ভূমি আইন ভঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা : নাটোরে ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নারী আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন

আগের সংবাদ

ফের আলোচনায় ড. ইউনূস : হতে চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান > জাতীয় দুর্যোগে নেই জাতির পাশে

পরের সংবাদ

ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক ভাষা

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ওবায়দুল কাদের প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। বলেন, বিএনপির মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। তার এই কথার উত্তর কে দেবেন? তিনি এই কথা বলেছেন মিরপুরের দারুস সালামের বালুর মাঠে দাঁড়িয়ে। কী বলেছেন তিনি তা শুনি/পড়ি আগে, তারপর কথা বলা যাবে।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে- এই মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে শেখ হাসিনা হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। গরিব মানুষদের বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে জেতাতে হবে।’
গত শনিবার মিরপুর-১ নম্বরের দারুস সালাম বালুর মাঠে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভা ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ কর্মসূচি নেয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। (প্র/আ ২৭ আগস্ট)
জগৎবিখ্যাত ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কি তার একটি বইয়ে লিখেছিলেন যে, একটি বাক্যের সারফেস বক্তব্য যে মিনিং বা অর্থ ধারণ করে, ডিপার লাইনে অন্য অর্থ ধারণ করে। তার মানে একটি পঙ্ক্তির ডাবল অর্থ বহন করে। উদাহরণ হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারি। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে। তার মানে হচ্ছে বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী দল। তারা নির্বাচনে জিতে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে মেরেকেটে বা অন্য কোনো উপায়ে, যা আমরা চর্মচক্ষে দেখতে পাচ্ছি না। এই রকম একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের শক্তি ও ক্ষমতাকে শেষ বা বিলীন করে দেবে?
এটা আমার বোধে আসছে না। বিএনপি যদি সন্ত্রাসী দল হয়ে থাকে, তাহলে সেই দলেরই রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন থাকে কী করে? এজন্যই কি যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ওই দলটিকে নিবন্ধনমুক্ত করে দিতে দাবি জানিয়েছে? সেই সঙ্গে সরকারি দলের ওই দুটি অঙ্গ দলও নির্বাচনের আগেই নিষিদ্ধ করতে চায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা মুখে বলেন বিএনপি-জামায়াত একজোট আবার সেই জামায়াত যখন পুলিশের অনুমতি পায় মিটিং করার তখন তারা চুপ। যে দলটি ১০ বছর রাস্তায় নামতে পারেনি, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত, সেই দলটির নিবন্ধন বাতিলের পরামর্শ দিলেও নির্বাচন কমিশন তা করেনি। তার মানে উচ্চ আদালতকেও অমান্য করার রাজনৈতিক অধিকার আছে। নিষিদ্ধ করার দাবির পক্ষেই কিন্তু কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারা ক্ষমতায় গেলেই আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যাবে একরাতের (তাণ্ডবে) মধ্যেই। জনাব কাদের কেন এই শঙ্কা পোষণ করছেন? তিনি এবং তার দল কি গত ১৫ বছরে এমন সব অপরাধ করেছেন যে অন্য দল ক্ষমতায় এসেই একরাতের মধ্যেই তদের শেষ করে দেবে?
তার এই বাণী যে মিথ্যা ও বানোয়াট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ বিএনপি জানে, আওয়ামী লীগ তৃণমূলে ছড়ানো একটি রাজনৈতিক দল। তাদের শেকড় এদেশের মাটির গভীরে প্রথিত। সেই দলটির রাজনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত পোক্ত। তাদের নড়ানো কঠিন। সেটা বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক ভ্যালি খুব ভালো করেই জানে। গত ১৫ বছর চেষ্টা করেও তারা সেটা করতে পারেনি। না পারার কারণ বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি আওয়ামী লীগের মতো নয়। তারা এতটা শক্তিশালী নয়। তাদের কর্মীরা গত ১৫ বছরে সরকারি দলের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলনে এতটাই কাবু যে, তারা মামলা আর হামলায় পর্যুদস্ত। তারা যে শক্তিহীন ও নাস্তানাবুদ একটি দল সেটা কেবল ওবায়দুল কাদেরই বলেন না, নেতাদের একটি সংঘও এই প্রচারণায় বেশ তৎপর। ওইসব প্রচারণায় জনগণ বিশ্বাস করে না। কারণ তারা দেখছে আওয়ামী লীগ সরকার মুখে যতই দেশের উন্নয়ন, জনগণের উন্নয়ন আর স্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছেন, তাদের সেসব উন্নয়নের গতি প্রগতির নয়। অর্থাৎ সেইসব উন্নয়নে জনগণের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ ও উপকার করতে পারে না। যৎসামান্য, ৫-১০ শতাংশ মানুষ, যারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত, তারাই তার সুফল পাচ্ছে। সেখানে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র জনগণ। আমদানিকৃত হোক বা দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনে হোক, কোনো পণ্যই তারা কিনতে পারছে না। তাদের হাতে টাকা নেই।
সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন, সরকার কেন কাঁচামরিচের দাম কমাতে পারে না। আমদানি করার পরও কেন কমাতে পারে না। এর কি কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের? তিনি তো সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি তো কলামও লিখতেন বাংলার বাণীতে। তার মনে কি কোনো প্রশ্নই জাগেনি নিত্যপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে? কেবল আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো এই স্বপ্নে বিভোর হলেই কি দেশ অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে? নাকি এটাই সত্য যে- পণ্যের, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি মানে হচ্ছে আমরা পৌঁছে যাচ্ছি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। উন্নত/উন্নয়নশীল দেশের কাঁচাবাজারে যেমন নিত্যপণ্যের দাম বেশ উঁচু, আমাদেরও উঁচুতে উঠতে দোষ কী?

দুই.
এগুলো সাইড টক। বিভিন্ন সামিটে যেমন সাইড টক করেন বিভিন্ন দেশের নেতারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে। পরস্পরের সাহায্য সহযোগিতা বাড়ানোর প্রশ্ন নিয়ে। এই কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ বা শাকসবজির দাম নিয়ে যেসব প্রশ্ন জনগণের মনে আকুপাকু করে, সেগুলোই সামান্য হাওয়া দিলাম আমি।
শুনলাম ওবায়দুল কাদের বলছেন নির্বাচনে বিএনপি এলে তা অর্থবহ হবে। এই কথার মানে কী? তিনি বললেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে, আবার সেই দলটিকেই নির্বাচনে টেনে আনার কথা বলছেন। আসলে কী যে কী বলতে চাইছেন, সেটা বোঝা কঠিন। একবার বলছেন তারা ক্ষতিকারক দল আবার বলছেন তারা নির্বাচনে এলে নির্বাচন অর্থবহ হবে। তিনি এবং তার দল কি চায় যে বিএনপি নির্বাচনে আসুক? নির্বাচনটি অর্থবহ হোক, তাদের বিরুদ্ধে দেশের ভোটারদের যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অনাস্থা আছে, তাকে চাপা দেয়ার জন্যই তিনি/তারা চান নির্বাচনে বিএনপি আসুক।
কিন্তু বিএনপির তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া এবং এই ইসির নেতৃত্বে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তাহলে সংকট তো কাটল না। নির্বাচনী সংকট না কাটলে তো দেশে রাজনৈতিক যে অস্থিরতা চলছে, তা কমবে না। আর নির্বাচনের ফিল্ড উপযুক্ত করতে হলে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে, তার কোনো উদ্যোই নেই কমিশনের। কমিশনার আলমগীর তো বলেছেন তাদের দায়িত্ব নয় কোনো দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। বিএনপি নির্বাচনে আসুক তা খুব ভালো কিন্তু না এলে তা তাদের দায়িত্ব নয় নির্বাচনে নিয়ে আসা।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের একজন কমিশনারের চেতনায় যদি আওয়ামী চেতনার উপকরণ হয়, তাহলে কি তারা কমিশনের ইতিকর্তব্য পালন করতে পারবে? পারবে না। নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে যে তারা জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে কাজ করবেন।

তিন.
নির্বাচনে শেখ হাসিনা হেরে গেলে বাংলাদেশ হারবে। আর ওবায়দুল কাদের বললেন, বিএনপি জিতলে দেশটি পাকিস্তান হয়ে যাবে।
ওবায়দুল কাদেরের এই বাণী কেবল মিথ্যাই নয়, তিনি ও তারা যে মিথ্যাকে শাক দিয়ে ঢেকে চলেছেন এটা তারই নমুনা পঙ্ক্তি। মিথ্যাগুলো দাঁত কেলিয়ে হাসছে। যেমন এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় তিনবার ছিল। দেশটি পাকিস্তান হয়ে যায়নি। আবারো ক্ষমতায় এলে দেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে না। তবে পাকিস্তান থেকে কিছু পণ্য আমদানি বেশি হতে পারে। সেই বিবেচনায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের ওপর ১০০ ভাগ নির্ভরশীল। তাতেই কি জনগণ বলছে দেশটি ভারতীয় হয়ে গেছে? আমরা তো প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুনেছি, আমি ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না। আপনারা রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ভারতে পরামর্শ কুড়াতে প্রতিনিধি দল পাঠান। বরং জনগণের মনে এই ভয় আছে যে দেশটি রাজনৈতিকভাবে ভারতের করায়ত্ব হয়ে যাচ্ছে, যা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মর্যাদা হারিয়ে ফেলছি কী? এসব রাজনৈতিক শঙ্কার পেছনে কাজ করছে তাদের বিপুল পরিমাণের দুর্নীতি এবং লুটেরা কারবার। সেই ভয় কি ওবায়দুল কাদেরের মনে জেঁকে বসেছে? সেই ভয়েই কি তিনি এমন যুক্তিহীন কথা বলছেন? তৃণমূলের আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কর্মী থাকার পরও যখন অনুপ্রবেশকারী জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের লোকেরা তাদের সংগঠনে ঢুকেছে, সেটা রাজনৈতিক দুর্নীতিরই প্রকাশ্য রূপ। রাজনৈতিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও দলীয় সরকারের লুটেরা দুর্নীতি মিলেমিশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেবেন কীভাবে, ওবায়দুল কাদেরকে সেটাই ভাবতে হবে। বিএনপি দেশটি পাকিস্তান করল বা করবে কি না, তারা যে দেশটাকে ভারতের বাজারে পরিণত করেছে, এটা তিনি কী দিয়ে ঢাকবেন?
ভারত পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ, চালের ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করায় এ দুটি পণ্য বাংলাদেশে আনতে অনেক খরচ করতে হবে। মিয়ানমারও তাদের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চীনের ঋণপ্রবাহ কমেছে।
এগুলোসহ আরো যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। বিএনপি নির্বাচনে এলো কি এলো না সেটা দেখার আগে জনগণের সেবায় মন দিন।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়