আইজিপি : সিআইডি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ঘিরে শোডাউন : কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় বড় সমাবেশের পরিকল্পনা

পরের সংবাদ

শুধু কথায় নয়, কাজেও চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনের প্রতিফলন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০২১ সালে আগস্ট মাস শেষে আমার এ কলামে দৈনিক ভোরের কাগজে আমি ‘শোকের মাসে আমরা বঙ্গবন্ধুকে কতটা স্মরণ করলাম?’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। সেখানে আমি কিছু প্রশ্ন তুলেছিলাম, যা এ বছরও গুণে এবং মানে সমানভাবে প্রযোজ্য। আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম, ‘আমরা সবাই জানি, আগস্ট মাস বাঙালির শোকের মাস। জাতির পিতাকে হারানোর শোক। তাই জাতি অত্যন্ত বেদনাক্রান্ত মনে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে গভীর শ্রদ্ধায় জাতির পিতা হারানোর শোক পালন করবে, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এ শোক পালন করার ধরন, মাত্রা, এবং দর্শন কেবলই একজন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর শোক নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে ইতিহাসের এক জঘন্যতম এবং নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাই জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে বা মৃত্যুর মাসে পিতাকে স্মরণ করে কেবলই ভারাক্রান্ত মনে বেদনাক্রান্ত হৃদয়ে অশ্রæ বিসর্জন করার মধ্যেই জাতির কাজ সীমাবদ্ধ নয়। তাই প্রতি বছর আগস্ট মাসে আমরা জাতীয় শোক দিবস পালন করি; কিন্তু সেটা কি কেবলই আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাকি বঙ্গবন্ধুর গৌরবময় জীবন, রাজনৈতিক আদর্শ এবং গণমুখী রাজনৈতিক দর্শনকে আমরা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি, সেটা বিবেচনায় নেয়া জরুরি। তাই আগস্ট মাস শেষ হওয়ার পর আমাদের নিজেদের কাছে নিজেদেরই প্রশ্ন করতে হবে : শোকের মাসে আমরা বঙ্গবন্ধুকে কতটা স্মরণ করলাম?’ লম্বা উদ্ধৃতির জন্য দুঃখিত কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এ প্রশ্নটা এ বছরও উত্থাপন করলাম কেননা জাতীয় শোক দিবস পালনকে কেন্দ্র করে, আমরা সত্যিকার অর্থেই আগস্টজুড়ে যা কিছু করলাম, তার ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনকে আমরা আমাদের সমাজ জীবনে, জাতীয় জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে এবং উত্তর প্রজন্মের মননে কতটা সঞ্চারিত করলাম, সেটা বিবেচনায় নেয়া জরুরি। আগস্ট মাসকে জাতীয়ভাবে শোকের মাস হিসেবে পালন করা হলেও মোটা দাগে ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের সর্বত্র সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা হয়ে থাকে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নানা বিশ্লেষণ নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। সরকারিভাবেও একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপানো হয়। বাংলাদেশে টেলিভিশন ছাড়াও প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনীতি, দর্শন ও আদর্শ নানা ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়, যেখানে মোটামুটি ঘুরেফিরে একই আলোচনা আসে। আমরা যদি গত ৫ বছরের ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় যেসব আলোচনা হয়েছে, তার কন্টেন্ট গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে খুব একটা নতুন কিছু পাওয়া যাবে না। একইভাবে বিগত ৫ বছরের ১৫ আগস্টে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের ক্রোড়পত্রগুলো একত্র করে যদি বিভিন্ন লেখার কন্টেন্ট বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে এখানেও খুব নতুন কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। যেমন আমি যখন এ লেখা লিখছি, আমার বারবার মনে হচ্ছে, এসব কথা আমার আগে অনেকে অনেকবার নানাভাবে বলেছেন এবং লিখেছেন। এমনকি আমি নিজেও অনেকবার দৈনিক ভোরের কাগজে বা পত্রিকান্তরে এসব কথা বারবার লিখেছি। প্রশ্ন করেছি সত্য, কিন্তু কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। একইভাবে শোকের মাসের আনুষ্ঠানিকতাও মোটাদাগে একই। বঙ্গবন্ধুর মাজারে বা বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার ব্যবস্থার করা, কোনো কোনো জায়গায় গরিব, দুঃখী, ফকির, মিসকিন ও নিম্নবিত্তের মানুষের জন্য কাঙালি ভোজের ব্যবস্থা করা, বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন ও আদর্শ নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া দল হিসেবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান পালন করা। এবং প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং ভবিষ্যতেও একই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস ও শোকের মাস পালিত হবে।
এসব আনুষ্ঠানিকতার একটা সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অবশ্যই আছে এবং সেটা অনস্বীকার্য। কিন্তু মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি শুধু আগস্ট মাসেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করব? শুধু শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলাপ করব, আলোচনা ও সেমিনার করব? নাকি বঙ্গবন্ধুকে আমরা কথায় নয়, কাজে অনুসরণ করব? নাকি বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের দর্শনকে আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে পরিণত করব? নাকি বঙ্গবন্ধুর গণমুখী রাষ্ট্রচিন্তাকে রাষ্ট্রপরিচালনার আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করব? নাকি বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের মহিমাকে আমরা আমাদের ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে এবং জাতীয়জীবনে প্রতিফলন ঘটাব? নাকি গরিব, দুঃখী, মেহনতি ও মজদুর মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শনকে আমরা আমাদের জীবনাচারের মধ্যে ধারণ করব? এসব প্রশ্ন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা জরুরি।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বঙ্গবন্ধুর চর্চা শুধু মুখে করলে হবে না, বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ ও দর্শনের চর্চা করতে হবে মনে, মননে, চেতনায়, জীবনাচারে ও বিশ্বাসে। শোকের মাস আগস্টকে ঘিরে শুধু কিছু কমন আনুষ্ঠানিকতা ও স্মৃতিতর্পণের মধ্যে যেন আমাদের বঙ্গবন্ধু চর্চা সীমিত না হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুর চর্চা করতে হবে ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে এবং রাজনৈতিক জীবনে। দৈনিক ভোরের কাগজের ২০২১ সালের সে লেখা আমি শেষ করেছিলাম এভাবে, ‘বঙ্গবন্ধুর মাহাত্ম্য, মহানত্ব, বিশালত্ব এবং সুমহান ব্যক্তিত্বের কারণেই নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে এ দেশের মাটি থেকে মুছে ফেলা যায়নি। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মাটি-মানুষের নেতা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা ছিলেন, তাই গণমানুষই বঙ্গবন্ধুকে জিইয়ে রেখেছে এ দেশের আমজনতার চেতনায় এবং দেশপ্রেমের আদর্শে।’ পরিশেষে বলব, শুধু কথায় নয় কাজেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনের প্রতিফলন চাই।

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন : নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়