আইজিপি : সিআইডি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ঘিরে শোডাউন : কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় বড় সমাবেশের পরিকল্পনা

পরের সংবাদ

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সময়ের প্রয়োজনে আমরা আধুনিকতার দিকে বেশি গুরুত্ব বাড়াচ্ছি। তাই নগর সভ্যতার প্রসার ঘটাতে অবকাঠামোনির্ভর বাহারি উন্নয়নের সমাহারে দেশের বিভিন্ন নগরীগুলোকে নানা পরিকল্পনায় সুসজ্জিত করছি। বিশেষ করে দেশের সিটি করপোরেশন এরিয়াগুলোকে আধুনিকায়নের রোল মডেল তৈরির চেষ্টা করছি কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আমরা আমাদের দেশের মহানগরীগুলোকে কতটা আধুনিক ও জনবান্ধব করতে পেরেছি? প্রতিটি দেশের মহানগরীগুলোতে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে নগর উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক উন্নয়নই জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না। যেখানে নগরে বসবাসরত মানুষের জন্য আজো শহর বা মহানগরীকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়নি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, শুধু প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়ন কখনোই একটি শহরকে বাস্তবিক অর্থে বসবাস উপযোগী করে তৈরি করতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন মানববান্ধব যুগোপযোগী দীর্ঘমেয়াদি জনকল্যাণমূলক স্থায়ী সুদৃঢ় কর্মপরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ।
একটি শহরকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে সেখানকার মানুষের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে আগে খুঁজে বের করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে বাস্তবিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আমরা দেখেছি, দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনগুলোতে একই সমস্যা বিদ্যমান। প্রতিটি এলাকায় যানজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পরিবেশদূষণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবনতি, যার প্রভাবে অনিয়ন্ত্রিত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল বিরাজমান থাকে। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো ভারি বর্ষণেরও অবস্থা দেখা দেয়। এ অবস্থাতে দেশের মহানগরীগুলোতে দেখা অধিক জলাবদ্ধতার ফলে জনজীবন হয়ে উঠে বিপর্যস্ত। মানুষ হয়ে পড়ে পানিবন্দি। সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা স্থবির হয়ে পড়ে। চলমান বর্ষা মৌসুম শুরুর দিকে তেমন একটা বৃষ্টিপাত না হলেও চলতি আগস্ট মাসে বর্ষা বুঝি তার আপন রূপে দেখা দিল। এতে যদিওবা চলমান তাপদাহ ও তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে দেশের অনেক স্থানেই দেখা দিয়েছে অসহনীয় জলাবদ্ধতা। ফলে দেশের অনেক স্থানেই মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। যেখানে চট্টগ্রামের মতো একটি বাণিজ্যিক নগরীও টানা ক’দিনের বৃষ্টিতে পানিবন্দি হওয়ার কারণে সাধারণ জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। নগরীর অলিগলিতে পর্যন্ত পানি ঢুকে গেছে। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এরিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে চলতি মৌসুমে এক দিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩২২ মিলিমিটার। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধারণা, তিন দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। আমরা দেখেছি, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নেয়া ব্যয়বহুল ১১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্যোগও নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এ থেকে আমাদের অন্য সিটি করপোরেশনগুলো কী বার্তা পেল। ভবিষ্যৎ জলাবদ্ধতা থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এখনই সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। আমরা দেখেছি, অল্প বৃষ্টিতে ঢাকা শহরেও অধিক জলজটের সৃষ্টি হতে। অল্প বৃষ্টিতেই এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জনদুর্ভোগ পৌঁছায় চরম পর্যায়ে। যেখানে মাত্র ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই শহর পানিতে তলিয়ে যায়। ঢাকার প্রধানতম সমস্যার হচ্ছে ঢাকার আশপাশের খালগুলো অবৈধভাবে দখল বা ভরাট করা। অপরিকল্পিতভাবে নগর উন্নয়নের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। নালা নর্দমাগুলো ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে অতি সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার তৈরি হয়।
রাজধানী ঢাকার অনেক অংশ এখনো ওয়াসার ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের বাইরে আছে। এছাড়া ঢাকার পাশঘেঁষে ৪টি নদী ও ৬৫টি খাল মহানগরীর পানি নিষ্কাশনে বিশেষ ভূমিকা ছিল। যা আজ নদী, নালা-খালসহ সব প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট ও অবৈধ দখলদারের হাতে চলে যাওয়ার ফলে অস্তিত্বহীন। সেখানে গড়ে উঠেছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। ফলে বৃষ্টির পানি ও বিপুল পরিমাণ তরল বর্জ্য অপসারিত হতে না পেরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি কারণ হচ্ছে। জলাবদ্ধতা ঢাকার অনিবার্য পরিণতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নানা স্থানে অপরিকল্পিত বক্স-কালভার্ট নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে তৈরি প্রয়োজনের চেয়ে সরু বক্স কালভার্টগুলো বৃষ্টির পানি অপসারণে তেমন কাজে আসে না। হাতিরঝিলের মতো যেসকল বড় বড় জলাধার আছে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে আরো জলাধার সৃষ্টির কথা বিবেচনায় আনতে হবে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই নগরকেন্দ্রিক ভরাট হয়ে যাওয়া খাল-নদী নালা খনন, খালের তলদেশে জমাকৃত বর্জ্য এবং স্পয়েল আর্থ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে। প্রয়োজনে জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ কঠোর ভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। যা জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

মো. মিঠুন : উন্নয়ন কর্মী
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়