জামায়াতে ইসলামী : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন শুনানি ৩১ জুলাই

আগের সংবাদ

ভোটের আমেজে তৃণমূলে ঈদ : শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এলাকায় আ.লীগ নেতারা

পরের সংবাদ

আরাফাহ দিবস ও কুরবানি

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘আরাফাহ’ শব্দের অর্থ পরিচয়। আরাফাতের ময়দান মানে পরিচিতির স্থান। মুসলিম উম্মাহর ভাবাবেগ মিশ্রিত ও কল্পনাতীত গুরুত্ববহ এই পবিত্র ময়দানের নামকরণের পেছনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জড়িয়ে আছে। আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.) মহান আল্লাহর নির্দেশে জান্নাত হতে বিতারণের পর উভয়েই পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হন। হজরত আদম (আ.) বর্তমান শ্রীলঙ্কার সিংহলে আর হজরত হাওয়া (আ.) বর্তমান সৌদি আরবের জেদ্দায় অবতরণ করেন। দীর্ঘ সাড়ে তিনশ বছর অনুতাপ-অনুশোচনার পর তাদের প্রত্যাশিত পুনঃমিলন ঘটে এই বিখ্যাত আরাফাতের ময়দানে, তাই সভ্যতার ইতিহাস বেয়ে আজ এটি ‘পরিচিতির স্থান’ হিসেবে বিশ্বমানবের কাছে অতি উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। আদম-হাওয়া (আ.)-এর ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের এই ময়দান আজো বিশ্ব মুসলিমের নতুন করে পরিচয় ও ইমানি শক্ত বন্ধনের আবহ ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। তাই আরাফাতের ময়দানের গুরুত্ব মুসলিম জাতিসত্তার ইতিহাসে কখনোই বিন্দুমাত্র হ্রাস পাবে না। উল্লেখ্য, মানবতার মুক্তিদূত বিশ্বনবী (সা.)-এর এক বাণীর মাধ্যমেই আরাফাতের ময়দান তার স্বকীয় মর্যাদা ও অনন্য অবস্থানকে উচ্চকিত করেছে। এ পবিত্র স্থানের মহান গুরুত্ব সম্বন্ধে তিনি ইরশাদ করেন, ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ’। হজের অবধারিত কর্মসমূহের মাঝে ‘উকুফে আরাফাহ’ তথা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, খুতবা শ্রবণ ও তথাকার অনুষ্ঠানাদি সর্বাপেক্ষা অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।
মানব সভ্যতার ইতিহাসের প্রথম ঘর পবিত্র মক্কার কাবা শরিফ থেকে প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যেই আরাফাতের ময়দান অবস্থিত। মক্কা থেকে দক্ষিণ-পূর্বে তায়েফের পথে ‘জাবালে রহমত’-এর পাদদেশে তিন দিক পাহাড়ঘেরা, দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার আর ৪ কিলোমিটার প্রস্থবিশিষ্ট এই সমতল মরু-ময়দান যার পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত ‘নহরে জোবায়দা’, একপাশে আবেদি উপত্যকায় ‘উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়’ অন্যদিকে ‘মসজিদে ইব্রাহিম’, আরো আছে ‘উরানা’ নিম্নভূমি, উত্তরে ‘সাদ পাহাড়’ আর সেখান থেকে দক্ষিণে ‘মসজিদে নামিরা’-এর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দান বিস্তৃত। মহানবী (সা.)-এর সময়ে অনুষ্ঠিত বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণকালে আরাফাতের ময়দানে সোয়া লাখ সাহাবায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন; সবাই কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যতিরেকেই রাসুল (সা.)-এর মুখঃনিসৃত অমূল্য বক্তব্য সমভাবে শ্রবণ করেছেন এ এক অত্যাশ্চার্য ঘটনা। মহানবী (সা.)-এর নবুয়তি মুজেযা আর আরাফাতের কেরামতি বর্তমান অবধি কালের সাক্ষী হিসেবে চিরভাস্বর হয়ে আছে।
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ‘আরাফাহ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। এ দিবসটির ধর্মীয় গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত রয়েছে। আরাফাহ দিবসে মহান আল্লাহ বান্দাহদের অধিকতর নিকটবর্তী হন এবং ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করতে থাকেন, এই বান্দারা আমার কাছে কী চায়? আর সে কারণেই আরাফা দিবসে এত অধিক সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যা অন্য কোনো দিবসে হয় না। আরাফা দিবসে আল্লাহপাক হাজিদের নিষ্পাপ ঘোষণা করেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহপাক আরাফাহ দিবসে ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, তোমরা লক্ষ করো, আমার বান্দারা কী প্রকারে বহু দূরদূরান্ত থেকে এসে আজ আরাফাতের ময়দানে ধুলাবালির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তোমরা সাক্ষী থাকো, যারা আমার ঘর (কাবা শরিফ) জিয়ারত করতে এসে এত কষ্ট স্বীকার করছে, নিশ্চয়ই আমি তাদের সব গুনাহ মাফ করে দিলাম। অতপর ফেরেশতারা বলবেন, অমুক ব্যক্তি যে বিলম্বে এসেছে? তখন আল্লাহপাক বলবেন, আমি তাকেও মাফ করে দিলাম।’ আরাফাহ দিবসে রোজা পালন করার মধ্যে অনেক পুণ্য নিহিত রয়েছে। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে বলেন, ‘আরাফাতের দিনের রোজাব্রত পালন সম্বন্ধে আমি মনে করি, আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের এর বরকতে তাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।’ বস্তুত আরাফাহ দিবসের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ইবাদত-বন্দেগি, হজ-পালন, খুতবা শ্রবণ আর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে একজন হাজি নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তোলেন।
আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য পরম সৌভাগ্য হলো, ঐতিহাসিক আরাফাতের সঙ্গে বাংলাদেশেরও কিছু স্মৃতিচিহ্ন জড়িয়ে আছে। আরাফাত ময়দানের সবুজ-শ্যামলিমার দিকে তাকালেই বাংলাদেশের কথা মনে পড়বে; কেননা, ময়দানের বিস্তৃত স্থানজুড়ে থাকা নিমগাছগুলো বাংলাদেশ প্রদত্ত। ১৯৭৯ সালে প্রায় বিশ হাজার নিম গাছের চারা আরাফাতের ময়দানের সৌন্দর্যবর্ধন ও ছায়াদানের লক্ষ্যে রোপণ করা হয়; আজো সেগুলোর পরিচর্যায় সৌদি প্রবাসী বাঙালিরাই রয়েছেন। বাংলাদেশি নিম গাছের সুশীতল ছায়াতলে বিশ্বের অজস্র হাজি আজো প্রশান্তি খুঁজে নিচ্ছেন।
মানব-সভ্যতার ইতিহাসে কুরবানির তাৎপর্য অপরিসীম। বিশেষ করে ইসলামের ইতিহাসে কুরবানির ঘটনা ও তাৎপর্য মুসলমানিত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এখানে কুরবানি মানে শুধু পবিত্র ও বরকতময় ঈদুল আজহা ও তার পরের দুদিনে হালাল পশু জবেহকরণের মাধ্যমে এক ধরনের বিত্তকেন্দ্রিক মহড়া বা মাংস-ভক্ষণের প্রতিযোগিতা নয়; বরং দুনিয়ার ইতিহাসে আত্মত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের সর্বোত্তম নমুনা পেশ করাই হচ্ছে কুরবানির আসল মাহাত্ম্য। বর্তমানে কোনো একটি পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে হয়তো এটির সূত্রপাত হয়ে থাকে কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও কুরবানির ঐতিহাসিকতা সম্পূর্ণরূপে মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগের উপাখ্যানের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে। দুনিয়ার ইতিহাসে ‘মুসলিম’ নামকরণকারী বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ও মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তদীয় পুত্র এবং মানবেতিহাসের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠতম পিতৃভক্ত ও পিতার আদেশের সামনে আনুগত্যের মস্তক শতভাগ অবনত করে দেয়ার সাহসী দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-এর মধ্যকার অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক ও মর্মস্পর্শী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই কুরবানির প্রচলন সৃষ্টি হয়। এটি কোনো গতানুগতিক বা সাধারণ ঘটনা ছিল না; এটি ছিল আনুগত্য আর ত্যাগের মিশ্রণে ঐশী নির্দেশনা সম্বলিত এক অবিশ্বাস্য ও শিহরণ জাগানিয়া ঘটনা। পুরো বিষয়টিই মহান আল্লাহর সামনে আত্মোৎসর্গের অনবদ্য নজির স্থাপনের এক অনন্য দলিল।
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট্ট সুরা আল কাউসারে মহান আল্লাহ বলেন- ‘ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ানহার’ অর্থাৎ তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ আদায় করো এবং কুরবানি করো। এ কুরবানির মানে গরু কুরবানি নয়; এটি হচ্ছে ত্যাগ স্বীকার, আত্মোৎসর্গের নজির স্থাপন করা। সেটি কেমন হবে তার ব্যাখ্যায় মহান প্রভু বলেছেন- ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার বেঁচে থাকা এবং আমার মরে যাওয়া- সব কিছুই মহান প্রতিপালকের তরে উৎসর্গকৃত। এখানেও কুরবানির মানে হলো সেকরিফাইস তথা আত্মোৎসর্গ বা পরম রবের তরে আত্মনিবেদন। আর এই আত্মনিবেদনের ক্ষেত্রে নিজের সব আমিত্ব বিসর্জন দিতে হবে এবং খোদার রাহে নিজের সর্বাপেক্ষা প্রিয় জিনিসকেই উৎসর্গ করতে হবে। কুরআনে কারিমের চতুর্থ পারার প্রথম আয়াতে আমরা সে বিষয়ের নির্দেশনাই দেখতে পাই- ‘লানতানালুল র্বিরা হাত্তা তুনফিকু মিম্মা তুহিব্বুন’ অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রাণাধিক প্রিয় জিনিস মহান আল্লাহর তরে নিবেদন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেটি পুণ্যময়তার বিষয় হবে না। অর্থাৎ খোদার রাহে সর্বোত্তম, সর্বাপেক্ষা প্রিয় এবং নিজের সবচাইতে পছন্দনীয় ও ভালোবাসার সম্পদটিকেই উৎসর্গ করতে হবে। আজকের মুসলিম সমাজে বিদ্যমান কুরবানির এ ধারা প্রচলনের ইতিহাসের সঙ্গেও সেই সর্বোত্তম ও সর্বাপেক্ষা প্রিয়পাত্রকে উৎসর্গকরণের বিষয়টিই বিমূর্ত হয়ে আছে। একজন পিতার কাছে তার সন্তানের চাইতে প্রিয়পাত্র আর কি হতে পারে? তাও যদি আবার জীবনের সন্ধ্যাবেলায় একনিষ্ঠ প্রার্থনার ফলে সেই প্রিয়তম সন্তানকে লাভ করা হয়!
ইতিহাসের বিস্ময়পুরুষ ও পয়গম্বর হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার জীবনের ছিয়াশি বছর বয়সে চক্ষু শীতলকারী সন্তান হিসেবে হজরত ইসমাইলকে (আ.) পেয়েছিলেন। তাও আবার মহান প্রভুর ইচ্ছায় প্রিয়তমা স্ত্রী হাজেরাকে (আ.) নির্জন মরুভূমি আরবের মক্কায় নির্বাসিত অবস্থায় রেখে আসতে হয়েছিল; সেখানেই জন্ম নিয়েছিলেন হজরত ইসমাইল (আ.)। বার্ধক্যে উপনীত নবী ইব্রাহিম (আ.) নবজাতক সন্তানকে দেখে সবেমাত্র সুখ-সম্ভোগের একটি অবস্থায় পৌঁছেছিলেন আর এমতাবস্থায়ই পরবর্তী অসহনীয় ও বিভীষিকাময় নির্দেশটি প্রাপ্ত হন। শিশু ইসমাইল একটু একটু হাঁটাহাঁটি বা কিঞ্চিত দৌড়াদৌড়ির বয়সে উপনীত হলেন। এ সময়ই মহান আল্লাহ তার মনোনীত নবী ইব্রাহিমের (আ.) ধৈর্য এবং ত্যাগের সর্বোচ্চ পরীক্ষাটি নিতে চাইলেন। অবশ্য হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আগে থেকেই নানান পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সর্বক্ষেত্রেই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে আসছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন- ওয়া ইযিবতালা ইব্রাহিমা রাব্বুহু বিকালিমাতিন ফাআতাম্মাহুন্না’ অর্থাৎ মহান প্রতিপালক হজরত ইব্রাহিমের (আ.) ক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষা নিয়েছেন এবং তিনি (ইব্রাহিম) সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। নবী ইব্রাহিমের (আ.) জীবনে সবচাইতে বড় পরীক্ষাটি এবারে সংগঠিত হলো- ‘ইয়া বুনাইয়া ইন্নি আরাফিল মানামি আন্নি আজবাহুকা’ অর্থাৎ ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে বললেন- হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি যেন তোমায় জবাই করছি। ‘ফানযুর মাযা তারা’ এমতাবস্থায় তোমার এ বিষয়ে মতামত কী? ইসমাইল বয়সে ছোট্ট হলেও পয়গম্বরের ছেলে এবং তিনি নিজেও পয়গম্বর। শিশু ইসমাইল ভাবলেন, আমার বাবাতো নবী আর নবীর কোনো স্বপ্ন সেটিতো আসলে স্বপ্ন নয়, তা হচ্ছে নিঃসন্দেহে অহির সমতুল্য। পয়গম্বরের প্রতি কোনো স্বপ্ন সেটিও মহান আল্লাহর আদেশ হিসেবেই ধর্তব্য। তাই শিশু ইসমাইল সেটি অনুধাবন করতে পেরে যে জবাব তিনি তার বাবা ইব্রাহিমকে (আ.) তখন দিয়েছিলেন সেটিও বিস্ময়কর। তিনি বলেন- ইয়া আবাতিফআল মা তু’মার সাতাজিদুনি ইনশাআল্লাহু মিনাস্সাবেরিন’ অর্থাৎ হে আমার পিতা! আপনার প্রতি যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তা পালন করুন; নিঃসন্দেহে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে পাবেন। এখানে লক্ষণীয় যে, ইসমাইল স্বপ্নের কথা বলেননি, তিনি বলেছেন, যা আদেশ করা হয়েছে অর্থাৎ তিনি জানতেন সেই আদেশটি মহান প্রতিপালকের; যার সামনে ইসমাইল জীবন দিতে কুণ্ঠিত নন। মানবেতিহাসে এমন ধৈর্যশীল, সাহসী আর আনুগত্যসম্পন্ন সন্তান দ্বিতীয়টি নেই। এরপর পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা বহন করে মহান প্রভুর নির্দেশ বাস্তবায়নে যখন উদ্যত হলেন পবিত্র কুরআনে কারিম সেই ঐতিহাসিকতাকে এভাবে চিত্রায়ন করছে- ‘ফালাম্মা আসলামা ওয়াতাল্লাহু লিলজাবিন’ অর্থাৎ তাঁরা উভয়েই যখন আত্মসমর্পণ করল এবং পিতা তার প্রিয় পুত্রকে জবাই করতে উদ্যত হলো তখনই ঐশী আওয়াজ ইব্রাহিমের (আ.) কর্ণগোচর হয়- ওয়ানাদাহু আইয়া ইব্রাহিম কাদ সাদ্দাকতার রুইয়া ইন্না কাযালিকা নাজযিল মুহসিনিন’ অর্থাৎ হে ইব্রাহিম! তুমি অবশ্যই তোমার স্বপ্নে প্রাপ্ত আদেশকে বাস্তবায়ন করেছ আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। কীভাবে এলো সেই প্রতিদান? পিতা রাজি হলেন প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে কুরবানি করতে আর পুত্র রাজি হলেন পিতার ওপর প্রদত্ত আদেশকে কার্যে রূপায়িত করতে।
আত্মোৎসর্গের এমন নজিরবিহীন ঘটনা মানবেতিহাসে বিরল। এমতাবস্থায় সেখানে জবাই কার্য তথা কুরবানি ঠিকই হলো, সেটি একটি পশু- যেটিকে ইসমাইলের স্থলে কুরবানির জন্যে নির্বাচিত করা হয়েছিল। সন্তানের স্থলে পশু কুরবানি করা হলেও বাস্তবিক অর্থে কিন্তু তা মহান আল্লাহর আনুগত্য বিষয়ক তাৎপর্যের ক্ষেত্রে কোনোরূপ গুরুত্ব হারায়নি; বরং গোটা মুসলিম মিল্লাতের ওপর এটিকে আত্মোৎসর্গের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে কুরবানির এই বিধানকেই মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের এক পবিত্র ইবাদত হিসেবে প্রচলন করে দেয়া হয়েছে- যার মাধ্যমে দুনিয়ার মুসলমানেরা তাদের প্রবল ঐকতানের এক অনবদ্য নজির স্থাপনেরও সুযোগপ্রাপ্ত হয়।

ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন : চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক; ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়