ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

মধ্যনগরের ঐতিহ্যবাহী নাওমহাল : দেড় মাস দেরিতে চালু নৌকার হাট, লোকসানে কারিগররা

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় মধ্যনগর উপজেলার সদরের শতবর্ষী নৌকার হাট। চালু থাকে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত। ঐতিহ্যবাহী এ নৌকার হাট স্থানীয়দের মধ্যে ‘নাওমহাল’ বলে পরিচিত। কিন্তু এবার চালু হয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় পর। বিলম্বে চালু হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন নাওমহালের নিয়মিত বিক্রেতারা। কমবেশি এর প্রভাব পড়েছে উপজেলার অর্থনীতিতে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর নাওমহালে মধ্যনগর উপজেলা ছাড়াও পাশের উপজেলা তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা, বারহাট্টা উপজেলার ঠাকরোকোনা, দশধারসহ দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন নৌকা কিনতে। গত শনিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন মধ্যনগর বাজারের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে কাচারী ঘাটকে ঘিরে ঘোরাডোবা হাওড়ে ভাসমান এই নাওমহাল বসে। ওই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রেতারা নৌকা নিয়ে আসেন।
জানা যায়, উপজেলার চামরদানী, মাকরদি ও তাহিরপুর উপজেলার উত্তিয়ারগাঁও গ্রামের বিভিন্ন কারিগর এসব নৌকা বিক্রির জন্য নাওমহালে নিয়ে আসেন। সবচেয়ে বেশি নৌকা সরবরাহ করেন চামরদানী গ্রামের কারিগররা। কুশি নৌকা আসে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা গ্রাম থেকে। তাহিরপুরের উত্তিয়ারগাঁও থেকে আসে বারকী নৌকা। এছাড়া আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নতুন ও পুরনো নৌকাও বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। প্রতি শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নাওমহাল চালু থাকে। প্রতি হাটবারে ২০০ থেকে ৩০০ ছোট বড় নৌকা কেনাবেচা হয়। প্রতিটি নৌকা প্রকারভেদে ৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে এই হাটে বড় নৌকার দাম ১ লাখ থেকে দেড়লাখ টাকাও হয়ে থাকে। বছরভেদে নাওমহালে প্রায় ৫-৭ কোটি টাকার নৌকা বেচাকেনা হয় বলে জানালেন মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জীব তালুকদার টিটু।
কথা হয় চামরদানী গ্রামের কারিগর কাঞ্চন সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, অন্যান্য বছরের এ সময় পর্যন্ত তার ২০-৩০টি ছোট বড় নৌকা বিক্রি হতো। এবার মহাল দেরিতে চালু হওয়ায় মৌসুমের গত দেড় মাসে কোনো নৌকা বিক্রি হয়নি। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
গত শনিবার ৪টি নৌকা নাওমহালে তুলেছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত দুটি বিক্রি করেছেন। একটি ১৭ হাজার, অন্যটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। উপযুক্ত দাম পাননি। লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে। এর কারণ গত দেড় মাস ধরে বেচাকেনা না থাকলেও কারিগর হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করা মিস্ত্রী ও জোগালিদের কমবেশি মজুরি দিয়ে চালাতে হয়েছে। এতে বিশাল আর্থিক ঘাটতি হয়েছে। এছাড়া শনিবার ক্রেতার সংখ্যা ছিল নগণ্য। পাওনাদারদের ঋণের টাকার চাপ থাকায় কম দামেই নৌকা বিক্রি করতে হয়েছে।
নাওমহালের ইজারাদার রিপন সরকার জানান, অন্যান্য বছর এ সময়ে জমজমাট থাকলেও এ বছর সময়মতো বর্ষার পানি না আসায় মৌসুমের পাঁচ সপ্তাহ পরে গত শনিবার থেকে নাওমহালে নৌকা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। সারাদিনে শতাধিক নৌকা বিক্রি হয়েছে। নাওমহালে যথেষ্ট নৌকা উঠলেও ক্রেতা ছিল কম। সবকিছু মিলিয়ে এবার তিনিও আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মধ্যনগর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, এ বছর প্রাকৃতিক কারণে দেরিতে বর্ষার পানি এসেছে। এজন্য হাট চালু করতে দেরি হয়েছে। এতে হাটের ওপর নির্ভরশীল অনেক কারিগর ও তাদের লোকজন অনেকটা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে এখন পর্যাপ্ত পানি হয়েছে। আশা করি এখন তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। উপজেলায় যেসব নৌকা তৈরির কারিগর আছেন, তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে তাদের জন্য প্রণোদনা বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়