ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

পাঁচ চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ : বিদেশিদের তৎপরতা > বিরোধীদের আন্দোলন > মূল্যস্ফীতি > অভ্যন্তরীণ কোন্দল > সরকারবিরোধী অপপ্রচার

পরের সংবাদ

ডেঙ্গু ঠেকাতে সচেতন হোন

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ডা. আশরাফুন্নাহার চৈতী
দেশে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কয়েক মাস ধরেই মানুষের মনে দেখা দিচ্ছে আতঙ্ক। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্লাটিলেট কমে যাওয়া। এ ছাড়া তীব্র মাথাব্যথা, মাংসপেশি ও চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে লালচে র‌্যাশ উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বেশি ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়। শরীরে দেখা দেয় পানির অভাব।
ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত একটি রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রথম মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় খাবার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয়।
ডেঙ্গু হলেই উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। ডেঙ্গু’র প্রকোপে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। কমতে থাকে রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা। তাই ডেঙ্গু ধরা পড়লে ওষুধের পাশাপাশি প্রয়োজন খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলা।

মশলাতেও মিলবে মুক্তি
তেলমশলা বা ভাজাভুজি এড়িয়ে চলতে বলা হলেও আমাদের ঘরোয়া অনেক মশলা আবার রোগপ্রতিরোধকারী। সাদা জিরা, কালো জিরা, ধনে, আদা, হলুদ এসবই শরীরের জন্য উপকারী। দুধে ভিজিয়ে কাঁচা হলুদ খেলে তা যেমন শরীরকে প্রদাহের থেকে রক্ষা করে, তেমনই ভাইরাসের থেকেও বাঁচায়। রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ভিটামিন সি এবং প্রোটিন। তাই সবজি ও ফলের পাশাপাশি খেতে হবে মাছ, মাংস, ডিম যা থেকে পাওয়া যাবে প্রোটিন। ডেঙ্গু র প্রকোপ কমার পরেও দিনে অন্তত একটি ডিম খাওয়া জরুরি। সঙ্গে খেতে পারেন টক দই। তবে বাটার বা চিজ একেবারেই চলবে না।

বেশি বেশি পানি পান
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত সাড়ে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বেশি ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়। এ কারণেই অন্তত ২ লিটার জলের সঙ্গে ডাবের পানি, ফলের রস খেতে হবে। তাই পানি, ফলের রসের সঙ্গে লস্যি, চিকেন বা টম্যাটো সুপ, ডালের জল, গ্রিন টি খেতে পারেন। দিনে প্রায় দু’ থেকে চার কাপ হার্বাল টি-ও খাওয়া যেতে পারে। যে কোনও গরম পানীয়ই শরীরের জন্য ভাল হলেও, বেশি পরিমাণে লিকার চা খেলে অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ফলের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন স্মুদিও। বাচ্চারা যেমন এটা খেতে পছন্দ করবে, তেমনই ভিটামিনের পরিমাণ বাড়বে শরীরে। ফলে ইমিউনিটি বাড়বে। তবে ঠান্ডা পানীয় খাবেন না। গরম বা রুম টেম্পারেচারে এনে খাওয়া ভাল। এ ছাড়া নরম সেদ্ধ জাউ ভাত, খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খেতে দিতে হবে। প্রয়োজন বুঝে ডেঙ্গু রোগীকে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশনও (ওআরসি) দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু নিয়ে যা জানা জরুরি

১. ডেঙ্গু জ্বরে প্রথম আক্রান্ত হলে জটিলতার ঝুঁকি কম। পরে আবার সংক্রমণ হলে একই ব্যক্তির জন্য ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, প্রথমবার সংক্রমণের সময় শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণুর বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, পরে ভাইরাসের ভিন্ন ধরন শরীরে ঢুকলে আগের অ্যান্টিবডি একে ধ্বংস করতে পারে না। তবে ভাইরাসকে ধ্বংসের চেষ্টা সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে রক্তে রাসায়নিক সাইটোকাইনের মাত্রা বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর কতটা জটিল হবে, তা নির্ভর করে সাইটোকাইনের ওপর। আবার ভাইরাস রক্তের মনোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকায় ঢুকলে সাইটোকাইন বেড়ে যায়। সাইটোকাইন কতটা বাড়ছে, তার ওপরই নির্ভর করে ডেঙ্গুর জটিলতা। তাই জ্বর সারলেও অন্তত এক সপ্তাহ পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে এবং বিশ্রামে থাকতে হবে।

২. ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট বা রক্তকণিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি শরীরের কোনো অংশ দিয়ে রক্তপাত না হয়, তবে প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কখন প্লাটিলেট দিতে হবে, সেই বিষয়টি বরং চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।

৩. ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। ভাগগুলো হচ্ছে এ, বি এবং সি। প্রথম ভাগের রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ভাগের। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ‘বি’ ভাগের ডেঙ্গু রোগীদের শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হতে পারে, জন্ডিস দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় জ্বর ভালো হয়ে যায় কিন্তু রক্তচাপ কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হতে হবে। ‘সি’ ঘরানার ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

৪. ডেঙ্গু রোগীর প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। ২-৫ দিনে সাধারণত জ্বর ছেড়ে যায়, আর জ্বর ছেড়ে গেলেই শুরু হয় বিপজ্জনক ধাপ। আগে কখনো ডেঙ্গু হয়ে থাকলে পরে আবার ডেঙ্গু হলে জটিলতার ঝুঁকি বেশি। শিশু ও বয়স্কদের প্রতি সব সময়ই বাড়তি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। পানিশূন্যতার কারণে তাদের জটিলতা তৈরি হয় দ্রুত। হৃদরোগী, কিডনি বা লিভার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকিও বেশি। কোনো জটিলতা না হলেও ডেঙ্গু রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। আর জটিলতা থাকলে আরও বেশি।

বর্তমান পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩২০ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের, যা আগের বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৫৮ জন, ছিল না কোনো মৃত্যু। জানুয়ারি থেকে জুনের হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯ এবং একজনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৯৭৮ এবং ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩২০ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।
খেতে হবে ফল
বিভিন্ন প্রকার ফল ডেঙ্গু রোগীর জন্য উপকারী। প্রটুর ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস ও খনিজ থাকে এতে। কলা, আপেল, পেঁপে, বেদানা, পেয়ারা, কমলালেবু ইত্যাদি মৌসুমি ফল খাওয়ানো যেতে পারে রোগীকে। বেদানাতে থাকে আয়রন, যা এ সময়ে খুবই উপকারী। কিছু ক্ষেত্রে কিউই খাওয়ারও পরামর্শ দেন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদরা। কিউই সাহায্য করে হিমোগেøাবিন বাড়াতে। ফলে বাড়ে প্লেটলেট।

বদলাতে হবে খাদ্যাভ্যাস
শুধু পানীয় নয়, রোজকার খাদ্যাভ্যাসেও মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। তেলমশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ ডেঙ্গু র পরে লিভার এনজাইম বেড়ে পেটের সমস্যা বাড়তে পারে। জ্বর হলে অনেক সময়েই খাবারে রুচি চলে যায়। সে ক্ষেত্রে চাউমিন বা ইনস্ট্যান্ট নুডলসের মতো মুখরোচক খাবার খেতে চায়। ডেঙ্গু’র সময়ে কিন্তু একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে এই ধরনের খাবার। খেতে হবে বার্লি বা সুজির মতো খাবার। বার্লি, সাবু, সুজিতে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা থাকে বেশি। ফলে শক্তি বাড়ে শরীরে। খাবার তৈরির সময়ে জল মিশিয়ে একটু পাতলা করে রেঁধে খেলে শরীরে জলের চাহিদাও মেটে।

শাক সবজিতে মিলবে উপকারি
খাদ্য তালিকায় রাখুন পালং শাক। এটি আয়রন, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের খুব ভালো উৎস। এটিও শরীরে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে দারুণ সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে বেদানা। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার এবং খনিজে ভরপুর। এটি শরীরের শক্তি যোগায়, ক্লান্তিভাব কমায়। বেদানায় আছে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন। রক্তের প্লেটলেটের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বৃদ্ধির জন্য এটি বিশেষ উপযোগী। এছাড়া রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের জুড়ি নেই। পালংশাক, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, মিষ্টিকুমড়া, ডালিম, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, কচুশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রণ রয়েছে, যা রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করে।

মোটেও না এসব
একেবারেই চলবে না বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড খাওয়া। কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার, চকলেট, কোকো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এমন কি কোমল পানীয়ও খাওয়া চলবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়