজনীতিতে আসছেন, আপনার কখনো…
মমতা শঙ্কর : (প্রশ্ন শেষের আগেই) একদম না, এক্কেবারে না। অনেকে বলেছেন, প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু নাহ। আমি রাজনীতির কিছুই বুঝি না। ওর থেকে বহু হাত দূরে।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়