অর্ধকোটি টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার ৪

আগের সংবাদ

বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর ব্রিকস : ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

বিপাকে পঞ্চগড়ের চা চাষিরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চা বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। বাঙালির আড্ডার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ এখন চা। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব স্তরের বাঙালিরই সকাল-সন্ধ্যা চা ছাড়া কাটতেই চায় না যেন। চা বাগানের কথা মনে হলেই সিলেটের মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও দেশের পার্বত্যাঞ্চলের কথাই আগে মাথায় আসে। কিন্তু সমতল ভূমিতে যে চাষ হতে পারে পঞ্চগড় তার বাস্তব উদাহরণ। দেশের হিমালয় কন্যাখ্যাত পঞ্চগড়ের সমতলে গড়ে উঠেছে সারি সারি চা বাগান। ইতোমধ্যে পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে।
১৮৫৪ সালে ব্রিটিশদের হাত ধরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয় সিলেটের মালিনীছড়ায়। তারপর ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সড়কের পাশে, উঁচু পতিত জমিতে কিংবা পুকুর পাড়ে এমনকি বাড়ির আঙিনায়ও দেখতে পাওয়া যায় এ চা বাগান। এখানকার চা বাগানের মাঝে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট, স্যালিলেন টি এস্টেট, ডাহুক টি এস্টেটের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পঞ্চগড় জেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় হাজারো চা বাগান। বদলে দিয়েছে বেকার শ্রমিকের ভাগ্য, তৈরি করেছে কর্মসংস্থানের। গত দুই দশকে পঞ্চগড়ের গোচারণভূমি সবুজে ভরে গেছে।
দেশের একমাত্র জেলা পঞ্চগড় যেখানে সমতল ভূমিতে চা চাষ হয়। শুরুতে চা চাষিরা সাফল্যের মুখ দেখলেও দিন দিন কমে যাচ্ছে এ সাফল্যের ছোঁয়া। মে থেকে জুলাই এই তিন মাসকে পঞ্চগড়ের চায়ের ভরা মৌসুম ধরা হয়। আর এই সময়টা এলেই কারখানা মালিকরা এক জোট হয়ে চা পাতার দাম খেয়াল খুশিমতো নির্ধারণ করেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চা চাষ এখন এগিয়ে গেলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চাষিদের। বছরের পর বছর মালিকদের শক্ত সিন্ডিকেট আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য এখন চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। হাঁপিয়ে উঠেছেন চাষিরা, কেটে ফেলছেন অনেক চা বাগান। চাষিদের অভিযোগ কয়েক বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বাড়লেও চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারখানা মালিকরা কিনছেন ১৩-১৪ টাকা কেজি দরে। চাষিরা ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন শ্রমিকরা। প্রশাসন বারবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।
চা চাষিরা চা পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে ইংরেজ নীলকরদের মতোই চুষে নেয়া হচ্ছে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য। প্রতিনিয়তই লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে তাদের। চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় উৎপাদন যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনি রপ্তানিও কমে এসেছে। প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় ১-২ কোটি কেজি চায়ের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তাই আগের মতো আর বাইরের দেশে এই চা পরিচিতি পাচ্ছে না। তাই চা হারাচ্ছে তার গুণাগুণ, চাষি হারাচ্ছে তার ন্যায্য পাওনা, শ্রমিক হারাচ্ছেন কর্মসংস্থান এবং দেশ হারাচ্ছে তার সম্ভাবনা।
যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপর ভর করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে তারা যাতে তাদের উৎপাদিত সবুজ অর্থনীতির ন্যায্যমূল্য পান সেদিকে ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি। পঞ্চগড় জেলার বিপুল সম্ভাবনাময় সবুজ অর্থনীতি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন কারখানা মালিক ও চা চাষিদের যৌথভাবে কাজ করা। পাশাপাশি প্রশাসনের উচিত বিপুল এই সম্ভাবনাময় খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে চা চাষিদের দিকে একটু নজর দেয়া।

আইরিন হাসান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়