সম্পাদক পরিষদ : সাংবাদিক নির্যাতনের হাতিয়ার সাইবার নিরাপত্তা আইন

আগের সংবাদ

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র : সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পরের সংবাদ

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা এবং বিবিধ প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুর্গাপূজা কাছাকাছি এলেও কিছু কিছু জায়গায় দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য প্রতিমা ভাঙচুর করার সংবাদ আমরা সবাই কমবেশি পেয়ে থাকি। ফরিদপুরের তাম্বুলখানায় মাছ বাজার-সংলগ্ন মন্দিরে শারদীয় দুর্গা প্রতিমা ভাঙার খবর আমাদের বেদনাহত করেছে।
আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের সনাতনী সম্প্রদায় দুর্গাপূজা উদযাপন করবে। জানা গেছে, এ বছর ৩২ হাজার ৪৬০টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় ২৯২টি বেশি। পূজা যেহেতু পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়, সেহেতু পূজার বেশ কয়েক দিন আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয়। ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরে যাতে হামলা না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে কিছু দুষ্কৃতিকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই দুর্গাপূজা নিয়ে কোনো উগ্রবাদী মানুষ যদি দুঃখজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। ছোট ছোট শিশুরা উদগ্রীব হয়ে বসে থাকে, কখন দুর্গাপূজা আসবে, কখন তারা নতুন জামা কাপড় পরে আনন্দ করবে। ভক্তরা অপেক্ষা করে বসে থাকেন, মাতৃ চরণে অঞ্জলি দিয়ে ভক্তি ও প্রেমে নিজেকে সমৃদ্ধ করবে।
উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের মানবতাবোধ এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ পরিচালনা করাও সরকারের উচিত। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সবার আগে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করার যে দাবি বিভিন্ন মহল থেকে করা হয়েছে, তার অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে। পাশাপাশি এ দেশে বসবাসরত হিন্দুদের যেন কোনোভাবেই আর বিভাজিত ও নির্যাতিত হতে না হয়, তার জন্য আইনের সংস্কার করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি। অনেক দেবোত্তর সম্পত্তি বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে বলে মিডিয়াতে প্রচার আছে। দেবোত্তর সম্পত্তিগুলো যাতে দখলমুক্ত হয়, তার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়া দরকার। বিগত সময়ে বিভিন্ন হামলায় যে মন্দিরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে মন্দিরগুলোর নির্মাণকাজ চলমান আছে কিনা তাও দেখতে হবে।
দুর্গোৎসবে তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়ে এলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো আশ্বাস আসেনি, যা খুবই দুঃখজনক। সপ্তমী থেকে নবমী অফিস খোলা থাকার কারণে লাখ লাখ সনাতনী সম্প্রদায় পূজায় বসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারছে না। এই উৎসব বছরে একবার আসে। তাই সব সনাতনী একসঙ্গে পূজা উদযাপন করতে ইচ্ছুক। সরকার চাইলেই ক্ষমতাবলে এই বছর থেকে আসন্ন দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সনাতনী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবি পূরণ করে দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, পূজা ও ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ করার পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য সচেতনতা তৈরি করার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন।
দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের পরিপূরক হয়ে উঠুক। প্রত্যাশা রইল দেশের মঙ্গলের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। সাম্প্রদায়িক হিংসা, বিদ্ধেষ মানুষের মানবিক চরিত্র নষ্ট করার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করে। আমাদের মনে রাখতে হবে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশে বাস করছে। বাংলাদেশের প্রায় সবাই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই শ্রদ্ধা থেকেই মানবতার সৃষ্টি হয়। এই মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য একটি অশুভ চক্র বারবার চেষ্টা করেছে। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও শান্তিকামী অনেক সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ এই চক্রের হাতে অত্যাচারিত হয়েছে। আমরা চাই দেশের সব মানুষ ভয়হীন চিত্তে তাদের নিজ ধর্ম পালন করুক। প্রত্যাশা করছি, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় সবাই মিলেমিশে থাকবে।

রূপম চক্রবর্ত্তী : চট্টগ্রাম থেকে
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়