প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে ২০ বছর ধরে চলছে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। পুলিশ যখন কোনো আসামি ধরে বেঁধে নিয়ে আসে, তখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। দিন দিন কমে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা। নৌপুলিশ ফাঁড়িটি একটি ভাড়া ভবনে সরিয়ে নিয়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করার দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার হালইসার গ্রামে ১৯৯১ সালে একটি টিনশেডের ঘরে হালইসার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রতি তলায় চারটি করে কক্ষবিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে। ২০০২ সালে পদ্মার ভাঙনে সুরেশ্বর বাজারে সুরেশ্বর নৌপুলিশ ফাঁড়ি বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০০৩ সালে ওই বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের হালইসার গোয়ালবাথান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষে অস্থায়ীভাবে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চালু হয়। এর পর ২০ বছর অতিবাহিত হলেও ওই বিদ্যালয়েই চলছে নৌপুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে নৌপুলিশ ফাঁড়ি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের সংকটে রয়েছে বিদ্যালয়টি। তাছাড়া আসামিদের ধরে নিয়ে এলে বিদ্যালয়ের পাঠদানের কোনো পরিবেশ থাকে না। আসামি তাদের স্বজন, স্থানীয় উৎসুক জনতার ভিড়- সব মিলিয়ে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের পরিবেশ। এতে শিশুদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে দিন দিন ছাত্রছাত্রী কমতে শুরু করেছে বিদ্যালয়টিতে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগী আক্তার ও আল হাসান বলেন, পুলিশ যখন কোনো আসামি ধরে বেঁধে নিয়ে আসে, তখন আমরা ভয় পাই। ভয়ে অনেকে ক্লাস না করে বাড়ি চলে যায়। অভিভাবক সালাম বেগম বলেন, বিদ্যালয়ে এসে পাঠদানে মনোযোগ দেয়ার কথা শিক্ষার্থীদের। পাঠদানের আগে বা পরে খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা তাদের। কিন্তু পাঠদান বা খেলাধুলার কোনোটাই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। কারণ, বিদ্যালয়ের ভবনের দোতলায় রয়েছে পুলিশের ফাঁড়ি, যা শির্ক্ষাীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দিতে চারটি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ এবং প্রধানশিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ না হলে চলে না। কিন্তু বিদ্যালয়ের ৮ কক্ষে মধ্যে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে মাত্র ৪টি কক্ষে আর দোতালার ৪টি কক্ষে চলছে পুলিশ ফাঁড়ি। এতে পাঠদানে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামসেদ আলী বলেন, নৌপুলিশ যখন অভিযান চালায়, তখন একসঙ্গে অনেক আসামি ধরে আনেন। তাদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাখা হয়। অনেক সময় বিদ্যালয়ের বারান্দায় অনেক আসামিকে বেঁধে রাখা হয়। আসামিদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে শিশুরা ভয় পায়। তখন শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করাতে হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, নৌপুলিশের ফাঁড়ি সরিয়ে নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু নৌপুলিশের কোনো সাড়া পাইনি। এভাবে একই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি ও স্কুলের কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। এলাকার অনেক সচেতন অভিভাবক তাদের সন্তনদের আমাদের স্কুল থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা নিরূপায়।
জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০ বছর ধরে বিদ্যালয়ের ভবনে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নৌপুলিশের এসপি বরাবরে ফাঁড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।
এ বিষয়ে নৌপুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, ফাঁড়ির কার্যক্রম চলানো যায় এমন একটি ভাড়া বাসা খুঁজছি আমরা। আমাদের সহায়তা করেন, বিদ্যালয়ের ভবন থেকে ফাঁড়ি সরিয়ে চেষ্টা আমাদের রয়েছে। আমরাও চেষ্টা করছি স্বাধীনভাবে ফাঁড়ি পরিচালনা করার জন্য। বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় বিদ্যালয়ের ভবনের দোতলায় কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে আমাদের।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।