ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বিষয়ে প্রস্তুতি সভা : শান্তিরক্ষায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে কিছু দেশে কাজ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয় বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে এসব উদ্বেগ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
আগামী ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে ঢাকায় প্রথম প্রস্তুতি সভা হচ্ছে। গতকাল রবিবার ঢাকার একটি হোটেলে দুই দিনের প্রস্তুতি সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে শান্তি রক্ষার কিছু কার্যক্রমে নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। তবে তিনি নিরাপত্তার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্বেগ রয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি।
বাংলাদেশ, কানাডা ও উরুগুয়ে এই প্রস্তুতিমূলক সভার যৌথ আয়োজক। প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে যোগ দিয়েছেন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়া এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্সবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড। এ বছরের ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘানার আক্রায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় নারী’। সভায় শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারী শান্তি রক্ষা বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতি দেয়া, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনা প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তুতি সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ভিত্তি তৈরি করবে এই প্রস্তুতিমূলক সভা। কিছু শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সদস্য দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, ঢাকায় প্রস্তুতি সভার আলোচনা থেকে উঠে আসা সুপারিশ গঠনমূলকভাবে শান্তি রক্ষার ভবিষ্যৎ রচনা করবে ও সদস্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জেন্ডারবান্ধব শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের দিকে চালিত করবে।
জাতিসংঘের নীতি ও লক্ষ্য অনুসারে বাংলাদেশ শান্তি রক্ষা, নিরাপত্তা ও জেন্ডার সমতায় কাজ করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর সংখ্যা আরো বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শান্তি রক্ষা বাহিনীতে বৈষম্য ও যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনার কোনো জায়গা নেই বলে বাংলাদেশ মনে করে।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়া তার বক্তব্যে শান্তি

রক্ষা কার্যক্রমে নারীদের কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জোর দেন। জেন্ডারবান্ধব সুবিধাদি বাড়ানো, নারীদের কণ্ঠ সোচ্চার ও নেতৃত্ব স্থানে নারীদের আনতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বিভাগের প্রধান জ্যঁ পিয়ের বলেন, এ সত্ত্বেও জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য রয়ে গেছে। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ পদের ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হন। এসব সমস্যা সমাধানে তিনি দেশগুলোকে আলোচনা করার ওপর জোর দেন। বৈঠকে টেবিলে উপস্থাপিত জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে থাকা ৯৬০ নারী যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়া শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদানের কথা স্বীকার করে ধন্যবাদ জানান।
জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্সবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড বলেন, শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে জেন্ডার সমতা অর্জনে এ পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভাঙতে হবে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সফলতার জন্য টেকসই শান্তির লক্ষ্যে সব দিক দিয়ে নারীর অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোকে অনুধাবন করে ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে হবে।
সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে নারী পুলিশ। তারা কার্যক্রমগুলোতে জেন্ডার সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসেবে তারা নিজেদের উপস্থাপন করছেন। নারী শান্তি রক্ষা কর্মীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এই প্রস্তুতি সভা ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল এ এস এম রিদওয়ানুর রহমান সভায় জানান, বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার নারী শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। এখন সেখানে মোতায়েন রয়েছেন পাঁচশর বেশি নারী। সভায় উরুগুয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মেজর কারিনা ডে লস সান্তোস বলেন, উন্নতি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ইতিবাচক দিক চর্চার জন্য শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর আহ্বান জানান কানাডার গেøাবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক (শান্তি ও স্থিতিশীলতা কর্মসূচি) উলরিক শ্যানন।
উদ্বোধনী পর্বের পর প্রস্তুতি সভায় দিনব্যাপী পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন পরিচালিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যঁ পিয়েরের সাক্ষাৎ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (শান্তিরক্ষীপ্রধান) জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়া। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষী মিশনে নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর জাতিসংঘের যে লক্ষ্য তা পূরণে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে। শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের শীর্ষস্থানে থাকার বিষয়ে প্রশংসা করেন জ্যঁ পিয়েরে লাক্রোয়া। তিনি বলেন, নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বাড়াতে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করার আশ্বাসকে স্বাগত জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়