মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ৫৬

আগের সংবাদ

ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন : যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় তিন শতাধিক পদধারী বহিষ্কার

পরের সংবাদ

আরো অনেক দিন অনেক মুহূর্তে থেকে যাবেন কেকে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তার সুরের সফর হঠাৎ থেমে গিয়েছিল কলকাতা শহরের বুকেই। যিনি গলার জাদুতে ছুঁয়ে গিয়েছেন আট থেকে আশির মন, আরো অনেক সুর উপহার দেয়ার আগেই হঠাৎ চলে যেতে হলো তাকে। রাজার মতোই… ঠিক যেমন করে চলে যাওয়ার কথা ছিল তার, তবে এত তাড়াতাড়ি নয়। শেষ গানে তিনি যেন শুনিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন অমোঘ সত্যি… হাম রহে ইয়া না রহে কাল.. কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল..। যে কথা যে ভীষণ সত্যি, তা যেন আরো একবার সত্যি হয়ে মনে পড়ে যায় তার জন্মদিনে। গত ২৩ আগস্ট ছিল কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ কেকের জন্মদিন। ১৯৬৮ সালের ২৩ আগস্ট দিল্লির এক মালয়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে বিয়ের পর দিল্লি থেকে মায়ানগরী মুম্বাইতে চলে আসেন তিনি। যে শিল্পী সুরে ও গানে জয় করেছেন গোটা দর্শককুলকে, তার নাকি ছিল না কোনো প্রথাগত সুর শিক্ষাই! দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন কেকে। তার বিষয় ছিল বাণিজ্য। কিন্তু এক সময় হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন কেকে। সুরের জগতে তার ক্যারিয়ার শুরু মূলত তার বিবাহের পরই। তবে সরাসরি ছবিতে সুযোগ পাননি কেকে। তার গানের কাজ শুরু হয়েছিল, বিজ্ঞাপনী ‘জিঙ্গলস’ তৈরি দিয়ে। একাধিক নামি সংস্থার বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল বানিয়েছিলেন কেকে। এ আর রহমানের গানে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে প্রথম কাজ করেছিলেন কেকে। এরপরই তার বিজ্ঞাপনী দুনিয়ায় আসা ও পরবর্তী সময় অ্যালবাম মুক্তি। তার প্রথম অ্যালবাম ‘পল’ দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার গোটা ক্যারিয়ারের সেরা দুটি অ্যালবামই ছিল ‘পল’ ও ‘ইয়ারো’। কেবল হিন্দি বা মালয়ালি নয়, ১১টি ভাষায় সমান দক্ষতায় গান গেয়েছেন কেকে। এর মধ্যে ছিল, মালয়ালি, তামিল, তেলেগু, হিন্দি, কন্নড়, বাংলা গুজরাটি ও অসমিয়া। একবার কেকে তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি মালয়ালি হলেও মাত্র ১টি মালয়ালি গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
কেকেকে নিয়ে সবচেয়ে অবাক করার মতো তথ্য হলো তার কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছিল না সংগীত নিয়ে। ছোটবেলায় একবার তিনি গানের প্রথামাফিক ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু বিন্দুমাত্র আকর্ষণ অনুভূত না হওয়ায় ক্লাসে যাওয়া ছেড়ে দেন কেকে। একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি গান কেবলমাত্র শুনে শুনেই মনে রাখতে পারতাম। শুনে শুনে অনেক গান শিখেছি আমি, আর কিছুটা ভগবানের আশীর্বাদ। পরবর্তী সময় আমি শুনেছিলাম, কিশোর কুমারও কখনো গান শেখেননি। আমার সংগীতের ক্লাসে না যাওয়ার আরো একটি কারণ পেয়ে গিয়েছিলাম।’ গান ছাড়াও, কেকে ছিলেন ক্রিকেটের ভক্ত। তার গাওয়া ‘জোশ অফ ইন্ডিয়া’ গানটিতে দেখানো হয়েছিল ভারতীয় দলকে। বিশ্বকাপের সময় ভারতীয় দলের সমর্থনে এই গানটি তৈরি করেছিলেন তিনি।
জিঙ্গলের হাত ধরেই তার সংগীত জগতে প্রবেশ। মাত্র ৪ বছরে সাড়ে ৩ হাজার জিঙ্গল গেয়েছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে বলিউডে পা রাখেন তিনি। হম দিল দে চুকে সানাম ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ আসে তার। ‘তড়প তড়প’ গানের মাধ্যমে তার প্রথম প্লেব্যাকের সুযোগ আসে। আর সেই গানই পরে হয় সুপারহিট। ওই বছরই এক মিউজিক কোম্পানি নতুন শিল্পী খুঁজছে। পরিচিত নয়, বরং নতুন ধরনের গলায় গান শোনাতে চেয়েছিল তারা শ্রোতাদের। সেখানে সুযোগ পেলেন কেকে। লেসলে লুইসের সঙ্গে যৌথভাবে কেকের অ্যালবাম পল রিলিজ করল। টাইটেল ট্র্যাক থেকে শুরু করে আপকি দুয়া, ইয়ারোর মতো গান মন ছুঁয়ে গেল শ্রোতাদের। কেকে ম্যাজিকে বুঁদ হতে শুরু করল নতুন প্রজন্ম। আর এই অ্যালবামের জন্য সেরা গায়কের পুরস্কার পেলেন কেকে। গত বছর কলকাতায় নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও হয়নি শেষরক্ষা। তিলোত্তমার বুকেই হারিয়ে যান। ২৬ বছরের ক্যারিয়ারে বারবার মানুষকে সুরের বাঁধনে বেঁধেছেন, মুগ্ধ করেছেন কেকে। বলিউডের গান ছাড়াও অনেক সিরিয়ালের গানও গেয়েছেন। অংশ নিয়েছেন ‘কোক স্টুডিও’তে। সাবরি ভাইদের গেয়েছেন কাওয়ালি। সেরা প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস, জি সিনে অ্যাওয়ার্ডস, পাঁচবার আইফা অ্যাওয়ার্ডস, তিনবার গিল্ড অ্যাওয়ার্ডস, একবার জিএমএ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বরে বরাবর মন জয় করেছেন শ্রোতাদের। তা সে রোম্যান্টিক হোক বা স্যাড সং, কেকের কণ্ঠে যেন প্রাণ পেয়েছে গান। কেয়া মুঝে পেয়ার হ্যায়, দিল ইবাদত, আখো মে তেরি, জরা সা, জিন্দেগি দো পল কি, সচ কহে রহা হ্যায়, ইয়ারো, অলভিদা, বিতে লমহের মতো গানে আজো বুঁদ সংগীতপ্রেমীরা। প্রেমে-অপ্রেমে, বন্ধুত্বে, আনন্দে, উদযাপনে, ভালোবাসা, ভালোলাগায়, মন খারাপের দিনে, ব্যস্ত সকালে, অফিস ফেরত ভিড় বাসে… শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে আরো অনেক দিন, অনেক মুহূর্তে থেকে যাবেন।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়